মোঃ আব্দুর রাজ্জাক বকুল : বিজয় দিবসের প্রেক্ষাপট চব্বিশ তার ধারাবহিকতা। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাঙালি জাতির ইতিহাসে এক গৌরবময় অবিস্মরনীয় দিন। এ দিনে বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে। লাখ লাখ শহীদের রক্ত ও ত্যাগের বিনিময়ে আমরা পেয়ে যাই আমাদের কাঙ্খিত স্বাধীনতা।
১৯৪৭ সালের আগষ্ট মাসে ভারত বিভাজন ও পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর হতে পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠী কর্তৃক তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিদের সর্বক্ষেত্রে শোষন, নিপীড়ন ও বঞ্চনার শিকার হতে হতো। পূর্ব পাকিস্তান এবং পশ্চিম পাকিস্তান- এই দুই দূরবর্তী অঞ্চল নিয়ে পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠিত হলেও এই দুই অঞ্চলের মানুষের মধ্যে ভাষাগত, নৃ-গোষ্ঠী এবং আর্থসামাজিক দৃষ্টি কোণ থেকে ব্যাপক পার্থক্য বিদ্যমান ছিল। বাঙালিরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠী কর্তৃক বাঙালির প্রাণের ভাষা বাংলাকে অবজ্ঞা করে উর্দুকে রাষ্ট্র ভাষা ও বাঙালিদের ভাষা হিসেবে চাপিয়ে দিতে চেয়েছিল। ফলে শুরু হয় আন্দোলন।
১৯৫২ সালে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবীতে মিছিল করতে গিয়ে সালাম, বরকতসহ অনেকে শহীদ হন। আন্দোলনের গতি পেতে থাকে। গণজোয়ার সৃষ্টি হয়। ফলে ১৯৬৯ সালে সফল গণ অভ্যত্থানে বাধ্য হয়ে স্বৈরাচার আইয়ুব খানের পতন ঘটে। এর পর সামরিক আইনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসে ইয়াহিয়া খান। তীব্র আন্দোলনের মুখে ১৯৭০ সালে ঘোষনা করা হয় সাধারণ নির্বাচন। নির্বাচনে বাঙালিরা জয় লাভ করলেও ক্ষমতা হস্তান্তরে শুরু হয় নীল নকশা। আসে ২৫ মার্চের ডয়ান কালোরাত।
পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বর্বর ভাবে ঝপিয়ে পড়ে ঘুমন্ত মানুষকে নির্বিচারে গুলি করতে থাকে। অসংখ্য মানুষকে হত্যা করে। এর পর শুরু হয় ছাত্র, শ্রমিক, জনতার সশস্ত্র প্রতিরোধ ও লড়াই। এই প্রতিরোধ ও নড়াই জনযুদ্ধে রুপ লাভ করেন। রুখে দাড়িয়েছিল জন্মাদ বাহিনীর নারকীয় তান্ডবের বিরুদ্ধে। ফলে চলতে থাকে যুদ্ধ। দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর ১৯৭১ এর ১৬ ডিসেম্বর আসে সোনালী দিন। বাঙালি জাতি স্বাধীনতা লাভ করে। অর্জন করে একটি মানচিত্র, একটি পতাকা।
স্বাধীনতা পরবর্তী সরকারগুলো বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের মূলনীতি গুলির প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে সাম্রজ্যবাদ, আধিপত্যবাদ, সামন্তবাদ ও আমলা মুৎসুদ্দি পুঁজি বাদীদের আশীর্বাদে দেশ পরিচালনা করতে থাকে। ফলে দেশে তৈরী হয় চরম অস্থিরতা, দুঃর্ভিক্ষ ও মহামারী। দেশের সরকার চলতে থাকে আধিপত্য শক্তির ইশিরা ইঙ্গিতে গণতন্ত্র নির্বাসিত হয়ে একনায়কতন্ত্র তথা স্বৈরতন্ত্রের আবির্ভাব ঘটতে থাকে। এর পর বহু চুড়াই উতরাই পেরিয়ে ৯০ এর ছাত্র জনতা অভ্যত্থানে এরশাদ সরকারের পতন ঘটে। তৈরী হয় তিন জোটের রূপ রেখা।
চব্বিশ
পরবর্তী কালে তিন জোটের রুপরেখা তিন সতীনের ঘরে পরিণত হয়েছিল। অবশেষে সাম্প্রতিক পতিত সরকার স্বৈরতান্ত্রিক রাষ্ট্রযন্ত্রের জুতায় নিজেদের পা ঢুকিয়ে দিয়ে ক্ষমতার বিলাসিতা উপভোগ করেছে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রাতিষ্ঠানিকী করণ তো দুরের কথা যেখানে যতটুকু গণতন্ত্রের ছিটেফোঁটা ছিল তার ফ্যাসিবাদী রুপান্তর ঘটিয়েছিল। ফলে দেশে দেখা দেয় মহাদুর্নীতির মহাবিপদ সংকেত।
দেশের এ পরিস্থিতিতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে সরকারী চাকরীতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা সংরক্ষণের বিরুদ্ধে এবং মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ প্রাপ্তির জন্য মৌক্তিক আন্দোলন করছিল। এতে যোগ দিয়েছিল প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও। এসেছে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরাও। সবাই বৈষম্য বিরোধী। আন্দোলনের এক পর্যায়ে আমজনতাও যোগ দেয়। যৌক্তিক এ আন্দোলনকে সরকার প্রধান পাত্তা না দিয়ে বল প্রয়োগের মাধ্যমে দমনে মরিয়া হয়ে উঠে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও আমজনতার উপর পুলিশ নির্বাচারে গুলি বর্ষন করে।
চব্বিশ
এতে শহীদ হন রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদসহ প্রায় ২০০০ জন এবং আহত হন প্রায় ৩৪ হাজারেরও বেশি। চক্ষু অন্ধসহ অনেকে পঙ্গুত্ব বরণ করেন। আন্দোলনে দিশেহারা হয়ে পতিত সরকার প্রধান ৫ আগষ্ট পালাতে বাধ্য হন। পৃথিবীর বহু দেশে সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন হয়। কিন্তু চব্বিশের ছাত্র, শ্রমিক ও আমজনতার ঐতিহাসিক অভ্যত্থান ছিল নিরস্ত্র। মোটা দাগে সাতচল্লিশ, একাত্তর ও নব্বইয়ের অর্জন ও বঞ্চনার চূড়ার বিন্দু হিসেবে হাজির হয়েছে চব্বিশ। এখানেই একাত্তর আর চব্বিশের সম্পর্ক তথা ঐতিহাসিক যোগসাজশ। ইতিহালো রাখা কিতা
