Thu. Jul 10th, 2025
সরকারকে চারদিক থেকে ঘিরে ঢাকা দখলের অপতৎপরতা (?)সরকারকে চারদিক থেকে ঘিরে ঢাকা দখলের অপতৎপরতা (?)

ভাষ্যকার : সরকারকে চারদিক থেকে ঘিরে ঢাকা দখলের অপতৎপরতা? নাকি বাইরের শক্তির দূরদর্শি পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ভূমিকা পালনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ ঘটানো? প্রশ্ন দুটো সচেতন সাধারণ মানুষের কথোপকথোন থেকে জানা। তাদের মধ্যে অবশ্য বেশি মানুষের জানা ও বোঝায় আগ্রহ বেশি অন্য একটি প্রশ্ন। তাহলো এমন কোন পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে চারদিক থেকে চাপে ফেলছে সরকারকে? ভাষ্যকারকে অবশ্য উত্তর দিতে হবে না বা লিখতে হবে না।

কারণ, চোখ-কান খোলা রেখে জনসাধারণের কথোপকথোন মনোযোগ দিয়ে শোনার চেষ্টা করলে ভাষ্যকারের মতোই শুনতে পারনে বা জানতে পারবেন। আর শোনা জানা কথাগুলো যৌক্তিক বিবেচনা করে অন্যান্যদের অবগত করার ইচ্ছা থাকলে। তাহলে শোনা কথাগুলো মনের কোনায় সাজিয়ে রেখে ঘরে বা অফিসে ফিরে লিখলেই হল্াে। তারপর গণপ্রহরীসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে পৌঁছে দিলে বা পাঠালে তারা যথাযথ বিবেচনা করলেই প্রকাশ ও প্রচারের ব্যবস্থা হয়ে যাবে। তাতেই মানুষ বুঝে নিবেন, সরকারকে চারদিক থেকে ঘিরে ঢাকা দখলের অপতৎপরতা (?) কেন।

প্রসঙ্গত গণপ্রহরীর প্রধান সম্পাদক-প্রবীন সাংবাদিক বীরমুক্তিযোদ্ধা এসকে মজিদ মুকুল বিভিন্ন সময় ডেস্কে আলোচনা বা কথাবার্তা বলতে প্রায়ই যে কথা বলে থাকেন, তা এ পর্যায়ে উল্লেখ করা বাঞ্ছনীয়। কারণ, তাঁর মতে বাংলাদেশটার মাটি শহীদের রক্তে উর্বর। দেশটি মুক্তিযুদ্ধের ফসল। এই ফসল খেয়ে বীর জনগণের যারা সন্তান জন্ম দেন এবং যারা জন্মগ্রহণ করেন তাঁরা রক্তের দিক থেকে বীর। অর্থাৎ দেশের জনগণকে বীর জনগণ হিসেবে সম্মান দিয়ে জীবন পথে চলতে হবে।

আর এই চলার পথে জনসাধারণের কথা শোনার আগ্রহ মনোযোগ যার থাকবে, সে বা তিনি যদি জনগণের কথোপকথোনের কথাবার্তা শোনেন ও বোঝেন; তাহলে জ্ঞানপাপী পণ্ডিতদের মতো পণ্ডিত না হলেও পান্ডিত্য অর্জনের কাছাকাছি পৌছার জ্ঞান অর্জন করা সম্ভব। তাঁদের জীবন ব্যবস্থা ও সমাজ ব্যবস্থার আলোকে রাষ্ট্র ব্যবস্থা নিয়ে তাঁদের চিন্তা-চেতনা বা ভাবনাকে অনুধাবন করতে পারলে, জ্ঞানের পরিধি বাড়বে বহুগুনে। সেই শিক্ষা থেকেই জনসাধারণের মতামত জানার চেষ্টা। সরকারকে চারদিক থেকে ঘিরে ঢাকা দখলের অপতৎপরতা (?) শীর্ষক জনমতে যা পেয়েছি সেসব ভিত্তিতেই ভাষ্যকারের আজকের ভাষ্য।

আজকের ভাষ্যতে ভাসা ভাসা তথ্যবহুল জনমতের আলোকে ঢাকা দখলের ইঙ্গিত ছিল বটে। কিন্তু তার আগেই পাঠকসহ আমরা সকলেই কমবেশি অবগত হয়েছি যে, সরকারকে চারদিক থেকে ঘিরে ঢাকা দখলের অপতৎপরতা চালানোর তথ্য জনসাধারণের কথোপ-কথোনের সূত্র ধরে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগে ফাঁস হয়ে যায়। একই সাথে ফাঁস হয় অপতৎপরতার পিছনে অপকৌশল কি ছিল। সেটিও ফাঁস করেছে অহিংস গণঅভ্যূত্থান বাংলাদেশ নামের ব্যানারে আয়োজক সংগঠনের গ্রেফতারকৃত সভাপতি মোস্তাফা আমীনসহ অন্যান্য গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে আইসিটি বিশেষজ্ঞ ইশতিয়াক আহমেদ ও আরেক নেতা জিয়াউর রহামান গং। তাঁদের নাম-পরিচয় ও দেশ বিষয়েও তদন্ত চলমান।

এদিকে, গ্রেফতারকৃতদের তথ্যেই বেরিয়ে এসেছে এক লাখ টাকা করে ঋন দেওয়ার প্রলোভন দিয়ে সারা দেশ থেকে পিকআপ, মাইক্রোবাস ও বাসযোগ যুব-জনগণকে ঢাকার শাহবাগে জনসমাবেশ করার মধ্য দিয়ে ঢাকা দখল করে দেশকে অচল করার অপতৎপরতা চালানো হয়েছিল। আর এই অপতৎপরতা নস্যাৎ করার মধ্য দিয়ে পুলিশের ভাবমূর্তি ও উজ্জ্বল হওয়ার দ্বার উন্মুক্ত হয়েছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের উপকমিশনার মাসুদ আহমেদের সাথে পরামরর্শক্রমে বা নির্দেশে কলাবাগান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোক্তারুজুমানের নেতৃতে সাহসী ও দক্ষ পুলিশ সদস্যদের পরিচালিত অভিযানে মোট ১৯ জনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হন অভিযানকারীরা। পাশাপাশি একটি পুলিশ দলের সদস্যরা শাহবাগে সমবেত হওয়া জনগণকে বুঝতে সক্ষম হন অপতৎপরতার কৌশল হিসেবে ঋণ দেওয়ার নামে তাঁদেরকে নিয়ে এসেেছ এই ঘৃণ্য গভীলর ষড়যন্ত্রকারীরা। উপস্থিত জনগণ ঋণ দেওয়ার নামে যে জনগণকে ফাঁদে ফেলা হয়েছে এবং এটা সম্পূর্ণভাবে প্রতারণা তা বুঝে, জনগণ শাহবাগ ত্যাগ করেন। ব্যর্থ হয় ষড়যন্ত্র।

মূলত: জনআকাঙ্খা পূরণে সরকার আশানুরূপ সফল না হলেও জনগণের আস্থা থাকলে এবং পুলিশ যদি জনগণের বন্ধু হতে পারে। তাহলে ‘সরকারকে চারদিক থেকে ঘিরে ঢাকা দখলের অপতৎপরতা’-ব্যর্থ করার মতোই যত ষড়যন্ত্রই হোক, ব্যর্থ হবেই। আমরা জানি অভ্যূত্থান হলে পালটা অভ্যূত্থান বা অভ্যূত্থানের চেষ্টা হতেই পারে। সে কারণে, পাল্টা অভ্যূত্থানের সুযোগ দেয়া যাবে না।

উল্লেখ্য, সরকার সচেষ্ট থাকলেও ছাত্র-জনতার গণঅভূত্থ্যানের সফলতা অর্জনে যে জাতীয় ঐক্য ছিল, সে ঐক্যর জন্য সংবিধান প্রয়োজন ছিল না। অন্তর্বতী সরকারগঠনেও সংবিধান ছিল না’। রাষ্ট্র পরিচালনায় সংবিধান অপরিহার্য বটে। তবে আপাতত জনআকাঙ্খার মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্যের শোষণমুক্ত সমাজ, যা বৈষম্যহীন সামাজ গঠনের আন্দোলনের শহীদদের আত্মত্যাগকেও স্বার্থক করবেÑ এমন লক্ষ্য নিশ্চিত করে গণতান্ত্রিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত করা এবং পতিত স্বৈরাচারের ষড়যন্ত্রের পথে কুঠারাঘাত করার মত সংষ্কার কাজ শেষ করতে হবে। এ ক্ষমতা দিয়েছেন রাষ্ট্রের মালিক জনগণ।

যদিও পতিত স্বৈরাচারের পালিয়ে যাওয়া ভোটারবিহীন নির্বাচনের স্বঘোষিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র গ্রহণ এবং অন্তর্বতী সরকারের শপথ গ্রহণে জেঁকে বসে সংবিধান এবং পতিত স্বৈরাচারের ‘সংসদে নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি। আর সংবিধান ভিত্তিতেই ক্ষমতা ফিরে পেতে ভারতের মদদে স্বৈরাচারের অপতৎপরতা চলছে। এদিকে ছাত্ররা নানা দাবি নিয়ে রাজপথে নামছে। এমনকি ছাত্ররা ছাত্রদের উপর অক্রিমণ করে আহত করার মত নিন্দরীয় উদ্বেগজনক কার্যকলাপ করছে। নতুন উপদেষ্টা হতেও আগ্রহীদের দৌড়ঝাঁপ চলছে। এর মধ্য দিয়ে একাধিক উপদেষ্টা নিয়োগ জনঅসন্তোষ বিদ্যমান। প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে নিয়োগ-পদোন্নতি নিয়েও নানা আলোচনা-পর্যালোচনা চলছে। অপরদিকে, সাংগঠনিক কাঠামোর প্রয়োজন স্বীকার্য হলেও এ মুহুর্তেই বৈষম্য বিরোধী ছাত্রআন্দোলনের সাংগঠনিক কাঠামো গড়ে তোলা সহ নাগরিক অধিকার কমিটির সাংগঠনিক তৎপরতা নিয়েও জনমনে বিভ্রান্ত ছড়ানো হচ্ছে। পক্ষান্তরে নতুন শক্তি উত্থাপনে সুযোগ দিতে সরকার সংষ্কার কাজে বিলম্ব করছেÑ এমনটাও প্রচার করছে ষড়যন্ত্রকারীরা। আবার নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত হওয়া রাজনৈতিক দলগুলো সরকারের সংষ্কা কাজে এবং অন্তর্বতী সরকারের সাথে থাকলেও নির্বাচনের দাবি প্রধান্য পাওয়ায় ষড়যন্ত্রকারীরা জাতীয় ঐক্যের দুর্বলতা বিবেচনা করে ষড়যন্ত্র করছে।

সর্বপরি দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ আশানুরূপ সফল হতে পারছেনা সরকার। যা এ মূহুর্তে অপরিহার্য। এ জন্য প্রয়োজন গণঅভ্যূত্থানের মতো সর্বক্ষেত্রে জাতীয় ঐক্যের বহি:প্রকাশ। এমনকি সাধারণ জনগণের মধ্যে সচেতন অংশের অনেকের মতে ভারতের হাত থেকে তার অনুগত রাষ্ট্র বাংলাদেশ তার অনুগত না থাকায় এবং ভারতের সেভেন সিষ্টার্সখ্যাত অঞ্চল নিয়ন্ত্রণের সহজতর পদক্ষেপ আবারো কঠিন হয়ে পড়ছে। উগ্রহিন্দুত্ববাদী হিন্দু-মৗলবাদী বিজিপি নেতৃত্বাধীন সরকার সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাবাধাতেও দ্বিধা করবেন না, সে আলামতও পরিলক্ষিত হচ্ছে। সেজন্য ষড়যন্ত্রকারীরা নিজেরাই দাঙ্গা সৃষ্টি মাধ্যমে ভারতীয় বাহিনী অনুপ্রবেশের পরিস্থিতি তৈরী করতেও অপতৎপরতা অব্যাহত রেখেছে।

উপরন্ত, পতিত স্বৈরাচারের লুটপাটের অর্থ কেন্দ্র থেকে জেলাÑউপজেলা পর্যায়ের নেতাদের হাতেও রয়েছে। একই কায়দায় কেন্দ্র থেকে মাঠ পর্যায় পর্যন্ত লুটপাট হয়েছে। ফলে তারা অর্থের বিনিময়েও ক্ষমতা পেতে ষড়যন্ত্র করবে-অপতৎপরতা চালাবে, এর জন্য সময় নির্ধারিত নেই। প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে সকল পর্যায়ে তৎপরতা অব্যাহত রাখতে হবে এবং আমাদের সকলকেও স্ব স্ব অবস্থান থেকে সচেতন থাকতে হবে এবং যে কোনো ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকতে হবে। একই ভাবে রাজনৈতিক দলগুলোকে জাতীয় সরকার গঠনে আরও আন্তরিক হতে হবে, যাতে এক বা একাধিক মেয়াদকালেও ঐক্য বিনষ্ট না হয়। এবং সরকারকে চারদিক থেকে ঘিরে ঢাকা দখলের অপতৎপরতা এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার অপচেষ্টা প্রতিহত করতে হবে। এজন্য আন্দোলনকারী সকর শক্তি এবং সরকারকে জনদুর্ভোগ লাঘবের পাশাপাশি জনসচেতনতা বৃদ্ধিতেও ভূমিকা রাখতে হবে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *