গণপ্রহরী ডেস্ক : যুগ যুগ ধরে প্রচলিত প্রবাদটিতে সেতু নির্মাণে , ‘সরকারকা মাল দরিয়ামে ঢাল’। অর্থাৎ জনস্বার্থে রাষ্ট্রীয় অর্থ ব্যয় করে যদি জনগণের কল্যাণে কাজে না আসে, তাহলে ব্যয়িত অর্থ অপচয় হলো। এ ধরণের অপচয় বা অর্থ ব্যয় নিশ্চিত অপরাধ। কেননা, অর্থটা জনণের শ্রমের। হয়তো জ্ঞানপাপীরা বলতেই পারে বিদেশ অর্থ যোগান দিয়েছে। বিদেশী ঋণের পিছনে কি রয়েছে তা বলে না। মূলত: বিনা লাভে কোন দেশই ঋন দেয় না বা সাহায্য সহযোগীতা করে না। যে লাভের বিনিময়ে ঋন বা সাহায্য পাওয়া যায়। সেই লাভে ঋণদাতা দেশ বা সংস্থার ষোলকলা পূরণ হলেই সেই ঋণ দিয়ে যাচ্ছে। জনগণকেই পুষিয়ে দিতে হয় ঋণের অর্থ ও তার লাভ। অর্থাৎ একজনের লাভ অপরজনের ক্ষতি এটাই স্বাভাবিক।
‘সরকারকা মাল, দরিয়ামে ঢাল’-প্রবাদকে ‘প্রবাদে’ সীমাবদ্ধ রাখেনি, অর্থপিচাস জ্ঞানপাপীরা। এরই মধ্যে পত্রপত্রিকায় পরিবেশিত এক সচিত্র প্রতিবেদনে পানির মধ্যে নির্মিত একটি চিত্রই প্রমান করছে রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয়। দশ বছর থেকে পানিতেই প্রদর্শনী সেতু বা ব্রিজ হিসেবে সেতুটি নিজেই যেন নিজেকে প্রদর্শন করে চলছে। আর সেতুটি যেন চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে বলছে, এভাবেই রাষ্ট্রের মালিক জনগণকে বোকা বানিয়ে রাষ্ট্রের তহবিলে থাকা তাঁদের অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে। যা জলে ফেলে দেওয়ার শামিল। কেননা, ‘জনগণের এক পয়সারও কাজে আসছে না। হ্যাঁ, তবে গলা সমান পানিতে হেটে হেটে পারাপারের সময় দুই পারের মানুষ চেয়ে চেয়ে দেখতে দেখতে যেতে পারছেন।
একদিন বা এক বছর নয়, দশ বছর থেকে দেখে চলেছেন। দৃশ্যটি দেখার জন্য দেশের দক্ষিণ সীমানা থেকে উত্তর সীমানায় যেতে হবে না। কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলার চরসাদীপুর ইউনিয়নের সাদী গ্রামে গেলেই রাষ্ট্রীয় অর্থ অপচয়ের স্বাক্ষী-‘ সেতুটি’ দেখা যাবে। বুঝতে কষ্ট করতে হবে না যে, সেতু নির্মাণের জন্য বরাদ্দকৃত ৩২ লাখ টাকা যদি সত্যি সত্যি জনস্বার্থে ব্যয় করা হতো। তাহলে বড় খালটির দুই পারের মানুষের যাতায়াতের জন্য সেতুটির দুই পাশে সংযোগ সড়কটিও (ওঠা জন্য রাস্তা) করা হতো। তা হয়নি বলেই, সেতুটি স্বাক্ষ্য দিচ্ছে- এটা আর কিছু না হলেও ‘সরকারকা মাল দরিয়ামে ঢাল’ প্রমাণে যথেষ্ট। জনগণের দাবির প্রেক্ষিতে কুষ্টিয়া-৪ আসনের আওয়ামীলীগ সংসদ সদস্য আব্দুর রউফের উদ্যোগে গৃহিত প্রকল্পের নির্মিত এই সেতু।
নদীর এক পাড়ে তুমি আর আরেক পাড়ে আমি। মাঝখানে বহিয়া চলেছে নদী আপন গতিতে। নদীতে পাল উড়িয়ে বা বৈঠা মেরে মাঝি নৌকা চালিয়ে চলাচল করছেন, জীবিকার সন্ধানে। যান্ত্রিক নৌযানের লঞ্চ-স্টিমারেও মানুষ ও যানবাহন পারাপার হচ্ছে। আলোচিত নদী- ‘পদ্মা নদী’। তাই বলে আলোচিত সেতুটি পদ্মা নদীতে, তা কিন্তু বলা হচ্ছে না। বলা হচ্ছে পদ্মা নদীরই এক পাড়ে পাবনা জেলা আরেক পাড়ে কুষ্টিয়া জেলা।

আর কুষ্টিয়ার কুমারখালি উপজেলার সাদীপুর ইউনিয়নের বেশিরভাগ অংশই অবস্থান পাবনা জেলার পাড়ে। অর্থাৎ এই অংশের মানুষ, কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনিক কর্তাদের নজরে তেমন পড়েন না। একইভাবে জেলা নেতাদেরও আসা যাওয়া, তেমনটা হয়ে ওঠে না। তাইতো সাদীপুর ইনিয়নের অবহেলিত বৃহত্তর এই অংশের মানুষের দীর্ঘ দিনের কাঙ্খিত ৪০ ফুট দৈর্ঘ্যরে এই সেতুটি মানুষ ব্যবহার করতে পারছেন না। তাহলে আবারো সেই একই কথা। ‘সরকারকা মাল দরিয়া মে ঢাল’।
তবে হ্যাঁ, প্রকল্প গ্রহনের পর সময় কর্তন এবং কর্তনকৃত সময়ে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি এবং তা প্রকল্প ব্যয়ে ধরার নাটক হয়নি। সাদীপুর ইউনিয়নের আলোচিত বড় খালটির সেতু নির্মাণ যথাসময়ে হয়েছে। কুষ্টিয়া ৪ আসনের সংসদ সদস্য আবদুর রউফ ‘সরকরকা মাল দরিয়ামে ঢাল’ প্রবাদের বাস্তবতা তুলে ধরতেই যেন আনুষ্ঠানিকভাবে সংযোগ সড়ক ছাড়া সেতুটি উদ্বোধন করেছেন।
দলীয় নেতাকর্মী উপজেলা প্রশাসন এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের উপস্থিতিতেই উদ্বোধন করেছেন সেতুটি। কোনো পর্যটক সেতুটি পরিদর্শনকালে সহজেই বুঝে নিবেন সাদীপুর এলাকার সেতুটি মূলত: ভাসমান সেতু! তিনি হয়তো ভেবেছেন, দুই পাড়ের মানুষ সেতুটি ব্যবহার করতে পারবেন না। কিন্তু নেত্রী হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের জোয়ারে ভেসে আসা দেশী-বিদেশী পর্যটকরা যেন তার এলাকায় আসে। তাদের মধ্যে অবহেলিত এই অঞ্চলের মানুষ নীরব দর্শকের মত ‘প্রদর্শনী সেতুটি’ উদ্বাধনী অনুষ্ঠান দেখলেন। নির্মাণ করতেও দেখেছেন। উদ্বোধনীর পর থেকে দেখতে দেখতেই দশ বছর পার করছেন! সত্যিই, একটি খালও উন্নয়ন থেকে বাদ যায়নি। ভাবতে কষ্ট হয়। এ ব্যাপারে অন্তর্বর্তী সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাচ্ছে।
