নিজস্ব প্রতিবেদক : ৬৮৫ জনের চিঠিতে বাংলাদেশের জনগণ : সরকারের কাছে হাসিনা। প্রতিবেশী ভারতের অবসরপ্রাপ্ত বিচারক-১৯ জন এবং ৩৪ জন রাষ্ট্রদূতসহ আমলা-১৩৯ জন, উপাচার্য-৩০০ জন, সাবেক সামরিক কর্মকর্তা-১৯২ জন ও নাগরিক সামাজের গণমান্য ব্যক্তি-৩৫ জনসহ মোট ৬৮৫ জন ভারতীয় বিশিষ্ট নাগরিক বাংলাদেশের জনগণের কাছে ‘শান্তি ও বন্ধুত্বের পথে চলা’র আহ্বান জানিয়ে খোলা চিঠি লিখেছেন। চিঠি লেখকদের কর্মজীবনের পরিচিতি জেনে নিশ্চিত হলাম, তাঁরা সকলেই জ্ঞানী। আর আমরা প্রবাদ প্রতিমের দেশ ‘বাংলাদেশে’র মানুষ হিসেবে বিশ্বাস করি-‘জ্ঞানীর জন্য ইশারাই কাফি’
বাংলাদেশের সংবিধান মতে, বাংলাদেশের জনগণই বাংলাদেশ নামের রাষ্ট্রের মালিক। সেই মালিক জনগণকে যথাযথ মূল্যায়ণ করে ‘তাঁদের’ কাছে খোলা চিঠি লেখায় জনগণ পক্ষে (অর্থাৎ ছাত্র-জনতার গণঅভ্যূত্থানের মধ্য দিয়ে ক্ষমতাসীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও জনগণের অংশ হিসেবে) অভিনন্দন জানাচ্ছি। যদিও উগ্র-হিন্দুত্ববাদী বিজেপি নেতা নরেন্দ্র মোদী নেতৃত্বাধীন ভারত সরকার বাংলাদেশের জনগণকে উপেক্ষা করে পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনা ও তার নেতৃত্বাধীন সরকারকে ক্ষমতাসীন করে চিরস্থায়ী রাখার মদদ দিয়ে যাচ্ছিলেন। এবং লেখার এ মূহুর্ত পর্যন্ত তাঁর দলীয় নেতা-কর্মী ও পরিবারের সদস্যদের ভারতে আশ্রয় দিয়ে নিরাপত্তা বিধান করে চলছেন।
ভারত রাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় প্রতিনিধি বাংলাদেশস্থ ভারতীয় হাই কমিশানার এবং সম্প্রতি ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব দু’দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক রাখাসহ ব্যবসা-বানিজ্য স্বাভাবিকীকরণ নিয়ে আলোচনা করেছেন ও সম্পর্ক উন্নয়নের দিকে এগিয়েও যাচ্ছেন। এ বিষয়ে চিঠি লেখক জ্ঞানীজনরা খোঁজ-খবর রাখছেন কি-না তা বোধগম্য নয়। তবে উগ্র-হিন্দুত্ববাদী সংগঠন সমূহ ভারতের নিরাপত্তায় থাকা কোলকাতা, আগরতলা ও মুম্বাইয়ে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট অফিসে হামলা, ভাঙচুরসহ বাংলাদেশের রক্তার্জিত পতাকা পোড়ানোদের আদলে এবং তাঁদের ভাষায় ‘বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতনের মনগড়া কাহিনী’ উল্লেখ করে চিঠি লেখাকে ‘জুতা মেরে গুরুদান করার প্রবাদের অনুরূপ’ বলে মনে হয়।
কেননা, চিঠি লেখক জ্ঞানীজনরা যে বাংলাদেশের জনগণের কাছে খোলা চিঠি লিখেছেন, চিঠিকে লেখকদের কর্মপরিচয় থেকে সম্মানের দৃষ্টিতে বিবেচনা করলেও বাংলাদেশের জনগণ চিঠিতে উল্লেখিত অভিযোগ একবাক্যে অস্বীকার করবেন ও করছেন। শুধুমাত্র হিন্দু ধর্মাবলম্বীসহ অন্যান্য উগ্রবাদী ধর্মালম্বীরা একমত পোষণ করলে করতেও পারেন। কেননা, গণঅভ্যূত্থানকে কেন্দ্র করে বিশেষত: ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তের সাথে বিশ্বাসঘাতকতাকারী আওয়ামীলীগ দলীয় মুসলমান ও হিন্দু আওয়ামী রাজনৈতিক নেতাদের বাড়ি-ঘর কিছু ভাঙচুর হয়েছে মাত্র।
পৃথিবীর ইতিহাস বলে-গণঅভ্যূত্থান, গণবিপ্লব, বিপ্লব বা স্বাধীনতা যুদ্ধের মধ্য দিয়ে পটপরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এমন ঘটনা ঘটে আসছে। তবে বাংলাদেশের মানুষ যেভাবে অত্যাচারিত, নির্যাতিত, শোষিত ও কালাকানুনের শাসনে শাসিত হয়ে আসছিলেন, সে তুলনায় যেমন ঘটনা ঘটার আশঙ্কা ছিল তেমনটা হতে পারেনি। কারণ, আন্দোলন-গণঅভ্যূত্থানে নেতৃত্বাদনকারী ছাত্র-জনতা রাজনৈতিক দলসমূহ এবং সেনাবাহিনীসহ অন্যান্য বাহিনী সজাগ সতর্ক ছিলেন ও এখনও আছেন, রেখেছেন। ইতিহাসের শিক্ষায় যা করণীয় ছিল তা না কারায়, করার সক্ষমতার ক্ষেত্রে অপারগতা বা ব্যর্থতা অথবা প্রস্তুতি না থাকায় ভারতীয় সম্মানীয় নাগরিকবৃন্দ যে পরিস্থিতির কথা লিখেছেন, যদিও তার বাস্তবতা কল্পনা প্রসূত মাত্র। বাস্তব ক্ষেত্রে মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন বলে প্রমাণিত হবে।
৬৮৫ জনের চিঠিতে বাংলাদেশের জনগণ : সরকারের কাছে হাসিনা শীর্ষক লেখার এ পর্যায়ে চিঠি লেখক জ্ঞানীজনদের জ্ঞানী বললেও মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন অভিযোগ হেতু গুণী বলতে না পারায় দুঃখ প্রকাশ করছি। ইতিহাসের স্বাক্ষ্যমতে, রাষ্ট্রীয় চরিত্রের দিক থেকে সম্প্রসারণবাদী ভারত সরকারের অধীনে স্ব স্ব পদে বা পেশায় দায়িত্ব পালনকালীন সময়ের সুবিধাভোগী লেখক ভারতীয় নাগরিকবৃন্দকে জ্ঞানী বিবেচনায় নিয়ে ‘জ্ঞানীর জন্য ইশারাই কাফি’ প্রবাদের পুনরুল্লেখ করে একটি ছোট্ট উদাহরণ তুলে ধরছি। সেই সাথে একটি বাক্য লিখতে বাধ্য হচ্ছি যে, জ্ঞানীদের শ্রেণী স্বার্থ প্রাধান্য পেয়ে থাকে। তবে গুণীজনদের কাছে শ্রেণী স্বার্থ গৌণ হয়ে থাকে। উদাহরণটি তুলে ধরার পাশাপাশি উল্লেখিত জ্ঞানীদের কাছে একটি বিষয়ে দুটি প্রশ্ন রেখে ইতি টানবো। জ্ঞানীজনদের কাছে উগ্র হিন্দুত্ববাদী শুধু নয়, কোনো ধর্মীয় উগ্রবাদকে প্রশ্রয় না দিয়ে জনগণকে তার চারপাশে যা ঘটছে সে বিষয়ে বাস্তব পদক্ষেপ আশা করা বাঞ্ছনীয়।
এবার প্রতিবেদনের এ মূহুর্তে উদাহরণটি ‘হাড়ির একটি ভাত টিপলে যেমন হাড়ির সব ভাত সিদ্ধ হয়েছে কি-না তা এক ভাতেই বোঝা যায়’। তেমনি উদাহরণটি তুলে ধরতে লিখতে হচ্ছে, যে মূহুর্তে লেখাটি এ পর্যায়ে লিখছি তখন দেশের উত্তর জনপদের গাইবান্ধা জেলা শহরের কালিবাড়ি মন্দিরে হিন্দু সম্প্রদায়ের ৫৬ প্রহর ব্যাপী নাম কীর্তন সন্ধ্যায় শুরু হয়ে চলছে। আজ থেকে ৭ দিন ৭ রাত ও লীলা কীর্তনসহ ৯ দিন ব্যাপী ধর্মীয় অনুষ্ঠান। এমন নির্বিঘ্ন ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান পালন করা আমাদের গাইবান্ধাসহ দেশের সর্বত্র সকল ধর্মের মানুষ নির্বিঘ্নে ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান পালন করছেন ও করে আসছেন।
৬৮৫ জনের চিঠিতে বাংলাদেশের জনগণ: মোদী সরকারের কাছে হাসিনা শীর্ষক প্রতিবেদনের সমাপ্তি টানার লগ্নে চিঠি লেখক জ্ঞানীজনরা দেড় কোটি শক্তিশালী সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ, তাদের সম্পত্তি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল করে নিয়ে দেশ ছাড়তে বাধ্য করা হচ্ছে বলে ভিত্তিহীন দাবি করেছেন। কিন্তু তাঁরা এটা বলেননি ভারতের হিন্দু, আদিবাসী ও মুসলমান কৃষক-শ্রমিকসহ সর্বস্তরের শোষিত-নিপীড়িত জনগণ তাঁদের গণতান্ত্রিক অধিকার ও শোষণহনীন সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে পরিচালিত ভারতের মাওবাদীদের গণযুদ্ধ দমনে ভারতের শাসক শ্রেণী যে হারে দমন অভিযান পরিচালনা করে আসছে। সেই অত্যাচার-নির্যাতনের বিরুদ্ধে চিঠি লেখকরা কোন প্রতিবাদ করেছেন কি?
তাঁরা অস্বীকার করবেন কি ভারতের গণমাধ্যম সূত্রে আমাদের জানা তথ্যের মধ্যে মাওবাদী বিপ্লবীদের নেতৃত্বে পরিচালিত ভারতীয় জনগণের গণযুদ্ধকে নিশ্চিহ্ন করতে অপরাশেন গ্রিনহান্ট ও সালুয়া জুডুম নামের নির্মূল অভিযান ব্যর্থ হয়েছে। অবশেষে হিন্দুত্ববাদী মোদি সরকারের ফ্যাসিস্ট শাসনকে টিকিয়ে রাখতে ‘অপারেশন কাঘার’ নামে সামরিক অভিযান চালাচ্ছেন। এবং ২০২৭ সালের মধ্যে মাওবাদী মুক্ত (?) না-কি বৃহৎ ভারত রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্ন বাস্তবায়নে মোদি সরকার একটি ব্লুপ্রিন্ট তৈরীর খবর শুনেছেন বা জেনেছেন কি? এ নিয়ে শোষিত-শাসিত ভারতের জনগণের আকাঙ্খা পূরণে শ্রেণী দৃষ্টিকোণ থেকে শাসক শ্রেনীর বিরোধীতা না করলেও ‘জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবি ন্যায়সঙ্গত’ একটুকু বলেছেন কি বা জনগণ পক্ষে প্রতিবাদ জানিয়েছেন কি? আশা করবো ভারতীয় গণমাধ্যমসহ বাংলাদেশের গণমাধ্যমে চিঠিটির মূল বিষয় জানলাম। তেমনটা জানানোর আহ্বান থাকলো মাত্র। কেননা, বাংলাদেশের জনগণের ভারতের জনগণকে বন্ধু ভেবেই চলছেন।
