Sat. Jul 12th, 2025
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গারো আদিবাসীরা কতটা বৈষম্যমুক্তছবি: সংগৃহীত। গারো আদিবাসী

গণপ্রহরী ডেস্ক: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গারো আদিবাসীরা কতটা বৈষম্যমুক্ত? প্রশ্নটা স্বাভাবিক কারনেই আলোচনায়। সকল ধর্ম-বর্ণ-জাতি-উপজাতির মানুষের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ অংশগ্রহনের মধ্য দিয়ে, একাত্তরে সংঘটিত মহান মুক্তিযুদ্ধে, রক্তার্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের ৫৩ বছরে গারো আদিবাসীসহ উপজাতিরা শুধু নয়, বাংলাদেশী বাঙ্গালী জনগণই আকাশ পাতাল বৈষম্যের শিকার। মহান মুক্তিযুদ্ধে শুধু লাখ লাখ মানুষের প্রাণের ও লাখো মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে এবং বীর জনগণের দামাল সন্তান বীর মুক্তিয়োদ্ধাদের জীবন মরণ মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জিত হলেও মুক্তিযুেেদ্ধর লক্ষ্যের শোষণ মুক্ত সমাজ ও জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি।

কিন্তু মানুষের মুক্তির দর্শন হিসেবে খ্যাত মার্কসবাদ-লেনিনবাদ ভিত্তিতে কৃষি বিপ্লবের মধ্য দিয়ে শোষণমুক্ত-বৈষম্যমুক্ত সমাজের সমাজতান্ত্রিক চীন গড়ার চীন বিপ্লবের মহানায়ক চেয়ারম্যান মাত্তসেতুং বলেছেন, কোন ত্যাগই বৃথা যায় না’ অর্থাৎ যেতে পারে না। তদসত্বেও মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য অর্জনে সাম্য, ন্যায় বিচার, মৌলিক অধিকারসহ মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় গণতান্ত্রিক অধিকারে নিশ্চিত করার জন্য একাধিকবার রক্ত দিতে হয়েছে।

পক্ষান্তরে, সাম্রাজ্যবাদ হিসেবে আত্মপ্রকাশে সচেষ্ট সম্প্রসারণবাদী ভারতের উগ্রহিন্দুত্ববাদী মোদি নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকারের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভূমিকায়; শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়মী লীগের জোট সরকার, স্বৈরশাসনের মাধ্যমে সর্বদিক থেকে শোষণ-শাসন, অত্যাচার-নির্যতন, লুটপাট-অর্থপাচার ও বেবিচারের  কর্তৃত্ববাদী-ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েম করলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে চব্বিশের জুলাই আগষ্টের রক্তার্জিত সফল গণঅভ্যূত্থানে স্বৈরাচারের পতন ঘটে। তাতে গারো আদিবাসীরা কতটা বৈষম্যমুক্ত তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গারো আদিবাসীরা কতটা বৈষম্য মুক্ত’ তা নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা আবশ্যক মনে করছি। তার আগে গণপ্রহরী প্রধান সম্পাদক বীরমুক্তিযোদ্ধা এসকে মজিদ মুকুলের বিশ্লেষণমুলক বক্তব্যের অংশ বিশেষ তুলে ধরছি; বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ সহ লেখক রাজনীতিকদের অবগতির জন্য।

তিনি একাধিকবার লিখেছেন, কোটা সংস্কারে সংখ্যাগরিষ্ঠ সংখ্যক মানুষের তেমন কোন স্বার্থ নেই ও ছিল না। কেননা তাঁরা মূলত: শোষিত-শাসিত, মৌলিক অধিকার সহ প্রায় সর্বক্ষেত্রে বঞ্চিত। বৈষম্যমুক্ত নামকরণে এবং স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের পতনের ডাকে বিভিন্ন শ্রেনী পেশার ব্যাপক জনগণ অংশ নিয়েছেন। সেই আন্দোলনেও গারো আদিবাসী-উপজাতিরাও অংশ নিয়েছেন, সমর্থন করেছেন। সেদিক থেকে, আবারো প্রশ্ন আসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ‘গারো আদিবাসীরা কতটা বৈষম্যমুক্ত’। সে নিয়েই আলোচনা।

আলোচনার শুরুতে উল্লেখ্য, জাতিগত পরিচয়ে বাংলাদেশের সকল ধর্ম-বর্ণ-জাতি-উপজাতি ও আদিবাসীদের জাতিগত পরিচয় একটাই ‘আমরা সবাই বাংলাদেশী’। ভারতের বাঙ্গালি প্রধান পশ্চিম বাংলার নামকরণ ‘বাংলা’ হচ্ছে কারনে নয়, যেহেতু আমরা রক্তার্জিত  বাংলাদেশে জন্মগ্রহন করেছি। সেহেতু আমাদের পরিচয় আমরা ‘বাংলাদেশী’। এবং ‘বৈষম্যবিরোদী ছাত্র আন্দোলনে গারোরা কতটা বৈষম্যমুক্ত’ হয়েছেন বা আমরা সকলেই শোষনমুক্ত বৈষম্যমুক্ত সমাজের বাংলাদেশী হবো কি-না, সে বিষয়ক আলোচনায় গণপ্রহরী সম্পাদকের পুরোনো ফাইলর ‘ছেড়াফাটা’ কাগজে ‘কমল চিসিম’ নামে ‘গারো আদিবাসীদের না বলা কথা’ শিরোনামের লেখাটি তুলে ধরছি।

বাংলাদেশের প্রায় ৪৫টি আদিবাসীর বসবাস। গারো তাদের মধ্যে অন্যতম। এ দেশের ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা ও সিলেট জেলার অধিকাংশ এলাকায় এদের বসবাস। গারোরা নিজেদের ‘আচিক মান্দে’ নামে পরিচয় দিতেই বেশি ভালোবাসে। ‘আচিক’ শব্দের আক্ষরিক অর্থ ‘পাহাড়’ আর ‘মান্দে’ শব্দের অর্থ মানুষ। পাহাড়ের মানুষ হিসেবে নিজেদের পরিচয় দিতেই গারোরা গর্ব অনুভব করে। গারো আদিবাসীদের বেশিরভাগই কৃষি নির্ভর। তবে শিক্ষার হার বাড়তে থাকায় অনেকে এনজিও এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছে।

বর্তমান গারোদের শিক্ষার হার আশানুরূপ। কিন্ত তা কতটুকু? জাতির উন্নয়নে এই শিক্ষা কতটুকু কাজে লাগবে। শুধু অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন হলেই যদি শিক্ষিত হিসেবে ধরা হয় তা হলে সেই ব্যক্তি সমাজের কতটুকু উন্নয়ন সাধন করতে পারবে? একটি জাতির উন্নতি নির্ভর করে তাঁর শিক্ষা ব্যবস্থার উপর। অথচ এ দেশের গারো আদিবাসীরা এই মৌলিক অধিকারের ক্ষেত্রে বরাবরই বৈষম্যের শিকার।

সরকার আসে, প্রতিশ্রুতি দেয় অথচ তার কোনো বাস্তবায়ন হয় না। যার কারণে গারো এলাকাগুলোতে সরকারি স্কুল-কলেজের মাধ্যমেই শিক্ষা জীবন শুরু হয়। আবার অনেকের পিতা-মাতার পক্ষে ছেলেমেয়েদের বেসরকারি স্কুল-কলেজ কিংবা শহরে রেখে পড়াশোনা করানো খুবই কষ্টকর। যার কারণে একজন সম্ভাবনাময় মেধাবী ছাত্র অকালেই ঝরে যায়। শিক্ষা ক্ষেত্রে যেখানে প্রতিবন্ধকতা রয়ে গেছে সেখানে উন্নতি হবে কোথা থেকে? এমন প্রশ্ন জন্ম দেয়ার ভাবনায় লেখার শিরোনাম হয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গারোরা কতটা বৈষম্যমুক্ত।

গারো আদিবাসীদের প্রতি বৈষম্য, তা আমরা সহজে পর্যবেক্ষণ করলেই দেখতে পাই। গারোদের না বলা কথাগুলো শোনবে কে? নাকি নিজেরা নিজেদের মধ্যে সেগুলো ভাগাভাগী করে নেবে। সরকারের পক্ষ থেকে কি কোনো পদক্ষেপ নেয়া হবে না? গারোদের সবচেয়ে বড় সমস্যা ভূমি সমস্যা। অতীতে যা কিছু ছিল, সবকিছু হারিয়ে গারোরা আজ নিঃস্ব। বর্তমানে অল্প যা কিছু আছে তা নিয়েও চলছে ষড়যন্ত্র।

এলাকার প্রভাবশালীরা সব সময় সরলমনা অসহায় গারোদের ভূমি থেকে উচ্ছেদের পাঁয়তারা করে আসছে। এবং বৈষম্যমূলক সমাজ ব্যবস্থার শিকার হয়ে বলছেন, যারা যুগ যুগ ধরে বসবাস করে আসছে তাদের কোথায় বাসস্থান হবে? এক শ্রেণীর প্রভাবশালী স্বার্থাম্বেষী মহলের খপ্পরে গারোরা সব হারাচ্ছে। তাদের ঠুকে দেয়া মামলার বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা গারোদের নেই। তাই অনেক ক্ষেত্রে মিথ্যা মামলা নিয়ে জেলে যেতে হয়। আবার মামলায় লড়তে গিয়ে অনেকে বিক্রি করে জমিজমা। যার ফলশ্রুতিতে স্ত্রী-কন্যাদের নিয়ে পথে বসতে হয়। বাপ-দাদাদের রেখে যাওয়া সম্পত্তি চলে যায়, অন্যের হাতে। আর এমনিভাবে নির্যাতিত, শোষিত হচ্ছে এ দেশের গারো আদিবাসীরা। আর কতদিন বৈষম্যের শিকার হবে এ দেশের গারোরা। এর কি কোনো শেষ নেই।

একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধেও শোষণমুক্ত-বৈষম্যমুক্ত সমাজের দেশ হলো না। চব্বিশের রক্তার্জিত গণঅভ্যূত্থানে স্বৈরাচারের পতনের পরও কি হবে না। গারো আদিবাসী বা আদিবাসী-উপজাতিদের নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে ভাবতে হবে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গারোরা কতটা বৈষম্যমুক্ত, তা নিয়েও ভাবতে হবে। এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিবেন বলে গারো আদিবাসীদের আশাবাদ।

By SK Mazid Mukul

প্রধান সম্পাদক, গণপ্রহরী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *