Mon. Jul 14th, 2025
সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার নিষিদ্ধসোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার নিষিদ্ধ

গণপ্রহরী ডেস্ক : সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার নিষিদ্ধ। অস্ট্রেলিয়া একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ নিয়েছে। দেশটি ১৬ বছরের কম বয়সী শিশুদের সামাজিক নেটওয়ার্ক ব্যবহার নিষিদ্ধ করে একটি আইন পাস করেছে। এটি সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে কঠোর বয়স সীমা। এটি ইনস্টাগ্রাম, ফেসবুক (মেটা) এবং টিকটকের মতো সামাজিক নেটওয়ার্কগুলিকে প্রভাবিত করে। এই আইন ভঙ্গ করলে তাদের ভারী জরিমানা দিতে হবে। রয়টার্সের এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মগুলোকে ১৬ বছরের নিচে শিশুদের ‘সোশ্যাল মিডিয়া মিনিমাম এজ বিল’ নামের আইন অনুযায়ী তাদের প্লাটফর্মে অ্যাকাউন্ট খুলতে বা লগ হন না করতে দিতে বাধ্য করা হয়েছে। আর এই আইন লঙ্ঘনের জন্য সর্বোচ্চ জরিমানা হতে পারে ৪৯.৫ মিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলার যা ৩২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পর্যন্ত।

আইনটি পাশ হয়ে গেলে, অস্ট্রেলিয়া বিশ্বের অন্যান্য দেশের জন্য একটি নতুন মানদণ্ড হয়ে উঠবে। ইতিমধ্যে ফ্রান্স এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কিছু দেশ সোশ্যাল মিডিয়ার জন্য বয়স সীমাবদ্ধতার প্রস্তাব করেছে। তবে অস্ট্রেলিয়ার ব্যবস্থা আরও কঠোর।

আইনটি পাশ হওয়ার পর, অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ বলেছেন: “আমরা আমাদের শিশুদের নিরাপত্তা এবং মানসিক স্বাস্থ্যকে খুব গুরুত্বের সাথে নিয়েছি। এই এজ বিল শিশুদের জন্য একটি নিরাপদ সুষ্ঠ ও স্বাস্থ্যকর অনলাইন পরিবেশ তৈরি করবে।”

তবে এই পদক্ষেপ নিয়ে কিছু বিতর্ক রয়েছে। কোন কোন বিশেষজ্ঞ বলছেন যে এটি শিশুদের সামাজিক যোগাযোগ তৈরী করার সুযোগ সীমিত করতে পারে এবং এমনকি তাদের গোপনীয়তা রক্ষার সম্পর্কেও প্রশ্ন তুলতে পারে। গোপনীয়তা রক্ষাকারী প্রতিষ্ঠান এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলি আইন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা বিশ্বাস করে যে আইনটি শিশুদের অনলাইন স্বাধীনতাকে সীমিত করতে পারে এবং ডিজিটাল ক্ষেত্রে নজরদারি বাড়াতে পারে।

তবে অনেক অভিভাবক আইনের পক্ষে কথা বলেছেন। ২০১৯ সালের আগস্ট মাসে সাইবার বুলিং এর কারণে একটি শিশু আত্মহত্যা করার পরে, বাবা-মা সোশ্যাল মিডিয়ার উপর আরও নিয়ন্ত্রণের আহ্বান জানান। অনেক অস্ট্রেলিয়ান পরিবার বিশ্বাস করে যে এই ধরনের আইন শিশুদের নিরাপদ রাখে এবং তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করে।

পরীক্ষামূলকভাবে আগামী বছরের জানুয়ারিতে আইনটি কার্যকর হবে। পরবর্তীতে পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা হবে। সফলভাবে বাস্তবায়িত হলে আইনটি বৈশ্বিক মডেলে পরিণত হবে। পরবর্তীতে এ ধরনের আইন তৈরীতে অন্যান্য দেশও উৎসাহিত হতে পারে।

কোন কোন বিশেষজ্ঞ মনে করেন যে, একদিকে আইনটি শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে যেমন সাহায্য করবে তেমনি অন্যদিকে ক্ষতিকর হতে পারে সোশ্যাল মিডিয়ায় অংশগ্রহণকারী বিশেষ কিছু কমিউনিটির জন্য। এই আইনটি বাধা হতে পারে, বিশেষ করে এলজিবিটিকিউআইএ+ সম্প্রদায়ের সদস্যদের জন্য যারা অনলাইন যোগাযোগের উপর খুব বেশি নির্ভর করে।

শিশুদের জন্য একটি নিরাপদ অনলাইন পরিবেশ তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং দৃঢ় আইনি কাঠামো অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকে দেখাচ্ছে ৷ তবে এই পদক্ষেপ গ্রহনের ফলাফল কেমন হতে পারে এখনও তা নিশ্চিত নয়। কারণ এটি বিশ্বের প্রযুক্তি জায়ান্টগুলোদের জন্য একটি গুরুতর চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *