Sat. Jul 12th, 2025
জ্বালানি তেল মিলছে না বর্ধিত দামেওছবি : স্বপন চৌধুরী

স্বপন চৌধুরী: জ্বালানি তেল মিলছে না বর্ধিত দামেও । রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার শুকুরেরহাটে অবস্থিত মেসার্স মন্ডল ফিলিং স্টেশনে গ্রাহকদের প্রতি ৫ লিটার অকটেনে ১ লিটার ২৬০ মিলি কম দিচ্ছিল। বিএসটিআই (বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন) ও উপজেলা প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে ২৬ ফেব্রুয়ারি পরিচালিত মোবাইল কোর্টে ওজন ও পরিমাপ মানদণ্ড আইন, ২০১৮ অনুযায়ী ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। একই দিনে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয় ওই উপজেলার মোসলেম বাজারে অবস্থিত মেসার্স রওশন ফিলিং স্টেশনে। প্রতিষ্ঠানটি প্রতি ৫ লিটার পেট্রোলে ৫৭০ মিলিলিটার এবং অকটেনে ১২০ মিলিলিটার কম দিচ্ছিল।

প্রতি ৫ লিটার অকটেনে ১৮০ মিলিলিটার এবং ডিজেলে ১০০ মিলিলিটার কম পাওয়ায় ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয় রশিদপুরে মেসার্স হাসনা ফিলিং স্টেশনে। এসময় বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ত্রুটিপূর্ণ সকল ইউনিট বন্ধ রাখার নির্দেশ প্রদান করেন। উক্ত অভিযানে বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পালন করেন মিঠাপুকুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিকাশ চন্দ্র বর্মন। প্রসিকিউটর হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএসটিআই রংপুর বিভাগীয় কার্যালয়ের ফিল্ড অফিসার (সিএম) খন্দকার জামিনুর রহমান ও পরিদর্শক (মেট্রোলজি) আলমাস মিয়া।

রংপুর বিভাগে আট জেলার পেট্রোল পাম্পগুলোতে জ্বালানি তেল পরিমাপে কম দেওয়ার প্রবণতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিএসটিআই’র অভিযানসহ ভ্রাম্যমান আদালত করেও পাম্প মালিকদের এই প্রবণতা রোধ করা সম্ভব হচ্ছেনা। এতে ভোক্তারা প্রতিবছর কয়েক লাখ লিটার জ্বালানি তেল ওজনে কম পাচ্ছেন। এছাড়া ভেজাল ও নিম্নমানের জ্বালানি তেল সরবরাহের কারণে দ্রুত বিকল হচ্ছে স্বপ্নের গাড়ি।

আরও পড়ুন- সয়াবিন তেলে অবৈধ কারখানায় অভিযান ও গ্রেফতার

অনুসন্ধানে জানা যায়, রংপুর বিভাগে মুলত পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা মেট্রোলিয়াম কোম্পানি জ¦ালানি তেল সরবরাহ করে। রংপুরসহ বিভাগের গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, লালমনিরহাট, দিনাজপুর, পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও জেলার উপজেলা সদরসহ হাট-বাজার ও গুরুত্বপুর্ণ স্থানগুলোতে জ্বালানি তেল সরবরাহের জন্য ফিলিং স্টেশন রয়েছে প্রায় ৪০০টি। চাহিদা অনুযায়ী এই বিভাগে গড়ে প্রতিদিন পাম্পগুলোতে প্রায় এক কোটি ৪০ লাখ লিটার ডিজেল, ২৮ লাখ লিটার পেট্রোল এবং ৫ লাখ লিটার অকটেন বিক্রি হয়। অভিযোগ রয়েছে, জ্বালানি তেল ব্যবসায়ীরা বিশেষ কায়দায় তাদের প্রায় প্রতিটি পেট্রোল পাম্পের মাধ্যমে ওজনে কম দিচ্ছেন। বিএসটিআই’র অভিযানের তথ্যানুযায়ী প্রতি ১০ লিটার ডিজেলে ২৫ মিলিলিটার, পেট্রোলে ৩০ মিলিলিটার এবং অকটেনে ৪৫ মিলিলিটার কম দেওয়া হচ্ছে। এভাবে প্রতিদিন কয়েক হাজার লিটার তেল কম দেওয়া হচ্ছে ভোক্তাদের। সঠিক দাম দিয়েও নির্দিষ্ট পরিমান তেল পাচ্ছেন না তারা। এছাড়া ওজনে কম দেওয়ার পাশাপাশি নিম্নমানের ভেজাল তেল বিক্রি করায় যানবাহনগুলোর ইঞ্জিন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

ফিলিং স্টেশনগুলো সূত্রে জানা যায়, সর্বশেষ প্রতি লিটার জ্বালানি তেলে ১ টাকা বাড়িয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। ১ ফেব্রুযারি থেকে কার্যকর হওয়া বর্ধিত দাম অনুযায়ী প্রতি লিটার ডিজেল ১০৫ টাকা, পেট্রোল ১২২ টাকা ও অকটেন ১২৬ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ভোক্তারা জানান, এমনিতে জ্বালানি বর্ধিত দামের অজুহাতে পণ্যের দামও বৃদ্ধি পেয়েছে কয়েকগুণ। এছাড়া কৃষিখাতে সেচ কার্যক্রমসহ গাড়ি চালানো কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। তার ওপর ওজনে কম দেওয়ার প্রবণতার পাশাপাশি নিম্নমানের ভেজাল তেল সরবরাহে অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে তাদের। রংপুর নগরীর দর্শনা এলাকার এসএম খলিল বাবু বলেন, ‘একর পর এক পাম্প বদল করেও কোন লাভ হচ্ছে না। ইদানিং প্রায় সবগুলো পাম্পেই ওজনে তেল কম দেওয়া হচ্ছে।’ নীলকণ্ঠ এলাকার রেজাউল করিম জীবনসহ একাধিক ভোক্তা জানান, জ্বালানি তেলের দাম সাধারণের সাধ্যের বাইরে হওয়ায় অনেকে গাড়ি চালানো ছেড়েই দিয়েছেন। বেশি দামে তেল কিনতে গিয়েও ওজনে ঠকতে হচ্ছে। এর পরেও নিম্নমানের ভেজাল তেল সরবরাহ করায় দ্রুত বিকল হয়ে পড়ছে গাড়ির ইঞ্জিন। ওজনে কমসহ ভেজাল তেল সরবরাহ প্রতিরোধে কঠোর পদক্ষেপ দাবি করেছেন তারা। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ডিলার্স ডিস্ট্রিবিউটর্স এজেন্ট ও পেট্রেল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন রংপুর শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াজ শহিদ শোভন বলেন, বিষয়টি আপত্তিকর, এমনটি হবার কথা নয়। পাম্পগুলোতে নিম্নমানের ভেজাল তেল সরবরাহ করার সুযোগ নেই। একেক সময় একেক ধরণের তেল আসে। তাছাড়া পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা মেট্রোলিয়াম কর্তৃপক্ষ বিষয়টি তদারকি করেন। তবে উপজেলা পর্যায়ে গ্রামাঞ্চলের কিছু ফিলিং স্টেশনে অসাধু ব্যবসায়ী পরিমাপে হয়তো কম দেওয়ার চেষ্টা করেন। যা ক্ষমার অযোগ্য বলেও জানান তিনি।

আরও পড়ুন- পানি সংকট : দেশের সর্ববৃহৎ সেচ প্রকল্পে

এদিকে জ্বালানি তেলের ওজনে কম এবং গুণগত মান নিয়ন্ত্রণে ফিলিং স্টেশনগুলোর বিরুদ্ধে অভিযানে নেমেছে বিএসটিআই। সূত্র জানায়, গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৮ মাসে  মোবাইল কোর্ট ও সার্ভিল্যান্স অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে ২১টি। এসময় অভিযান চালিয়ে ৪১টি ডিসপেন্সিং ইউনিট বন্ধ করাসহ ৩ লাখ ৩৫ হাজার টাকা জরিমানা আদায় ও নিয়মিত মামলা দায়ের করা হয়েছে ১টি। শর্ত পূরণ সাপেক্ষে তারা সেগুলো ফের চালু করতে পারবেন। বিএসটিআই রংপুর বিভাগীয় কার্যালয়ের ফিল্ড অফিসার (সিএম) খন্দকার জামিনুর রহমান বলেন, ফিলিং স্টেশনগুলোর বিরুদ্ধে পরিমাপে তেল দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। অসাধু পাম্প মালিকরা তাদের ডিসপেন্সিং ইউনিট থেকে বিশেষ কায়দায় জ্বালানি তেল পরিমাপে কম দিয়ে ভোক্তাদের ঠকাচ্ছেন। প্রায় পাম্পগুলোতে ওজনে কম দেওয়া হচ্ছে। উপপরিচালক (পদার্থ) ও বিভাগীয় অফিসপ্রধান মুবিন-উল-ইসলাম বলেন, জ্বালানি তেলে ভেজাল ও ওজনে কম দেওয়া রোধে বিএসটিআই’র অভিযান চলমান রয়েছে। জনস্বার্থে এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *