নিজস্ব প্রতিবেদক : ১৪ দল লাপত্তা নয় সরব সামাজিক আন্দোলনে। পত্রপত্রিকার খবরে আত্তয়ামীগীগের নেতৃত্বাধীন নিবন্ধিত ১৪ দলীয় জোটের রাজনৈতিক দলগুলো লাপাত্তা হয়েছে এবং কেন্দ্রিয় কার্যালয়গুলো জনশূন্য। এদিকে ধ্বংসস্তুপে পরিণত, আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের পোড়া ভবনটি ভাসমান পথশিশু ও মাদক সেবীদের আড্ডাস্থলে পরিণত হয়েছে। দৈনিকের খবরে বলা হয়েছে, গণতন্ত্রী পার্টির নেতারা অফিসের ভাড়া না দিয়েই পালিয়েছে। তরিকত ফেডারেশনের নির্বাচন কমিশনে দাখিল কৃত কাগজপত্রে উল্লেখিত ঠিকানায় অফিস নেই, দাবি দৈনিকটির। গণতন্ত্রী-পার্টির কেন্দ্রীয় আফিসের ঠিকানায়ও নেই অফিসটি। তার অর্থ এই নয় যে, ১৪ দল লাপাত্তা।
আমাদের পর্যবেক্ষণে, ১৪ দল লাপাত্তা নয়, সরব সামাজিক আন্দোলনে। পর্যবেক্ষণে, ১৪ দলের কোনো দলেরই সাংগঠনিকভাবে রাজনৈতিকি কার্যক্রম পরিলক্ষিত হচ্ছে না। পতিত সৈরাচারের দোসর বা মিত্র হিসেবে ১৪ দল স্বৈরাচারকে যেমনি ক্ষমতাসীন করেছে। একইভাবে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে ও স্বৈরাচারিত্ব চালাতে তাদের ভূমিকা ছিল; আাওয়ামীলীগ যা করে বা করছে তা ঠিকই। যদিও দলগুলো কোনোটি বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের সাইন বোর্ডধারী। কোনোটি সাম্যবাদ অর্থাৎ কমিউনিজম প্রতিষ্ঠা হলে যে সাম্যবাদী সমাজ প্রতিষ্ঠিত হয়। সেই সমাজের নামানুসারে সাম্যবাদী দলের সাইনবোর্ডধারী। কোনোটি শ্রমিক শ্রেনীর প্রতিনিধিত্বকারী দল হিসেবে ওয়ার্কার্স পার্টির সাইন বোর্ডধারী। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, শ্রমিকশ্রেনীর (প্রোলেতারিয়েত) বা সর্বহারা শ্রেণীর মুক্তির বা সমাজতন্ত্রে প্রতিষ্ঠার পথে কেওই ছিল না। বরং এসব সাইনবোর্ড তুলে সমাজতান্ত্রিক আদর্শ বিরোধী ভূমিকা পালন করেছে। এতদসত্বেও, নির্দ্বিধায় বলা যায়, ১৪ দল লাপাত্তা নয়, সরব সমাজিক আন্দোলনে।
শিরোনামে উল্লেখিত বক্তব্যের সাথে গণপ্রহরীর ওয়েবসাইট ও ছাপা কপির পাঠকদের যাঁরা কেন্দ্রিয় রাজনীতিকদের সম্পর্কে অবগত। এবং জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতাদের সম্পকে অবগত। অর্থাৎ কেন্দ্র থেকে উপজেল পর্যন্ত এসব দলের (সব দলের শাখা-প্রশাখা এত বিস্তৃত নেই বলেই আমাদের জানা) নেতা কর্মীদের চেনেন ও জানেন। তারা অন্তত: এক বাক্যেই স্বীকার করবেন, আওয়ামীলীগ মাঠে না থাকলে, এ দলগুলোর কার্যালয় শুধু-জনশূন্য নয়; দলগুলোই মাঠশূন্য (!) হতে বাধ্য। কারণ তাদের বাদ দিয়ে আওয়ামীলীগ গণতন্ত্রের সাইনবোর্ড তুলে ফ্যাসিজম কায়েম করেনি। যা করেছে তাদের সাথে একাত্ম হয়েই করেছে। এও স্বীকার করবেন য়ে, এসব দলের রাজনীতি থেকে বিভিন্ন স্তরের নেতা কর্মীর সংখ্যা কমেছে বহুগুনে।
স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের শাসনকে এবং শেখ হাসিনার নেতৃত্বকে স্থায়ী করার ভোটারবিহিন ২০২৪ এর শেষ নির্বাচন সম্পর্কে পাঠকরা অবগত। সেই নির্বাচনে ১৪ দলের জনসমর্থনের প্রমাণ। জনগণের কাছে পরিস্কার। কিন্তু নেতা কর্মীদের যারা এখনও দলগুলোর সাথে আছেন, এই দলগুরোর জন্য তাদের অনেক ত্যাগ আছে। তারা স্বৈরাচার হিসেবে স্ব স্ব এলাকায় চিহিৃত হতে চান না। সেই সুযোগে আওয়ামীলীগ তাদের উপর ভর করছে এবং সমাজিক আন্দোলনে অংশ নিতে প্ররোচিত করছে। সেহেতু স্বীকার করতে হবে ১৪ দল লাপাত্তা নয়, সরব সামাজিক আন্দোলন।
১৪ দরেল কার্যালয়গুলো জনশূণ্য কারো মতে দলগুলোই মাঠশূণ্য। এ ব্যাপারে খুবই সীমিতভাবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দু’ চারজন মধ্যম সারির নেতার মতামত নেয়ার চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি। নিম্নস্তরের নেতা-কর্মীদেরসহ জনমতেই পাওয়া সন্তোষ জনক উত্তর বা মতামত। তাতে কেও বলেছেন, আদর্শচ্যুত হলে এমনটাই হয়। এটা শুনে আবার কেও বলেছেন, আদর্শচ্যুতির কথা প্রবীন নেতারা অর্থাৎ প্রথম সারির নেতারা স্বীকারই করবে না। স্বীকার করতেও পারবেন না। স্বীকার করলে, সমাজতন্ত্র অথবা গণতন্ত্রের জন্য, আওয়ামীলীগের এক দলীয় শাসন প্রতিষ্ঠার পর; আওয়ামীলীগ হতো তাদের প্রতিপক্ষ। এটা বললে স্বৈরাচারের দোসর হিসেবে যে সুযোগ সুবিধা ভোগ করতে পেরেছেন এবং অর্থবিত্ত কামিয়েছেন, তা হতো না। যদিও জনসমর্থন কতটা, তা ভোটের মাধ্যমেই জনগণ জানিয়ে দিয়েছেন। নেতাকর্মীরা সংখ্যাও কমেছে ও কমছে। তাতে বড় নেতাদের যায় আসে না। যায় আসলে অনেকের জীবনের শেষ পর্যায়ে রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা ভোগ করতে পারবেন না।
এ ছাড়া নেতাকর্মী সমর্থকদের দিক থেকে এবং সাংগঠনিক শাখা-প্রশাখার দিক থেকে এগিয়ে জাসদ। যাদের সাইনবোর্ড বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের। যে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বীরমুক্তিযোদ্ধা কর্নেল তাহের বীরউত্তমসহ সমাজতন্ত্রকামি হাজারো ছাত্র যুবক-মুক্তিযোদ্ধা সমাজতন্ত্রের ঝান্ডাতুলে এগিয়ে চলছিলেন। নেতৃত্বের ভুলের জন্য এবং জনগণকে সমাজতান্ত্রিক রাজনীতিতে সচেতন করে তাদের উপর নির্ভর না করে ভুল পথে চালাাতে গণবাহিনীর হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছিলেন।
ফলশ্রুতিতে শেখ মুজিব সরকারের রক্ষীবাহিনীসহ দলীয় নিজস্ব বাহিনীর বর্বোরচিত হত্যাকান্ডে হাজারো সমাজন্ত্রকামি বিপ্লবাকাঙ্খী ছাত্র-যুবক প্রাণ হারিয়েছেন, শহীদ হয়েছেন। সেই শহীদের রক্তের উপর দিয়েই গণবাহিনীর একজন হাসানুল হক ইনুর নেতৃত্বে পুণর্গঠিত জাসদ। সেই সংগঠনের হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে হত্যাকারী আওয়ামীলীগের দোসর হয়েছেন। আওয়ামীলীগ যা-ই করুন মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামেই করছিলেন। এটাই তাদের শান্তনা। জনমতে এসেছে অপরজন বহু আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী। তিনি যদি রাজনীতি থেকে মুক্তিযুদ্ধের পর অবসর যেতেন, তিনি আন্দোলনের ইতিহাসের একটি অধ্যায় হতে পারতেন। রাজনীতি থেকে অবসরে না গেলেও পরীক্ষিত ও দেশবাসীর প্রত্যাখ্যাত পতিত স্বৈরাচারের দোসরে না হলেও তার ত্যাগ তিতিক্ষা রাজনৈতিক শিক্ষায় উদাহরন হতে পারতেন।
এতদসংগে পর্যালোচনায় দেখা যায়, আলোচনায় প্রাধান্য পাওয়া জাসদ ও ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা-কর্মীরা রাজনীতিতে আদর্শ-কর্মসূচী ও ভূমিকায় জনপ্রিয়তা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছেন ও হচ্ছিলেন। সে কারণে সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনে নিচ্ছিলেন ও অংশ নিচ্ছেন। আরও একটি বিষয় জনমতে বেরিয়ে এসেছে যে, জাসদ, গণবাহিনীর সদস্যদের রাজনৈতিক শিক্ষায় মাওসেতুঙÑএর উদ্বৃতি পড়াতেন। সেই উদ্বৃতি আলোকে কেও কেও বলেছেন, লাল পতাকাকে কবর দিতে লাল পতাকা উড়াতে হয়। তারা তা-ই করেছিলেন। অর্থাৎ সমাজতন্ত্রকে কবর দিতে চেষ্টা করার জন্যই মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্যে অর্জিত হয়নি। তারপরও যেহেতু সামাজিক আন্দোলনে অনেকেই। সেহেতু বলা যায়, ১৪ দল লাপাত্তা নয়, সামাজিক আন্দোলনে।
