Sat. Jul 12th, 2025
আমাদের কথা

আমাদের নিয়মিত সম্পাদকীয় কলাম-আমাদের কথা’ র শুরুতেই বাংলাদেশের ‘সংবিধান’ দেশের জনগণের মধ্যে আলোচনার বিষয় বস্তুতে পরিণত হওয়ায় গর্ববোধ করছে গণপ্রহরী পরিবার। সেই সাথে যাদের সৌজন্যে ‘সংবিধান আলোচনায়, তাঁদের সকলকে গণপ্রহরী পরিবার পক্ষে অভিনন্দন। কেও হয়তো বলতে পারেন, গর্ববোধ বা অভিনন্দন কেন। ‘সংবিধান’ ও সংবিধান বিষয়ক আলোচনা, যেভাবে সংবিধান বিশেষজ্ঞ এবং সংবিধানে দেশ ও জনগণকে রক্ষায় কি বিধান রয়েছে, তা পুঙ্খানুপুঙ্খানভাবে যারা অবগত, তাদের মতো জ্ঞানগর্ব বক্তব্যে বা আলোচনার মতো জবাব হবে না। কারণ, গণপ্রহরী দেশের সকল উৎপাদন ক্ষেত্রের উৎপাদক জনগণের মুখপাত্র হিসেবে ভূমিকা পালন করে আসছে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়। সেহেতু উৎপাদক জনগণের সোজাসাপ্টা ভাষায় উত্তর হতে হবে। যাতে সাধারণ জ্ঞানেই বুঝতে পারেন উৎপাদক জনগণ। সেহেতু সোজাসাপ্টা কথায় বলতে হয়, সংবিধান প্রণয়নের পর খসড়া কপি নাগরিকদের সরবরাহ করে জনমত গ্রহন করা সমূচিত ছিল। একই ভাবে সংবিধানের কপি প্রত্যেক নাগরিককে সরবরাহ করাও সমূচিত ছিল। এটা তাদের নাগরিক অধিকার।

জানিনা বিশেষজ্ঞ ও বিজ্ঞজনরা কি বলবেন। তাঁরা যাই বলুন, গণপ্রহরীর দৃষ্টিতে ৫৩ বছর আগেই সংবিধানের খসড়া কপি প্রেক্ষিতে জনমত দেওয়ার কথা এবং নাগরিকদের সংবিধানের খসড়া কপি পাওয়ার কথা। তা না পেলেও আলোচনায় আসায় অভিনন্দন জানাচ্ছি। আর লাখো লাখো শহীদের রক্ত আর লাখো মাবোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে এবং বীরমুক্তিযোদ্ধাদের জীবন বাজির মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন এই বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্যও ৫৩ বছরে অর্জিত না হলেও, রক্তার্জিত দেশের সংবিধান, জনগণের আলোচনায় স্থান পাওয়ায় গর্ববোধ করার কারণ।

পাঠক জানেন, সংবিধান বিষযক আলোচনায় সকল নাগরিককে সংবিধান-এর কপি দিয়ে, সংবিধানে কি লেখা আছে তাতে তাঁদের  আকাঙ্খা পুরনের নিশ্চয়তা আছে কি-না, তা জানার ব্যবস্থার কথা আলোচনায় আসেনি। আলোচনার মধ্যে রয়েছে- সংবিধান বাতিল, সংবিধান সংশোধন এবং ইচ্ছা করলেই সংবিধান বদলানো যায় না-এই তিন বিষয়টি প্রধান। মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্যের শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার নিশ্চয়তা যে নেই, তা বুঝতে সাধারণ নাগরিকের কষ্ট হওয়ার কথা নয়। যদি তা নিশ্চিত হতো, তাহলে আজকে সংবিধান বিষয়ক আলোচনা সামনে আসতো না। এমনকি জনগনের হৃদয়ে লালিত আকাঙ্খার মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য অর্জন এবং ২০২৪ এ বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলন নামের ব্যানারে পরিচালিত আন্দোলনে অংশগ্রহকারী দেশের আপামর মানুষÑসোজাসাপ্টা বুঝেছিলেন, শোষণমুক্ত সমাজের অনুরূপই ‘বৈষম্যহীন বা বৈষম্যমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা’র লক্ষ্যে গণতান্ত্রিক সরকার গঠণ করা হবে। ছাত্র-জনতার এটা ছিল সরল বিশ্বাস। সেই বিশ্বাস থেকে শহীদ আবু সাঈদের মতো গুলির সামনে আগাতে আগাতে গণঅভূত্থান সফল করেছেন ছাত্র-জনতা। যে গণঅভ্যূথান করার কথা সংবিধানে লেখা নেই।

কিন্তু স্বৈরাচার মুক্ত বা তা ভেবে-চিন্তে নির্বাচন নিয়ে কেও ব্যস্ত হয়েছেন, কেওবা নির্বাচনের জন্য সংবিধান দ্রুত সংস্কার শেষ করার তাগিদ দিচ্ছেন। পক্ষান্তরে পতিত সৈরাচার ও তার দোসররা সংবিধানে স্বীকৃত আধিকার ভিত্তিতে ক্ষমতায় ফিরতে ব্যস্ত হয়ে উঠেছে। এবং ভারতের মদদে তৎপরতাÑঅপতৎপরতা ও ষড়যন্ত্র করে চলছে। মানুষ এ নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন না। কারণ, মধ্যবিত্ত শ্রেনির ও স্বল্প আয়ের মানুষ, পকেটে অর্থ নেই। সেহেতু বাজারে পণ্য সরবরাহ থাকলেও কিনতে না পারায়, সংসার পরিচালনায় দিশেহারা। যদিও একটা দেশের মূল ভিত্তি হচ্ছে সংবিধান। এবং সেই সংবিধান দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষাসহ নাগরিকদের রক্ষাকবচ। তাই আমাদের পর্যবেক্ষন প্রেক্ষিতে সংবিধানে স্বীকৃত ‘রাষ্ট্রের মালিক জনগণ’। যে মালিকানা স্বত্বে গণঅভ্যূত্থানের মাধ্যমে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার। সেই সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রতি আমাদের কথা’ র মাধ্যমে আবেদন জানাচ্ছি, যত দ্রুত সম্ভব অপির্ত দায়িত্বে সংস্কার শেষ করে নির্বাচন দেয়ার ব্যবস্থা করবেন। নয়তো জাতীয় ঐক্যে ফাউল ধরতে পারে। এটা আমাদের আশা ও বিশ্বাস।

বিশ্বাসের মূলে রয়েছে, বিতর্কিত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিলের নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহন করে তার খসড়া প্রধান উপদেষ্টা অনুমোদন করেছেন। অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের রাজনৈতিক প্রজ্ঞার ঘাটতি থাকলেও ক্ষমতা গ্রহণের তিন মাসের মাধ্য দেশ বিদেশে বহুল সমালোচিত অর্থাৎ বিতর্কিত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিলের সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছেন। পাশাপাশি, সাইবার নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা মামলাগুলো (মুক্তমত প্রকাশের মামলা) প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সেই সাথে এসব মামলায় কেউ গ্রেফতার থাকলে তিনি আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাৎক্ষনিকভাবে মুক্তি পাবেন বলেও জানানো হয়েছে। গণপ্রহরীর পক্ষ থেকে আমাদের কথা’ র মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনুস এবং আইন উপদেষ্টাসহ সকল উপদেষ্টাকে সাইবার নিরাপত্তা আইন বিষয়ক সিদ্ধান্তের জন্য স্বাগত জানাই এবং অভিনন্দন জানাই। সেই সাথে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, শ্রমিকদের মজুরী সমস্যা সমাধানে ও আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এবং সংস্কার কাজ তরান্বিত করতে আন্দোলনকারী রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিদের সাথে ঘন ঘন পরামর্শ করে, কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ থাকছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *