Sat. Jul 12th, 2025
সন্তান বিক্রির আগে মা-ছেলে বিক্রির খবর (!)সন্তান বিক্রির আগে মা-ছেলে বিক্রির খবর

 গণপ্রহরী ডেস্ক : সন্তান বিক্রির আগে মা-ছেলে বিক্রির খবর (!) স্থান পেয়েছে আমাদের দেশের গণমাধ্যমে। এ নিয়েই সম্প্রতি গণপ্রহরী ডেস্কের আলোচনা-সমালোচনার একটু ঝড়ো বাতাস। ঝড়ো বাতাস বলছে, আমাদের দেশের মায়েরা সন্তানের জন্য জীবন দিয়েও সন্তানকে বাঁচিয়ে রাখার বা বাঁচানোর চেষ্টা করেন। ফলে সচরাচার সন্তান বিক্রির ঘটনা ঘটে না বটে।

কিন্তু মুক্তিযুদ্ধোত্তর স্বাধীন বাংলাদেশের ৫৩ বছরে সন্তান বিক্রির ঘটনার খবর বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে। মায়ের জন্য সন্তান বিক্রি হৃদয়বিদারক হলেও তা হয়েছে এটা নিয়ে বিতর্কের কিছু নেই। তবে এমন ঘটনা উদ্বৃত করতে পারলে ভাল হতো। কিন্তু ২৮ মণ ধানের  দামে মা-ছেলে দুজনই বিক্রির ঘটনা ঘটলেও প্রমান থাকা বাঞ্চনীয়। এতে ঝড় থেমে যায়, প্রমাণ পেলেই প্রকাশের অপেক্ষা।

‘সন্তান বিক্রির আগে মা-ছেলে বিক্রির খবর (!) শীর্ষক খবর নিয়ে আলোচনার ঝড়ো বাতাস থেমে গেলেও, মা-ছেলে বিক্রির প্রমাণের আগে সন্তান বিক্রির মূলে কি কারণ থাকে বা ছিল, তার যৌক্তিকতা দু’চার লাইনে হলেও তুলে ধরা দরকার। কেননা, যে মায়েরা তার সন্তানকে বাঁচাতে জীবন দিয়ে থাকেন-সেই মায়েদের সন্তান বিক্রির খবরতো তা-ই। হ্যাঁ, তা বটে। সহজ- সরল কথায় বলা যায়, যে নিষ্ঠুর ক্ষুধা-দারিদ্রতা, শোষণ-শাসন, অত্যাচার নির্যাতন, জুলুম-বেবিচারের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ। এবং লাখো লাখো প্রাণের বিনিময়ে মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন ও বাংলাদেশ নামের স্বাধীন ভূখণ্ড লাভ।

সেই দেশে অদ্যাবধি মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য অর্জিত না হওয়ায়ই আজকের এই আলোচনা। এমনকি অনেক নারী মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি পাওয়াতো দূরের কথা, বরং সমালোচিত হয়ে থাকেন। এইতো জুলাই-আগষ্টের গণঅভ্যূত্থানে বীরত্বের ভূমিকা পালনকারী নারীরাও যথাযথ মূল্যায়িত হচ্ছে না। গণপ্রহরী মনে করে, এ দেশে কিছু মানুষ (আগের তুলনায় অনেকটা বেশী) শোষণমুক্ত বাঙালি সমাজপতি-বুর্জোয়া শাসক হলেও শাসিত-শোষিত মানুষরা আকাশ-পাতাল বৈষম্যের শিকার। একইভাবে পুরুষ শাসিত সমাজে মা  জাতির ‘নারীরা’ শুধু সামাজিক-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নিদারুন বৈষম্যের শিকার। ফলে পুরুষের সমঅধিকার থেকে বঞ্চিত এবং ঘরে-বাইরে সমানতালে-উপেক্ষিত, অবহেলিত ও নির্যাতিত হন বেশী।

মূলত: বাংলাদেশের তেপ্পান্ন বছরে নিরাপদে স্বাধীনভাবে কাজ করার জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না থাকায়, মায়েরা নিদারুন অভাবের তাড়নায় সন্তান লালন-পালনে অপারগতায় এবং নিষ্ঠুর ক্ষুধার যন্ত্রনায় ও খাদ্যাভাবে মায়ের বুকের দুধ শুকিয়ে যাওয়ায় ক্ষুধার্ত সন্তানের আর্তচীৎকারে বা মায়ের নারিছেঁড়া ধন-‘সন্তানে’র কান্না সইতে না পেরে সন্তান বিক্রি করেছেন ও করতে বাধ্য হন। এছাড়া সামাজিকভাবে আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে বিয়ে না হলেও নিজেদের ইচ্ছায় বিয়ে করার পর সন্তানের জন্ম হওয়ার ক্ষেত্রে সমস্ত দোষ চাপে নারীর উপর। তখন পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে বাধ্য হয়েও সন্তান বিক্রি করেন বা কোথায়ও ফেলে রেখে আসেন ইত্যাদি। এসব কারণেও সন্তান বিক্রি করতে হয়।

‘সন্তান বিক্রির আগে মা-ছেলে বিক্রির খবর (!) প্রাসঙ্গিক প্রতিবেদনের সমাপ্তি টানতে চেষ্টা করা হবে। যাতে এ নিয়ে গণপ্রহরী ডেস্কে ঝড়ো বাতাস প্রবেশ করতে না পারে। প্রাপ্ত পুরনো পত্রিকা কাটিংয়ের তথ্যমতে, সাদিয়া মাহজাবীন সিলেট থেকে ঘুরে লিখেছেন, সিলেট সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের মহাফোজখানায় আঠারো শতকের প্রথম দিকে, মানুষ বিক্রির চারটি দলিল রয়েছে। তিনি সে সবের মধ্যে একটি দলিলের একটি পৃষ্ঠার ছবি তুলে প্রকাশ করেছেন। যা স্পষ্টভাবে বুঝা যায় না। মহাফোজখানা থেকে বালাম বইয়ে লিপিবদ্ধ করা সেই সময়ের তিনটি দলিলও তিনি সংগ্রহ করেছেন বলে উল্লেখ করেন। ১৮০৬ সালে দলিলটি সম্পন্ন করা হয়। ১৮০৭ খ্রিষ্টাব্দে ১২১৩ বাংলা সালের ৫ ফালগুন বিক্রিত গনাইয়ের বেচাকেনার দলিল নথিবদ্ধ হওয়ার একদিন আগে ২৮ মন ধানের দামে বিক্রি হয়েছিল মা আর ছেলে। সনাই দাষ তীর্ত্তের স্বীকারোক্তিমতে মা ভূবিদাসী নিজেকে বিক্রি করতে বাধ্য হন। এভাবেই প্রায় সোয়া দুই’শ বছর আগের দাস বেচা-কেনা করা হতো। তাই স্বীকার্য যে, সন্তান বিক্রির আগে মা-ছেলে বিক্রির খবর (!) গণামধ্যমে স্থান পেয়ে আসছে।

পরিশেষে উল্লেখ্য, সকল ধর্মবর্ণের ও নৃগোষ্ঠি-উপজাতি নারী-পুরুষের অংশগ্রহনের একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে রক্তার্জিত এই দেশে এবং চব্বিশের রক্তার্জিত সফল গণঅভ্যূত্থানের মধ্য দিয়ে ক্ষমতাসীন অন্তর্বর্তী সরকারের সময়কালে যেমন সন্তান বিক্রি কাম্য নয়; তেমনি নারী পুরুষের মধ্যে উত্তরাধিকার সত্ত্ব ভোগের ক্ষেত্রে বৈষম্যও কাম্য নয়। বরং নারী মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় কার্যকর সংষ্কার কাজ সম্পন্ন করে নারী-পুরুষ সকলের জন্য কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা কাম্য। নারী-পুরুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই পাড়ে দেশের সার্বিক উন্নয়নকে তরান্তিত করতে। তাই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ কাম্য। এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলসমূহ কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন বলেও আশাবাদ থাকছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *