Sun. Jul 6th, 2025
স্বস্তির বাতাসেও চ্যালেঞ্জ নামক ঘূর্ণিঝড়ের কালো মেঘছবি : সংগৃহীত

স্বস্তির বাতাসেও চ্যালেঞ্জ নামক ঘূর্ণিঝড়ের কালো মেঘ। আর কেনই বা তা হবে না? ‘এ দেশ একেক বৈচিত্র্যের একেক ঋতুর দেশ; সবমিলে ষড়ঋতুর দেশ-বাংলাদেশ। ঋতু বৈচিত্র্যের প্রভাবের প্রতিফলন এ দেশের মানুষের মধ্যেও পরিলক্ষিত হয়। যে কারণে বিশ্বে স্বীকৃত যে, বাংলাদেশের মানুষ যেমনি সহজ সরল, আন্তরিক, পরোপকারী ও অতিথি পরায়ণ। আবার দেশ, জাতি ও জনগণের স্বার্থে রাষ্ট্র ও সমাজ বদলের প্রত্যাশায় রক্ত দিয়ে ও জীবন দিয়েই প্রমাণ করে চলছেন-তাঁরা ভয়ঙ্কর-দু:সাহী এবং আত্মবলিদানে বলিয়ান। এমন বৈচিত্র্য চরিত্রের মানুষের রাষ্ট্রীয় জীবনে আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন কেন্দ্রিক স্বস্তির বাতাস বয়ে যাচ্ছে একপ্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে। পাশাপাশি সেই স্বস্তির বাতাসেও চ্যালেঞ্জ নামক ঘূর্ণিঝড়ের কালো মেঘ আকাশে ভেসে বেড়ানো অব্যাহত রয়েছে। যেন ঋতু বৈচিত্র্যের কারসাজি। 

কিন্তু বাস্তবতা বলছে ঋতুবৈচিত্র্য থাকলেও ষড়ঋতুর এই দেশে বৈচিত্র্যের বৈরিতা নেই। তবে ইতিহাস স্বাক্ষ্য দিচ্ছে-মানব কল্যাণে প্রযুক্তিবিদ ও বিজ্ঞানীদের আবিষ্কৃত-উদ্ভাবিত বিজ্ঞান-প্রযুক্তির অপব্যবহারের ঘাত-প্রতিঘাতে ত্যক্ত-বিরক্ত হতে হতে ‘প্রকৃতি’ যখন বিগড়ে যায়, তখন প্রকৃতিও বদলা নেয়’। এ মুহুর্তে প্রকৃতির বদলা নিয়ে আলোচ্য নয়। বরং আলোচনায় দেখা যাক, প্রকৃতির লীলাখেলার স্বস্তির বাতাসের আগে কি ধরণের অস্বস্তি ছিল ও কিভাবে তা দূরভীত হলো। আবার স্বস্তির বাতাসে কি এমন প্রতিবন্ধকতা হলো, যাকে চ্যালেঞ্জ বা ঘুর্ণিঝড়ের কালো মেঘ আখ্যায়িত করা হচ্ছে। নাকি প্রকৃতি বিনাশী বা সর্বনাশী লোভী মানুষের ভূমিকাকে ‘কারসাজি’ বলে ভূমিকায় উল্লেখ করা হয়েছে। বিষয়টা যৌক্তিক বটে। যদিও বিশ্লেষণমুলক নাতিদীর্ঘ আলোচনার পরিবর্তে অতিসংক্ষিপ্ত আলোচনাই যথেষ্ট। কারণ, বিজ্ঞান-প্রযুক্তির বদৌলতে জ্ঞানী পাঠক সমাজ অনেক অনেক সচেতন ও অভিজ্ঞ।

সচেতন পাঠকবৃন্দ আবগত যে, লাখো লাখো মানুষের জীবনের বিনিময়ে এবং দেশের আপামর মানুষের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ অংশগ্রহনে এবং তাঁদের দামাল সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মুক্তিযুদ্ধে দেশটি ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ভৌগলিক স্বাধীনতা অর্জন করে বটে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য অর্জনের পথ রুদ্ধ হয়ে যায় এবং প্রকৃত অর্থে স্বাধীনতার বৈশিষ্ট্যও অর্জিত হয় না। যার মুলে সোভিয়েত রাশিয়ার দিক নির্দেশনায় সম্প্রসারণবাদী ভারতীয় শাসক গোষ্ঠি পক্ষে ‘ভারত সরকার’ বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের সাথে ৭ দফা গোপন চুক্তি করে রাখে। সেই চুক্তির ধারাবাহিকতায় আওয়ামীলীগ ও তার দোসরদের মাধ্যমে একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা পায়। এবং পরবর্তীতে ভারতের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভূমিকায় শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গঠিত সরকারের মাধ্যমে রক্তার্জিত দেশটিকে অনুগত রাষ্ট্রে পরিণত করে ভারত এক তরফা সুবিধা নিতে থাকে। এ জন্য ভারতীয় নীল নকশা বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তা আগাগোড়াই চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলছে। একটি স্বাধীন দেশ পরিচালিত হবে সাম্য, ন্যায় বিচার, মানবাধিকারসহ মানুষের জন্মগত মৌলিক অধিকার ভোগের নিশ্চয়তা প্রদানকারী হিসেবে জনগণের গণতান্ত্রিক সরকার দ¦ারা। যে সরকার রাষ্ট্রের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে পৃথিবীর সব দেশের সাথে রাষ্ট্রীয়ভাবে সমঅধিকারের ভিত্তিতে বন্ধুত্ব করবে। কিন্তু একদিকে সাম্রাজ্যবাদী-পুঁজিবাদী বিশ্বব্যবস্থা অপরদিকে প্রতিবেশী বড় দেশ ভারতের উগ্র হিন্দুত্ববাদী মোদি সরকারের অখণ্ড ভারত প্রতিষ্ঠার নীল নকশা বাস্তবায়ন অপতৎপরতা এবং আওয়ামীলীগ ও তার সেবাদাস-দালাল দল ও নেতাদের ভারতীয় সরকারের সেবাদাসের ভূমিকা পালন। ফলে সত্যিকারার্থে সার্বিকভাবে সর্বক্ষেত্রে স্বস্তির বাতাস নির্বিঘ্নে বয়ে যাওয়ার তেমন অবাধ সুযোগ সুবিধার সৃষ্টি হয়নি। এত বাস্তবতা সত্বেও কেন স্বস্তির বাতাসের বিষয়টি সামনে এসেছেÑসে নিয়েই এ পর্যায়ে আলোচনা।

ভারতের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামীলীগ ও আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন জোট সরকার ভোটার বিহীন ভোট প্রক্রিয়ায় একটানা সাড়ে ১৫ বছর একক কর্তৃত্ববাদী স্বৈরশাসন যেমন কায়েম করে। তেমনি ঘুষ-দুর্নীতি, লুটপাট, বিদেশে অর্থ-সম্পদ পাচার করার মধ্য দিয়ে অরাজকতার রাজ্যও কায়েম করে। এবং ভিন্ন মতের রাজনৈতিক দলগুলোর নেতা-কর্মী এবং মুক্ত চিন্তার বিভিন্ন শ্রেনী-পেশার মানুষকে কর্তৃত্ব মেনে নিতে বাধ্য করতে নির্দ্বিধায় হত্যা, খুন-গুম, অত্যাচার নির্যাতন ও মৃত্যুদন্ডের সাজানো বিচারে শাস্তি প্রদানের মাধ্যমে বিরোধী দল ও ভিন্ন মত মুক্ত দেশ পরিণত করতে থাকে। এতে করে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেন দেশবাসী। বিএনপিসহ আন্দোলনকারী দলগুলো ভারতের গোয়েন্দা তৎপরতায় সামরিক-বেসামরিক আমলা এবং র‌্যাব-পুলিশসহ বিভিন্ন বাহিনীর গণবিরোধী অপতৎপরতায় আন্দোলন সফল হয় না। এরই মধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নামে আন্দোলন শুরু হয়। আন্দোলনকারী রাজনৈতিক দলসমূহও আন্দোলনে অংশ নেন। এক পর্যায় শোষিত-বঞ্চিত অধিকার হারা সংখ্যাগরিষ্ঠ সংখ্যক শ্রমজীবি-কর্মজীবি মানুষ বৈষম্যমুক্ত সমাজের নতুন বাংলাদেশের স্বপ্নে এবং মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্যের শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠায় ‘বৈষম্যমুক্ত সমাজ’কে প্রাধান্য দিবে মর্মে ‘বিশ্বাস’ থেকে মানুষ রাজপথে নেমে আসেন। হাজারো মানুষের প্রানের বিনিময়ে চব্বিশের জুলাইয়ে ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা স্বজনদের নিয়ে ভারতে পালিয়ে যান, পতন ঘটে স্বৈরাচারের, পতন ঘটে স্বৈরশাসনের। ক্ষমতায় বসে অন্তর্বর্তী সরকার। ভারত তা মেনে নিতে পারে না। ফলে ভারত চায় আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন সরকার আবারো ক্ষমতায় আসুক, যা হবে তাদের অনুগত। এবং আওয়ামীলীগের সাড়ে ১৫ বছরের স্বৈরশাসনের দোসর ও সহযোগী দলগুলোও তাই চায়। ভারতের চাওয়া আর তাদের দালালদের চাওয়া-‘অন্তর্বর্তী সরকারের পতন এবং দেশে অস্থির পরিস্থিতি সৃষ্টি করে ভারতের নীল নকশা বাস্তবায়ন’। কিন্তু জাতীয় ঐক্যের মধ্যে দিয়ে ও স্বৈরাচারের পতনের মধ্য দিয়ে প্রত্যক্ষ ভোটে কাঙ্খিত গণতান্ত্রিক সরকার গঠনের সুযোগ সৃষ্টি হয়।

শুরু হয় সংস্কার, বিচার ও নির্বাচনের পথে এগিয়ে যাওয়ার কাজ। পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সংস্কার কমিশনের ও অন্তর্বর্তী সরকারের আলোচনা। রাজনৈতিক মহল থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের দাবি উত্থাপিত হয়। সরকার পরবর্তী জানুয়ারি থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচনের সময়সীমা ঘোষণা দেন। এটুকুতেই পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে ভারতের নীল নকশা মতে তার এ দেশীয় দালাল দোসরদের ভূমিকায় ও রাষ্ট্র কাঠামোতে থাকা সুবিধাভোগী আমলাদের কারসাজিতে রাষ্ট্রীয় ও সমাজ জীবনে অস্থিরতা ও সরকারে প্রতি অসন্তোষ বৃদ্ধির ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তৃত হতে থাকে। এদিকে সরকারের রাজনৈতিক দূরদর্শিতার ঘাটতি জনিত কারণে স্বৈরাচারের সংবিধান ও রাষ্ট্র পরিচালনায় স্বৈরাচারের দোসর আমলাদের বহাল রাখার কারণেই সংস্কার কাজ যেন এক হাতে আগালে দু’হাত পিছায়। এহেন ভারতীয় নীল নকশার ষড়যন্ত্রে অপতৎপরতা বৃদ্ধি এবং সংস্কার কাজে ধীর গতির সুযোগের সদ্বব্যবহার করতে ষড়যন্ত্রকারীদের ষড়যন্ত্রে ভারত প্রীতিতে মুগ্ধ কতিপয় বিএনিপ নেতাও ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দিতে বাধ্য করার হুমকিতে ‘হাল্কা মেঘ কালো মেঘে’ পরিণত হতে থাকে। পক্ষান্তরে জাতিসংঘের পাশাপাশি সাম্রাজ্যবাদী-পুঁজিবাদী বিশ্ব ব্যবস্থার বৃহৎ শক্তিগুলোসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সমূহ নিজ নিজ দেশের স্বার্থে তৎপর হয়ে ওঠে। এবং ড. ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকায় সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দেন। ভারত ক্ষীপ্ত হয়ে নীল নকশা বাস্তবায়নে সীমান্তে অপতৎপরতা বৃদ্ধির সাথে পরিকল্পিত পুশইন- এর নাটক মঞ্চস্থ করতে থাকে। ফলশ্রুতিতে রাজনৈতিক অঙ্গনের রাজনীতির আকাশে চ্যালেঞ্জ নামক ঘূর্ণিঝড়ের কালো মেঘ ছড়িয়ে পড়ে। যা দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তা যেন চতুর্মুখী ষড়যন্ত্রে হুমকির মুখে পড়ে।

এ পরিস্থিতিতে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঠিক দিক নির্দেশনায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির গৃহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে, লন্ডনে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাথে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনুসের মধ্যেকার আলোচনায় সেই কালো মেঘ কাটতে শুরু করে বটে। কিন্তু বিদ্যমান চ্যালেঞ্জগুলো আশঙ্কা মুক্ত হতে দিচ্ছে না। কারণ, স্বৈরাচার পতনের আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যে জাতীয় ঐক্য গড়ে উঠেছিল, সে ঐক্যের মধ্যে নির্বাচনকে ঘিরে একের সাথে অপর দলের দূরুত্ব তৈরী হচ্ছে। উপরন্ত উপরে আলোচিত নীল নকশার ষড়যন্ত্র সামনের দিনের জন্য মারাত্মক চ্যালেঞ্জ হয়েই থাকছে।

পাঠক, হয়তো ইতিমধ্যে স্বস্তির বাতাসেও চ্যালেঞ্জ নামক কালো মেঘ সরিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্নিত করে জাতীয় ঐক্য ভিত্তিতে চ্যালেঞ্জগুলোকে মোকবিলা সম্ভব মর্মে উপসংহারে পৌঁছেছেন নিজেদের বুদ্ধিমত্তা, চিন্তা- চেতানায় বিশ্বকে প্রতিনিয়ত জানতে পারায়। তবুও শিরোনাম ঠিক করে সীমিত জ্ঞানে বাস্তবতার আলোকে যেহেতু লেখা শুরু করেছি পাঠকদের সাথে মতামত বিনিময়ের জন্য। সেহেতু আমাকেও উপসংহারে দু’চার কথাতো লিখতে হবে। তার আগে আহ্বান থাকবে এমন পরিস্থিতি নিয়ে ও পরিস্থিতি হওয়ার আশঙ্কা নিয়ে আপনাদের গণপ্রহরী প্রায়ই লিখে থাকে। তন্মধ্যে জনসমর্থনে এগিয়ে থাকা সত্ত্বেও বিএনপির ভয় কেন’ এবং ‘ভারতীয় ভুতের আছরে বিএনপি দিশেহারা’ শীর্ষক ভাষ্যকারের পৃথক পৃথক লেখা দুটি গণপ্রহরীর ওয়েবসাইটে দেখার। এবার ষড়ঋতুর দেশে ঋতুবৈচিত্র বা শুধু চলমান ঋতু ‘বর্ষা’র বৈচিত্র্য তুলে ধরার মতো উপসংহার উপস্থাপন করতে না পারলেও সোজাসাপ্টা কথায় প্রধান প্রধান চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্নিত করে এবং তা মোকাবিলায় করণীয় বিষয়ে সাদামাটা চোখে দেখা ও সাধারণ জ্ঞানে বাস্তবতা থেকে অর্জিত অভিজ্ঞতায় উপসংহার হিসেবে সাদামাটা দু’চার কথার মধ্য দিয়ে ইতি টানবো।

সম্মানিত পাঠক, প্রথমে উপসংহারে আলোচিতব্য চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরছি। এক. বায়ান্ন ও উনসত্তরের শহীদের রক্তপথ বেয়ে আগত একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে লাখ লাখ শহীদের আত্মত্যাগ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জীবন মরণ মুক্তিযুদ্ধে রক্তার্জিত স্বাধীন ভূখন্ডের দেশ ‘বাংলাদেশ’। শুরুতে মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য অর্জনের পথ রুদ্ধ করার সাথে প্রকৃতি স্বাধীনতা ভোগ করা থেকে বঞ্চিত করে ভারতের সাথে চুক্তিবদ্ধ আওয়ামীলীগ-বাকশাল সরকার। সেই চুক্তির ধারাবাহিকতায় ভারতের ‘অখন্ড ভারতে’র নীল নকশা বাস্তবায়নের লক্ষ্য পূরণে তাদের হারানো এই স্বর্গ ফিরে পাওয়ার ক্ষেত্রে তাদের জন্য অনুগত আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের পুনর্বহালের স্বপ্ন নিয়ে উগ্র হিন্দুত্ববাদী মোদি নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকারের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ অপতৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। এবং সেভেন সিস্টার খ্যাত ভারতের ৭ রাজ্যের প্রাকৃতিক সম্পদ লুটে কেন্দ্রিভূত করার পরিকল্পনায় বাংলাদেশকে ব্যবহারে মোদি সরকার দিশেহারা হয়ে পড়েছে।

দুই. (ক) প্রথোমক্ত চ্যালেঞ্জের পক্ষে এ দেশের রাষ্ট্র পরিচালনায় নিয়োজিত সামরিক-বেসামরিক আমলাদের মধ্যে হাসিনা সরকারের মদদপুষ্ট সুবিধাভোগী ক্ষমতার অপব্যবহারকারী লুটেরারা আজও ক্ষমতা প্রয়োগের কলা কৌশলে ভূমিকা পালন করছে। (খ) নদনদী, খাল-বিল, হাটবাজার, বন্দর-নগরীর সরকারি সম্পদসহ সকল পর্যায়ের দখলবাজ, টেন্ডারবাজ, সিণ্ডিকেটভুক্ত আওয়ামীলীগের নেতাকর্মী সহ অন্যান্য জোটভুক্ত দলের নেতা-কর্মীরা অগাধ অর্থ-সম্পদের মালিকানা নিয়েই অর্থ ও শক্তির প্রভাব বলয়ে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থার ‘র’- এর পরিচালনায় অপতৎপরতায় তৎপর।

তিন. জাতীয় ঐক্যের আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আত্মত্যাগে বলিয়ান ছাত্রদের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে শুধু বৈষম্য শব্দটিকে কেন্দ্র করে বৈষম্যমুক্ত সমাজ হওয়ার মধ্য দিয়ে মুিক্তযুদ্ধের লক্ষ্যের শোষণমুক্ত সমাজের প্রত্যাশায়-শোষিত বঞ্চিত-অধিকারহারা শ্রমজীবি-কর্মজীবি গরীব-দু:খী সর্বহারা নিম্ন-মধ্যবিÍত শ্রেনীর মানুষ অকাতরে জীবন দিয়ে সফল করেন চব্বিশের ছাত্রজনতার গণঅভ্যূত্থান। আজকে সে পরিস্থিতি না থাকার অর্থ জাতীয় ঐক্যের ক্ষেত্রে একদিকে ঢালু হওয়া। আর যে দিকে ঢালু, পানি সেদিকেই গড়াবে। এছাড়া নির্বাচন ঘিরে দলের সাথে দলের মতাদর্শগতও পার্থক্য ফুটে ওঠে। এতে দূরুত্ব সৃষ্টি হয় জাতীয় ঐক্যের। যা দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে পতিত করেছে। এমনিতেই বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বীরত্বের ভূমিকা পালনকারী বীরদের অংশ বিশেষ নিয়ে গঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টিও সংখ্যাগরিষ্ঠ শোষিতের পক্ষ না নিয়ে আন্দোলনকালে তরুণদের জোয়ার ভিত্তিতে রাষ্ট্রক্ষমতা প্রাপ্তির আশায় মধ্যপন্থা অবলম্বন করায় এই সংখ্যাগরিষ্ঠ শ্রেনীর মাুনষের মধ্যে হতাশা একটু একটু করে দ্রুত বাড়ছে। সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের প্রত্যাশা পূরণে নিশ্চয়তা দেওয়ার মত গণভিত্তি সম্পন্ন ছোট বা বড় দল  তেমনটা নেই। এটাকেও ষড়যন্ত্রকারীরা ব্যবহার শুরু করেছে। এটাকে প্রতিহত করতে হবে সম্মিলিতভাবে।

চার. প্রাকৃতিক দুর্যোগের বন্যা, প্রকৃতি বিনাশীদের আঘাতে ক্ষিপ্ত প্রকৃতি বদলা নিতে আবারো ‘করোনা’ ছুড়ে দিয়েছে। যা নির্বাচনের জন্য অন্তরায় সৃষ্টি করতে পারে। নির্বাচন সম্ভব না হলে জাতীয় ঐক্য ভিত্তিতে জাতীয় সরকার গঠনের ক্ষেত্রে সম্মিলিত প্রচেষ্টা থাকতে হবে। এজন্য অন্তর্বর্তী সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এ পরিস্থিতিতেই ঐকমত্যে পৌঁছাতে হবে। কেননা, ইসরাইল ফিলিস্তিনে গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ অব্যাহত রেখেই ইরানে মরণ কামড় দেয়। ইরান পাল্টা আক্রমন অব্যাহত রাখে। মার্কিন অস্ত্রশক্তি প্রদর্শনের মাধ্যমে ইরানকে স্তব্ধ করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয় বটে। কিন্তু ফিলিস্তিনের ঘটনা বলছে যুদ্ধ বন্ধ নয় স্থগিত। এমন আশঙ্কা ও করোনার  প্রভাবেও নির্বাচন বিঘ্ন ঘটতে পারে। সার্বিক পরিস্থিতি সামাল দিয়ে দেশকে এগিয়ে নিতে অন্তর্বর্তী সরকারের স্থলে জাতীয় সরকার অপরিহার্য হয়ে পড়বে। অর্থাৎ ‘করোনা’ যুদ্ধ পরিস্থিতির মতো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার প্রস্তুতি এখনই নিতে হবে।

পাঁচ. প্রযুক্তিগত কারণে অপতথ্য ও অপপ্রচারের সুযোগের অপব্যবহারকে চ্যালেঞ্জ ধরে নিয়ে জাতীয় ঐক্যকে সুদৃঢ় করতে হবে এবং স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিতে রক্তপথে গড়ে ওঠা জাতীয় ঐক্য টিকিয়ে রেখেই নির্বাচনী প্রচার তৎপরতা চালাতে হবে। ছয়. নির্বাচন হলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। প্রতিদ্বন্দ্বিতা হলে স্ব স্ব দলীয় কর্মসূচি ও মতাদর্শগত দিক থেকে ভিন্নতা থাকবে বটে। তবে নির্বাচিত সরকার হোক অথবা জাতীয় সরকার হোক স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তার স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে আন্দোলনকালীন সময়ের ঐক্য অটুট রাখতে হবে। নয়তো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা সম্ভব নাও হতে পারে। সাত. জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিকে সুদৃঢ় রাখতে অন্তর্বর্তী সরকারের পাশাপাশি বিএনপি, জাতীয় নাগরিক পার্টি, জমায়াতে ইসলাম ও সরকারকে সমর্থনকারী অন্যান্য দলসহ বাম দলগুলোকে সার্বক্ষণিকভাবে তৎপর থাকতে হবে। তবে একাত্তর ও চব্বিশকে সামনে রেখে এবং শহীদদের আত্মত্যাগকে স্বার্থক করতে। এজন্য অবশ্যই ভারতপ্রীতিতে মুগ্ধদের লাগাম টেনে ধরতে হবে দলীয় নেতৃত্বকে। তরুণদের চব্বিশের মত ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকতে হবে। তাহলে স্বস্তির বাতাস বয়ে দেওয়া সম্ভব হবে এবং চ্যালেঞ্জ নামক ঘুর্ণিঝড়ের কালো মেঘ আপনাআপনি সরে যাবে বলে বিশ্বাস আমাদের। তবে রাজনৈতিক দলগুলোকে দেশের বৃহত্তর স্বার্থে ঐক্যের চাবিকাঠি হিসেবে ‘ছাড়’ দেওয়ার মানসিকতা উর্ধ্বে তুলে ধরতে হবে।

By SK Mazid Mukul

প্রধান সম্পাদক, গণপ্রহরী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *