মৌসুমী শঙ্কর ঋতা : মাছ কাটা-ই যাদের পেশা। রংপুর সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন রংপুর সিটি বাজারে বেশ কিছু মহিলা সারাদিন মাছ কেটে চলেন। এক মুহূর্ত ও যেন ফুসরত নেই তাদের। বর্তমানে ব্যস্ততম সময়ে অনেকেই বাজার থেকে মাছ বিশেষ করে ছোট মাছগুলো কেটে নিয়ে যায় সময় বাঁচানোর জন্য এবং বাড়িতে মাছ কাটার ঝামেলা এড়ানোর জন্য। বেশ কয়েক বছর থেকেই রংপুর সিটি বাজারে বেশ ক’জন নারী ছোট মাছ কেজি প্রতি ২০ টাকা এবং একটু বড় মাছ কেজি প্রতি ১০ টাকায় কাটার কাজ শুরু করেন। বর্তমানে এই হার কিছুটা বেড়েছে। ছোট মাছ কাটতে দিতে হয় কেজি প্রতি ৩০ থেকে ৪০ টাকা এবং একটু বড় মাছ কেজি প্রতি ২০ টাকা। অবশ্য বড় মাছ ক্রেতারা মাছ বিক্রেতার কাছ থেকেই কেটে নেয়। বর্তমানে মাছ কাটার মহিলার সংখ্যা ও অনেক বেড়েছে। মাছ কাটা-ই যেন তাদের পেশা। মাছ কাটা মাছ কাটা বেশ ক’জন মহিলার সাথে দেলোয়ার হোসেন নামে একজন পুরুষ ও তার স্ত্রী সহ মাছ কাটেন। দেলোয়ার হোসেনের বয়স ৬৫। বাড়ি রংপুরের সিগারেট কোম্পানি। পাঁচ ছয় বছর আগে তিনি মাছ কাটার কাজ শুরু করেন। দেলোয়ার হোসেন জানান আগে তিনি রংপুর শহরের অলিগলি ঘুরেঘুরে শিশি-বোতল কাগজ কিনতেন কিন্তু শরীর অসুস্থ হওয়ায় সেই কাজ করা সম্ভব হয়নি। তাই স্ত্রীর সাথে তিনি এই কাজ শুরু করেন। চার মেয়ে তিন ছেলের সংসারে একটু সচ্ছলতার আশায় অসুস্থ শরীর নিয়েও মাছ কাটতে আসেন। সকাল সাড়ে সাতটা থেকে আটটার মধ্যে তিনি বাজারে আসেন এবং দুপুর দুই টার দিকে বাড়ি যান। শরীর ভালো না তাই বেশি কাজ করতে পারেন না। এক দেরশো টাকা যা আয় হয় তাই নিয়েই বাড়ি যান দেলোয়ার হোসেন। তার স্ত্রী মরিয়ম বেগম, বয়স ৫৫। চুপচাপ স্বভাবের মরিয়ম বেগম ২০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত আয় করেন। এজন্য অবশ্য মরিয়ম বেগম কে অনেক পরিশ্রম করতে হয়। তিনি বাড়ি যান বিকেল চার টা থেকে পাঁচটার মধ্যে। মরিয়ম বেগম বলেন সারাদিন মাছ কাটতে অনেক কষ্ট হয়। যে টাকা আয় হয় তা থেকে মাছ কাটার জায়গার ভাড়া, ময়লা ফেলা, লেট্রিন ব্যবহার এবং বাড়ি থেকে বাজার পর্যন্ত যাওয়া আসার ভাড়া সব মিলে অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। রংপুর শহরের মিস্ত্রি পাড়ার বাসিন্দা নাসিমা বেগম, বয়স ৫০। বেশ ক’বছর মাছ কাটার কাজ করেন রংপুর সিটি বাজারে। দিনে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা, হঠাৎ দুএক দিন ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকাও আয় হয়। নাসিমা বেগম বলেন প্রতিদিন আমাদের জায়গার ভাড়া ৬০ টাকা করে দিতে হয়। আগের মত আয় নেই বলে ও তিনি আক্ষেপ করেন। এই অভাবের সংসারে এক নাতনি কলেজে পড়ে। নাতনি র পড়ার চালাতেও হিমসিম খেতে হয় নাসিমা বেগমের। কথা হলো ৬৫ বছর বয়সের রাবেয়া বেওয়ার সাথে। বাড়ি রংপুর শহরের এরশাদ নগরে।এই বয়সেও তাকে বাজারে মাছ কাটতে আসতে হয় একটু বাড়তি রোজগারের আশায়। ছয় জনের সংসারে মেয়ে জামাই অটোরিকশা চালালেও তা দিয়ে সংসার চলেনা বলে জানান রাবেয়া বেওয়া। এই বয়সে সারাদিন বসে মাছ কাটতে খুব কষ্ট হলেও টাকাটা হাতে পেলে মুখে হাসি ফোটে রাবেয়া বেওয়ার। দেলোয়ার হোসেন, মরিয়ম বেগম, নাসিমা বেগম, রাবেয়া বেওয়ার মত আরো অনেকেই মাছ কাটার কাজ করেন রংপুর সিটি বাজারে। রোদ, বৃষ্টি, ঝড় সব কিছুকে উপেক্ষা করে তারা মাছ কেটে চলেন সারাদিন।
আরও পড়ুন- রংপুর মেডিকেল কলেজে লাগামছাড়া অনিয়ম-দুর্নীতিতে রোগীরা পর্যদুস্ত
