গণপ্রহরী ডেস্ক: নির্বাচন হবে চার্টারের ভিত্তিতেই। সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনকে গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের মাধ্যমে আমরা যা প্রণয়ন করতে চাই তা হলো জনগণের অভ্যুত্থানের জন্য একটি চার্টার তৈরি করা। এটা নতুন বাংলাদেশের চার্টার, ঐকমত্যের ভিত্তিতেই এমন চার্টার তৈরি হবে। নির্বাচন হবে, সব হবে; কিন্তু চার্টার রয়ে যাবে। আগামী নির্বাচনও হবে এই চার্টারের ভিত্তিতে। ১৫ জানুয়ারি বুধবার সকালে তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে কমিশনের সদস্যরা এসব প্রতিবেদন হস্তান্তর করেন। প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদন হস্তান্তর করেন নির্বাচনী সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুদার, দুদক সংস্কার কমিশনের প্রধান ইফতেখারুজ্জামান, পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন এবং সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান আলী রিয়াজ। এ সময় সংশ্লিষ্ট কমিশনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
কমিশনের সদস্যদের উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এটা শুধু আনুষ্ঠানিকতা নয়, একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত এটা। বিভিন্ন কমিটি গঠিত হয়, প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়, আনুষ্ঠানিকতা হয়; কিন্তু সেগুলোর চেয়ে বহু উর্ধ্বে আজকের আনুষ্ঠানিকতা। আজকের ঘটনা ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকবে। কারণ এই কমিশনগুলোর সৃষ্টি হয়েছে ইতিহাসের প্রবাহ থেকেই। একটি বিধ্বস্ত জাতি হঠাৎ মাথা উঁচু করে জেগে উঠেছে। সেখান থেকেই ইতিহাস সৃষ্টি হয়, আজকের ঘটনা সেই ইতিহাসেরই একটি অংশ। এটি একটি বিচ্ছিন্ন প্রতিবেদন নয়।
আমরা সেই ইতিহাসকে ধারণ করতে পারব কি না বা পারছি কি না এবং এগিয়ে নিয়ে যেতে পারছি কিনা- সেই ইতিহাসের প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে পারছি কিনা- সেটাই আজ আমাদের প্রশ্ন। আমাদের আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে যে আমরা পারব। আমরা আজ যে রিপোর্ট হাতে নিয়েছি তা অবশ্যই আমাদের দেশের জন্য একটি মহৎ অনুশীলন। এটা কেউ অস্বীকার করবে না। কিন্তু আমরা এর মধ্যে মানবিক চেতনাকে ধারণ করতে পেরেছি কিনা তা আমার প্রশ্ন।
তিনি বলেন, আমরা কমিশনের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশ গঠনের স্বপ্ন নিয়ে কাঠামো তৈরির কাজ দিয়েছি। এখনো স্বপ্ন আছে, সেই স্বপ্নের রূপরেখা তুলে ধরতে হবে। তাই এখানেই শেষ নয়, একটি অধ্যায়ের শুরু। অভ্যুত্থানের পর স্বপ্ন ও তার যাত্রা শুরু হয়। এর একটি বড় অংশ এই প্রতিবেদনে প্রতিফলিত হবে, আমরা কী করতে চাই। এর মাধ্যমে সবার সঙ্গে আমরা আলোচনা শুরু করব। এতে সবার মন সায় দিচ্ছে কিনা; অঙ্গীকারগুলো পূরণ হচ্ছে কিনা- আলোচনার এই রসদ আপনারাই তৈরী করে দিয়েছেন।
ড. ইউনূস বলেন, এটা ঐক্যমত্যের প্রচেষ্টা, সবাই একমত হবেন। তবে কিছু বিষয়ে একদম একমত হবেন না। নইলে আমরা কী স্বপ্ন দেখলাম? আমরা নিজেরা স্বপ্ন দেখেছি, আর সেই স্বপ্নে মানুষের অংশ নেই, তা তো হতে পারে না। সেই স্বপ্নকে আমরা এখানে কতটুকু নিয়ে এসেছি তার জন্যই এই আলোচনা। এটা বাইরে থেকে আরোপিত কিছু নয়, কিন্তু এমন কিছু যা ভেতর থেকে উদ্ভূত হয়।
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, আগামীতে ঐক্যমত্য প্রতিষ্ঠায় কমিশনের সদস্যরা আলোচনায় নেতৃত্ব দেবেন। তিনি বলেন, আপনারাই যেহেতু তাদের হয়ে স্বপ্ন দেখেছেন, তাদের স্বপ্ন কীভাবে আপনাদের সাথে এক হবে। এর মাধ্যমে আমরা যা তৈরি করতে চাই তা হলো জনগণের অভ্যুত্থানের চার্টার তৈরি করা। এটা নতুন বাংলাদেশের চার্টার, ঐকমত্যের ভিত্তিতেই এমন সনদ তৈরি হবে। নির্বাচন হবে, সব হবে;। এই সনদ ইতিহাসের অংশ হিসেবে আমাদের জাতীয় অঙ্গীকার। এটা কোনো দলীয় অঙ্গীকার নয়।
আমরা আশা করি সব দল এই চার্টারে সাইন আপ করবে। এটি বাংলাদেশি, বাঙালি জাতির একটি সনদ, যা আমরা এগিয়ে নিয়ে যাব। আমি যত দ্রুত সম্ভব এটি বাস্তবায়ন চালিয়ে যাব। আগামী নির্বাচনও হবে এই সনদের ভিত্তিতে। সেটাও ঐকমত্যের যেন সরকার হয়—আমরা যে চার্টারকে সমর্থন করি। যাই হোক না কেন, হাত থেকে যেন এটা ছেড়ে না দেই।। নইলে এই স্বপ্নের ধারাবাহিকতা থাকবে কী করে? আমরা সেই স্বপ্নের ধারাবাহিকতা চাই, তা বাস্তবায়িত হোক।
তিনি বলেন, নির্বাচনও হবে এই সনদের একটি অংশ, এটি হবে সর্বসম্মত নির্বাচন। অন্যথায় সনদ হারিয়ে যাবে। তাই এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
