Sun. Jul 6th, 2025
সশস্ত্র বাহিনী দিবস স্মরণ করিয়ে দেয় জিয়ার ঘোষণাসশস্ত্র বাহিনী দিবস স্মরণ করিয়ে দেয় জিয়ার ঘোষণা

সশস্ত্র বাহিনী দিবস স্মরণ করিয়ে দেয় জিয়ার ঘোষণা। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনীর অন্তর্ভুক্ত বেঙ্গল রেজিমেন্টর মেজর জিয়া (শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীর উত্তম) পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষনার মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা ঘোষনা করেন। ২৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষেও পুন:স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। জিয়ার ঘোষণার মধ্য দিয়ে বেঙ্গল রেজিমেন্টের বীর বাঙালি সেনারা মুক্তিকামী ছাত্র জনতা তথা আপামর মানুষের সাথে একাত্ম হয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে, মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনে জনগণকে দৃঢ় আশাবাদী করে তোলেন। শেষ পর্যন্ত বিজয় অর্জিত হয়। (যদিও আনুষ্ঠানিকতায় অনুপস্থিতি ছিল আন্তর্জাতিক চক্রান্তে) আমাদের সেনা নায়করা।

এদিকে, দেশের বিভিন্ন সেনানিবাস থেকে বাঙালি বীর সেনারা বিদ্রোহ করে জনতার কাতারে মিশে যুদ্ধে অংশ নেন। তার আগ থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর  বিরুদ্ধে বিক্ষিপ্ত-বিচ্ছিন্ন ভাবে বীর জনগণের দামাল বীর সন্তানরা (ছাত্র-যুব-জনতার) মুক্তিযুদ্ধ শুরু করে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু বিজয় অর্জনে প্রয়োজন ছিল মুক্তিযোদ্ধাÑগেরিলা মুক্তিযোদ্ধা সকলের সুশৃঙ্খল বাহিনী।

মুক্তিযুদ্ধের প্রয়োজন থেকে কর্ণেল (অব:) এমএজি ওসমানীকে যুদ্ধের অভিজ্ঞতা-দক্ষতা ও পারদর্শিতার ভিত্তিতে মুক্তিযোদ্ধা বাহিনীর সর্বাধিনায়ক করে সুশৃঙ্খল বাহিনীতে পরিণত করা হয়। তাই তো সশস্ত্র বাহিনী দিবস সেদিনের সেনাপতি জেনারেল ওসমানীকে স্মরণ করিয়ে দেয়।

অত:পর ১৯৭১ এর ২১ নভেম্বর জেনারেল ওসমানীর সেনাপতিত্বে সারা দেশব্যাপী গণহত্যাকারী, নারী ধর্ষনকারী, অগ্নিসংযোগকারী পাকিস্তানী সশস্ত্র বাহিনীর উপর একযোগে আক্রমন করা হয়। এ আক্রমনের মধ্য দিয়ে জাতির সামনে আস্থা ও বিশ্বাসের বাহিনী হিসেবে সর্বস্তরের মানুষের স্বীকৃত দেশপ্রেমিক সশস্ত্র বাহিনীর ‘সশস্ত্র বাহিনী দিবস’ হিসাবে ইতিহাসে স্বীকৃত।

আলোচিত বাস্তবতায় নির্দ্বিধায় বলা যায়, বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী যতক্ষণ দেশ, জাতি ও জনগণের প্রয়োজনে জনতার কাতারে এসে একাত্তরের মতো, ছিয়াত্তরের সিপাহী-জনতার বিপ্লবের মতো এবং চব্বিশের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যূত্থানের মতো জনগণের সাথে একাত্ম থাকবেন। ততক্ষণ দেশের  মানুষের আস্তা ও বিশ্বাসের বাহিনী হিসেবে মূলায়িত হবেন। জাতির সামনে সর্বশেষ ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যূত্থানের মতো, জনগণ তাঁদের আস্থা ও বিশ্বাসের বাহিনীকে আমৃত্যু পাশে পাবেন বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন। সশস্ত্র বাহিনী দিবস স্বার্থক হোক, সফল হোক।

১৯৭১ সালে কয়েকজন সহযোদ্ধাকে নিয়ে নিজের সংগঠিত ও ঘোষিত ঐতিহাসিক ‘রৌমারী মুক্তাঞ্চল’ রক্ষা ও মুক্তাঞ্চলবাসীর উপর নির্ভর করে মুক্তিযোদ্ধা বাহিনী গড়ে তুলে মুক্তিযুদ্ধে নিয়োজিত থাকাকালে, থার্ড বেঙ্গল রেজিমেন্টের সুবেদার আফতাব আলী (সুবেদার আলতাফ) নেতৃত্বাধীন একটি দল যুক্ত হয় আমাদের সাথে। পরবর্তীতে থার্ড বেঙ্গল রেজিমেন্টের বিশেষ কোম্পানী ‘২ এমএফ কোম্পানী’ হিসেবে স্বীকৃত হয়। সেনাবিধি মোতাবেক কোং অধিনায়ক সুবেদার (ক্যাপ্টেন অব: আফতাফ আলী বীর উত্তম, বীর প্রতিক) আফতাব আলী নিযুক্ত থাকেন। এই সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাকে যুদ্ধের নীতি-কৌশল নির্ধারক করা হয়। এবং সম্মুখ যুদ্ধে নেতৃত্ব দিলেও সেনাবাহিনীর ‘ওস্তাদরা’ লীডার বা নেতা সম্বোধন করতেন এই অখ্যাত মুক্তিযোদ্ধাকে। সেনা সদস্যদের একাত্মতা ও আন্তরিকতা মুগ্ধ করে। সেদিক থেকে স্বীকার্য যে, সশস্ত্র বাহিনী দিবস স্মরণ করিয়ে দেয় জিয়ার ঘোষণা।

সশস্ত্র বাহিনী দিবস স্মরণ করিয়ে দেয় জিয়ার ঘোষণা

ঐতিহাসিক কোদালকাটি যুদ্ধে জেড ফোর্স অধিনায়ক নিজে (ভারতের পক্ষে ভারী অস্ত্রের সহযোগীতার আশ্বাস দিয়েও শেষ পর্যন্ত না দেওয়ার ব্যথা নিয়েও) পিছন থেকে কোং অধিনায়কের সাথে থেকে সরাসরি তদারকি (আগেই অনুমোদিত ছিল পরিকল্পনা) করেন আমাদের সফল যুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধের সময়কালে কখনও এক ঘরে, কখনও এক বাংকারে আবার কখনও যুদ্ধক্ষেত্রে একত্রে থেকে দেখেছি, বুঝেছি সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা দেশ ও জনগণকে আন্তরিকভাবে ভালবাসেন এবং পরস্পর পরস্পরকে বিশ্বাস করেন। এমন বিশ্বাস অটুট থাকবে বলে বিশ্বাস নিয়েই জানা কথাগুলো সংক্ষিপ্তভাবে লিখে ফেললাম। কোনো তথ্যকে ভুল মনে হলে বা কারও বিরক্তির কারণ হলে নিজগুনে ক্ষমাসুলভ দৃষ্টিতে বিবেচনার অনুরোধ থাকছে।

এবার যে সশস্ত্র বাহিনী দিবস উদযাপনে ২১ নভেম্বর বৃহস্পতিবার ঢাকা সেনানিবাসের সেনাকুঞ্জে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠান উপলক্ষে মহান মুক্তিযুদ্ধের শাহাদত বরণকারী সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদেরসহ সকল শহীদদের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। সেই সাথে খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের উত্তরাধিকারীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করায় সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদেরসহ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ-জামান, নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান এবং বিমান বাহিনীর প্রধান এয়ার চীফ মার্শাল হাসান মাহমুদকে একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নিজের পক্ষ থেকে ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় প্রকাশিত গণপ্রহরীর পক্ষ থেকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি।

গণপ্রহরী পক্ষে অভিনন্দন জানাচ্ছি, স্বাধীনতার ঘোষক জেড ফোর্স অধিনায়ক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীর উত্তম এর সহধর্মিনী, তিন তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে আমন্ত্রন জানিয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানকে প্রাণবন্ত করার ব্যবস্থা করায় সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের কর্র্মকর্তাদের। সেই সাথে তিন বাহিনী প্রধান আমন্ত্রিত অতিথিকে আনুষ্ঠানিকভাবে বরণ করায় আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।

আমারা আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনুসকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানাচ্ছি রাষ্ট্রের কার্যকারী প্রধানের পদে থেকে আমন্ত্রিত অতিথি বেগম খালেদা জিয়াকে যথাযথ সন্মান দিয়ে অত্যন্ত আন্তরিক পরিবেশে তাঁর সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করা এবং বক্তব্যে তাঁর কথা উল্লেখ করায়।

সেই সাথে অভিনন্দন ও আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ৫ আগষ্টে ছাত্র জনতার গণঅভ্যূত্থানে নেতৃত্বদানকারী বীরদের মধ্যে উপদেষ্টা পরিষদের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম, নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদকে। আশাবাদ ব্যক্ত করছি যে বীরত্ব দেখিয়েছ, আমৃত্যু দেশ ও জনগণের স্বার্থে অবিচল থেকে বৈষম্য মুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠায় আন্তরিক হবে। শোষণমুক্ত সমাজের আদলেই বৈষম্যমুক্ত সমাজ হতে পারে এবং হবে।

পরিশেষে, ব্যাপক প্রচারিত প্রকাশিত প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য। তারপরও ইতিহাসের স্বাক্ষ্যকে জ্ঞানগর্ব বক্তব্যের মধ্য দিয়ে তুলে ধরে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানকে স্বার্থক করার বক্তব্য থেকে দুটো কথা তুলে না ধরেই ‘সশস্ত্র বাহিনী দিবস স্মরণ করে দেয় জিয়ার ঘোষণা’ শীর্ষক আলোচনার ইতি টানতে পারছি না।

বাংলাদেশের ইতিহাসে মুক্তিযুদ্ধ সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ঘটনা উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনুস বলেছেন, ‘মুক্তিযোদ্ধারা শোষণমুক্ত, বৈষম্যহীন, কল্যাণময় সমাজ গড়ার যে স্বপ্ন নিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ নামের রাষ্ট্র করেছিলেন, ‘আমি অঙ্গিকারবদ্ধ সেই স্বপ্ন পূরণে। জনগণ যাতে সত্যিকারার্থে রাষ্ট্রের মালিক হন, এমন দেশ গড়তে চাই। তিনি বলেছেন, জুলাই-আগষ্টের ছাত্র-জনতার বিপ্লবের মধ্য দিয়ে যে নতুন যাত্রা শুরু হয়েছে, সেই যাত্রা পথে-এ দেশে কেও কারও উপর নয়, কেউ কারও নীচেও নয়, এমন ধারণায় সকল মানুষকে আমরা এক পরিবারের বন্ধনে আবদ্ধ করতে চাই।

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস সশস্ত্র বাহিনীর অবদান স্মরণ করে বলেছেন, দেশের জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে আস্থা ও বিশ্বাসের প্রতিক হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে সশস্ত্র বাহিনী। তিনি বলেছেন, সশস্ত্র বাহিনী দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কাজে নিয়োজিত। সে দায়িত্ব-কর্তব্য পালন করছেন জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে।

প্রধান উপদেষ্টা সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের আর্মি মাল্টিপারপাস কমপ্লেক্স আয়োজিত খেতাব প্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের উত্তরাধিকারীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সকল শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধার প্রতিনিধি সদস্য এবং যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।

উল্লেখ্য যে, বেগম খালেদা জিয়া তাঁর ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমানের স্ত্রী শর্মিলা রহমানকে সাথে সেনাকুঞ্জে পৌঁছেন। তিনি দীর্ঘ কারাভোগের পর অসুস্থ্যতা জনিত কারণে মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। খালেদা জিয়াকে দেখে মির্জা ফখরুল আবেগে কেঁদে ফেলেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্রের জন্য জীবনের বড় সময়টা দিয়েছেন বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া।

সশস্ত্র বাহিনী দিবস স্মরণ করিয়ে দেয় জিয়ার ঘোষণা

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটির প্রতিনিধি হাসানত আদুল্লাহ ও সারজিস আলম এবং নাসিরুদ্দিন পাটোয়ারী বেগম জিয়ার সাথে পরিচিত হন ও কথা বলেন। বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ বলেছেন, ম্যাডামের উপস্থিতি অনুষ্ঠানে অন্যরকম এক পরিবেশ তৈরী করেছে।

অনুষ্ঠানে সামরিক বেসামরিক কর্মকর্তা, রাজনীতিক, ব্যবসায়ী ও নাগরিক সমাজের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন।

 

 

By SK Mazid Mukul

প্রধান সম্পাদক, গণপ্রহরী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *