Sat. Jul 12th, 2025
সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় আওয়ামীলীগ জড়িত থাকার বিচার হয়নিসাম্প্রদায়িক সহিংসতায় আওয়ামীলীগ জড়িত থাকার বিচার হয়নি

বিশেষ প্রতিনিধি: সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় আওয়ামীলীগ জড়িত থাকার বিচার হয়নি উল্লেখ করে বলেছেন সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়াা বলেছেন, সাম্প্রদায়িক সহিংসতার প্রতিটি ঘটনার সাথে কোনো না কোনোভাবে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা ছিল এবং আওয়ামীলীগের সম্পৃক্ততা ছিল। তিনি সাম্প্রতিক বছরগুলিতে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনায় রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা ও বিচারহীনতার সংস্কৃতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ।

বুধবার সুপ্রিম কোর্ট বার মিলনায়তনে আয়োজিত ‘সত্য, ন্যায় ও সম্প্রীতির বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, গত ১০-১৫ বছরে সংঘটিত প্রতিটি সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় কোনো না কোনোভাবে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা ছিল এবং আওয়ামী লীগের ভূমিকা পরিলক্ষিত হয়েছে।

জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, “আমরা বিভিন্ন স্থানে গিয়ে দেখেছি, কীভাবে স্থানীয় রাজনৈতিক শক্তি সহিংসতাকে ব্যবহার করেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রাজনৈতিক শক্তির আজ্ঞাবহ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। সাধারণ মানুষ নিপীড়ন, হয়রানি এমনকি হত্যার শিকার হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে ধর্ষণের ঘটনাও ঘটেছে, কিন্তু এসবের কোনো বিচার হয়নি।”

তিনি রামুর ঘটনার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, “২০১২ সালে রামুর ঘটনায় ১৯টি মামলা হয়েছিল। এর মধ্যে একটির বাদী মামলা প্রত্যাহার করে নেন। ১৮টি মামলা চলমান থাকলেও বিচার হয়নি। বিচারিক তদন্তে ১৯৮ জনের নাম উঠে আসে, যারা স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুবলীগ বা আওয়ামী লীগের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। কিন্তু তদন্ত প্রতিবেদন কোর্টে দাখিল হলেও তা প্রকাশ করা হয়নি, এবং বিচার এখনো সম্পন্ন হয়নি।”

ফৌজদারি মামলায় সাক্ষ্যপ্রমাণ সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই-আগস্টের ঘটনাবলির যথাযথ সাক্ষ্যপ্রমাণ সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়নি। এতে ন্যায়বিচারের পথে বাধা সৃষ্টি হতে পারে।”

মানবাধিকারকর্মী ব্যারিস্টার সারা হোসেন বলেন, “গত ১৫ বছরে গুম, খুন, গণগ্রেপ্তার, আটক ও কারাগারে নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। সাধারণ নাগরিকদের ট্যাক্স ফাইল, সম্পত্তি, চাকরি এবং সামাজিক জীবনে নানাভাবে হয়রানি করা হয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “বাকস্বাধীনতা নিয়ে আমরা গত পাঁচ মাসে কথা বলার সুযোগ পেয়েছি, কিন্তু এটি কীভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল, তা ভুলে গেলে চলবে না। অনলাইনে কিছু গোষ্ঠী সত্য ঘটনাগুলো অস্বীকার করে আসছে, যা বাস্তবতাকে বিকৃত করার শামিল।”

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, “আওয়ামী লীগ তাদের অপরাধ স্বীকার করছে না, বরং তারা বিকল্প ন্যারেটিভ প্রচার করছে। তবে বাংলাদেশের সমাজ ও তরুণ প্রজন্ম সত্যের অনুসন্ধানে রয়েছে এবং ন্যায়বিচারের দাবিতে সোচ্চার হয়েছে।”

নেত্র নিউজের প্রধান সম্পাদক তাসনিম খলিল বলেন, “আয়নাঘরের মূল তত্ত্বাবধায়কদের বিরুদ্ধে আদালত থেকে পরোয়ানা জারি হলেও তারা গ্রেপ্তার হয়নি। অনেকেই ক্যান্টনমেন্টে অবস্থান করছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল অনেক বিতর্কিত হয়েছে, এবং এটি মানুষের অধিকার ক্ষুণ্ন করার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “বিগত বছরগুলোতে বিভিন্ন সংস্থা গুম, অপহরণ ও হত্যা চালিয়ে গেছে, যা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। এসব অপরাধের সুষ্ঠু বিচার হওয়া প্রয়োজন।”

আলোচনা সভায় অংশগ্রহণকারী বক্তারা বিচারহীনতার সংস্কৃতি বন্ধ করে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানান এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর নিরপেক্ষ ভূমিকার ওপর জোর দেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *