Sun. Jul 13th, 2025
চিকিৎসা সেবায় জাতীয় নাগরিক কমিটির ৭ সংস্কার প্রস্তাবজাতীয় নাগরিক কমিটি। ছবি: সংগৃহীত

গণপ্রহরী ডেস্ক: চিকিৎসা সেবায় জাতীয় নাগরিক কমিটির ৭ সংষ্কার প্রস্তাব। কারণ হিসেবে গণপ্রহরী মনে করে, বাংলাদেশের মানুষের চিকিৎসা সেবার নিশ্চয়তা নেই। নির্দ্বিধায় বলা যায় চিকিৎসা সেবা এমনই বিপর্যস্ত যা উদ্বেগজনক ও দু:খজনকও। যদিও চিকিৎসা সেবা পাওয়া মানুষের মৌলিক অধিকার। এই অধিকার নিশ্চিত করতে পথে সংস্কার প্রস্তাব অনেকটা সহায়ক হবে মনে করেই জাতীয় নাগরিক কমিটি মৌলিক অধিকার আদায়ে অবিচল থাকবে আশাবাদ প্রকাশ করছে।

এ পরিস্থিতিতে জাতীয় নাগরিক কমিটি আধুনিক, সমৃদ্ধ ও সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে সংষ্কার প্রস্তাব কমিশনের কাছে পেশ করেছেন। স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশনের কাছে আনুষ্ঠানিক সংগঠনটি তা মঙ্গলবার ৪ ফেব্রুয়ারী জমা দিয়েছেন। যা বিবেচনার দাবি রাখেহেতু অন্তর্বর্তী সরকারের আশু হস্তক্ষেপ কাম্য।

চিকিৎসা সেবায় জাতীয় নাগরিক কমিটির ৭ সংস্কার প্রস্তাব পেশের ক্ষেত্রে করনীয় পদক্ষেপের  জন্য ৭টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে অগ্রাধিকার দিয়ে লিখিতভাবে স্বাস্থ্যখাত সংস্কারের প্রস্তাবাবলী  স্বাস্থ্যখাত  সংস্কার কমিশনে পেশ করেন। সাত প্রস্তাবের মধ্যে বয়েছে- (১) জরুরি স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়ন ও আধুনিক অ্যাম্বুলেন্স সিস্টেম; (২) একটি কার্যকর রেফারেল সিস্টেম চালু করা; (৩) স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য উন্নত কর্মপরিবেশ ও ন্যায্য পরিশ্রমিক; (৪) সারাদেশে ডিজিটাল স্বাস্থ্য ব্যবস্থা (EHR) চালু করা; (৫) চিকিৎসার জন্য প্রমাণভিত্তিক জাতীয় গাইড লাইন; (৬) একটি জাতীয় বায়োব্যাংক স্থাপন; (৭) সরকারি উদ্যোগে নির্ভরযোগ্য স্বাস্থ্য তথ্য প্লাটফরম করা।

চিকিৎসা সেবায় জাতীয় নাগরিক কমিটির ৭ সংস্কার প্রস্তাব’ শীর্ষক সংস্কার প্রস্তাব পেশের বিষয়টি সংবাদ সম্মেলনে নাগরিক কমিটির যুগ্ম-আহ্বায়ক ডা. তাসনিম জারা বলেছেন, বাংলাদেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা এমন হবে, যেখানে একজন কৃষক আর একজন মন্ত্রী একই মানের চিকিৎসা পাবেন। আমরা ছোটখাটো পরিবর্তনের কথা বলছি না, আমরা এমন এক সংস্কারের কথা বলছি যা, স্বাস্থ্যসেবায় আমূল পরিবর্তন আনবে-চিকিৎসার খরচ কমিয়ে দিবে, পুরো ব্যবস্থাকে স্বয়ংসম্পন্ন করে তুলবে ও স্বাস্থ্য সেবায় বৈষম্য থাকবে না।

জাতীয় নাগরিক কমিটির সংস্কার প্রস্তাবের যৌক্তিকা বিবেচনার জন্য ৭ দফার প্রতিটি দফা প্রেক্ষিতে উল্লেখিত বক্তব্য হুবহু ক্রমানুসারে (কথায়) পাঠকের অবগতির তুলে জন্য ধরা হলোঃ-

এক. বাংলাদেশে জরুরি চিকিৎসা ব্যবস্থা বিপর্যস্ত। অনেক রোগী সময়মতো অ্যাম্বুলেন্স পান না, হাসপাতাল পৌঁছানোর আগেই অনেকে মারা যান। এই প্রস্তাবনায় একটি আধুনিক জরুরি সেবা ব্যবস্থা গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছে। অ্যাম্বুলেন্সে প্রশিক্ষিত প্যারামেডিক থাকবে, যাতে হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই প্রাথমিক চিকিৎসা নিশ্চিত করা যায়। এখনকার মতো শুধু রোগী পরিবহনের পরিবর্তে, অ্যাম্বুলেন্সেই জীবনরক্ষাকারী চিকিৎসা শুরু হবে, যা মৃত্যুহার কমাতে সাহায্য করবে।

দুই. বাংলাদেশের বড় হাসপাতালগুলো রোগীর অতিরিক্ত চাপে বিপর্যস্ত, কারণ অনেক রোগী উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের হাসপাতাল বাদ দিয়ে সরাসরি ঢাকায় চলে আসেন। এর ফলে যারা সত্যিকারের জটিল রোগী, তারা প্রয়োজনীয় সময়ে চিকিৎসা পান না। এই প্রস্তাবনায় একটি কার্যকর রেফারেল সিস্টেম চালুর সুপারিশ করা হয়েছে, যাতে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক হাসপাতালগুলোকে শক্তিশালী করা হয় এবং রোগীদের সঠিক সময়ে সঠিক জায়গায় চিকিৎসা নিশ্চিত করা যায়।

তিন. বাংলাদেশের চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা দীর্ঘ সময় কাজ করেন, কিন্তু তাদের বেতন কম, পদোন্নতির সুযোগ অপ্রতুল, এবং অনেক সময় সহিংসতার শিকার হন। এই প্রস্তাবনায় ন্যায্য বেতন, কর্মজীবনের অগ্রগতি এবং নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার সুপারিশ করা হয়েছে। বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায় চিকিৎসক ও নার্সদের কাজ করতে উৎসাহিত করতে অতিরিক্ত সুযোগ-সুবিধা ও আর্থিক প্রণোদনার ব্যবস্থা করার কথা বলা হয়েছে। নারীদের জন্য কাজের সুবিধাজনক পরিবেশ নিশ্চিত করতে হাসপাতালে ডে-কেয়ার সুবিধাসহ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নীতির সুপারিশ করা হয়েছে।

চার. বর্তমানে একজন রোগী যখন এক হাসপাতাল থেকে আরেকটিতে যান, তখন তার আগের চিকিৎসার তথ্য নতুন চিকিৎসক জানেন না। ফলে বারবার পরীক্ষা করতে হয়, সময় নষ্ট হয়, আর চিকিৎসায় ভুলের ঝুঁকি বাড়ে। এই সমস্যা দূর করতে একটি জাতীয় ইলেকট্রনিক স্বাস্থ্য রেকর্ড ব্যবস্থা চালু করার প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রতিটি রোগীর একটি ডিজিটাল স্বাস্থ্যপরিচয় থাকবে, যা দেশের সকল হাসপাতালে ব্যবহার করা যাবে, চিকিৎসার গতি বাড়াবে ও খরচ কমাবে। পাশাপশি চিকিৎসা সংক্রান্ত কোনো অনিয়ম ঘটলে তা দ্রুত চিহ্নিত ও সংশোধন করা সম্ভব হবে।

পাঁচ. বাংলাদেশে চিকিৎসা পদ্ধতিতে কোনো নির্দিষ্ট মানদণ্ড নেই, ফলে একজন রোগী একই রোগের জন্য দুই জায়গায় দুই ধরনের চিকিৎসা পান। এই সমস্যার সমাধানে একটি জাতীয় চিকিৎসা গাইডলাইন চালু করা , যাতে দেশের সব চিকিৎসক একটি নির্দিষ্ট বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ করেন। চিকিৎসক ও নার্সদের জন্য এই গাইডলাইন অনুযায়ী প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করা হবে।

ছয়. বাংলাদেশে গবেষণার সুযোগ সীমিত, যার ফলে নতুন ওষুধ ও উন্নত চিকিৎসার পদ্ধতির উন্নয়ন সম্ভব হয় না। একটি জাতীয় বায়োব্যাংক স্থাপন করা হলে ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ ও সংক্রামক রোগের গবেষণা সহজ হবে, যা ভবিষ্যতে আরও উন্নত চিকিৎসা নিয়ে আসবে। এতে বাংলাদেশ বিদেশের ওপর নির্ভর না করে নিজের চিকিৎসা গবেষণা এগিয়ে নিতে পারবে।

সাত. অসুস্থ হলে অনেকেই গুগল বা সামাজিক মাধ্যমে চিকিৎসা পরামর্শ খোঁজেন, যেখানে ভুয়া তথ্যের ছড়াছড়ি। এর ফলে অনেকে সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা পান না। এই সমস্যা সমাধানে একটি সরকারি উদ্যোগে পরিচালিত, নির্ভরযোগ্য ডিজিটাল স্বাস্থ্য প্ল্যাটফর্ম চালু করতে সুপারিশ করা হয়েছে। এখানে সহজ ভাষায় বিজ্ঞানভিত্তিক স্বাস্থ্য তথ্য ও চিকিৎসার জন্য পরামর্শ দেওয়া হবে, যাতে সাধারণ মানুষ বুঝতে পারেন কখন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া প্রয়োজন, এবং কোন চিকিৎসা বিজ্ঞানসম্মত ও নিরাপদ। এই প্ল্যাটফর্মটি সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গেও সংযুক্ত থাকবে, যাতে রোগীরা সঠিক সময়ে সঠিক জায়গায় চিকিৎসা নিতে পারেন।

ডা. তাসনিম জারা বলেন, আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা আর অপেক্ষা করতে পারবে না। রোগীরা কষ্টে, ডাক্তাররা হতাশ, আর দেশের সম্পদ অকারণে নষ্ট হচ্ছে। এই প্রস্তাবনা সমাধানের কিছু বাস্তবসম্মত উপায় দেখিয়েছে। এখন সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব নীতিনির্ধারকদের।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, স্বাস্থ্যখাত সংষ্কার কমিশন মানবিক কারনে চিকিৎসা সেবা যেহেতু মানুষের জীবন- মরণের সাথে সম্পৃক্ত, সেহেতু কমিশনের জরুরী কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ কাম্য।

পরিশেষেগণপ্রহরী, জাতীয় নাগরিক কমিটির উত্থাপিত দাবির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেই উল্লেখ করছে-গণপ্রহরী বিভিন্ন সময় বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসার দূরাবস্থা ও সাধারন রোগীদের হয়রানি বিষয়ক প্রতিবেদনসহ সম্পাদকীয় কলামেও চিকিৎসা মানুষের মৌলিক অধিকার হিসেবে তা নিশ্চিত করার আহবান ও আবেদন জানিয়ে আসছে।

আরও পড়ুন- চিকিৎসার নিরাপত্তা নেই সাধারন মানুষের

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *