Sat. Jul 12th, 2025
ইলেকট্রিক চেয়ার হচ্ছে আইয়ামে জাহেলিয়া রূপের আওয়ামীযুগেরআয়নাঘর পরিদর্শনকালে ইলেকট্রিক চেয়ার দেখছেন প্রধান উপদেষ্টা। ছবি : সংগৃহীত

গণপ্রহরী ডেস্ক : ইলেকট্রিক চেয়ার হচ্ছে আইয়ামে জাহেলিয়ার ন্যায় আওয়ামীযুগের। যে আওয়ামীযুগ অর্থাৎ আওয়ামীলীগ শাসনামলে বিরোধী মতের রাজনৈতিক-সামাজিক-আন্দোলনকারী এবং লেখক-সাংবাদিক-বুদ্ধিজীবিদের গ্রেফতার করে, গুম করে পরিকল্পিতভাবে হত্যার উদ্দেশ্যে ঠাণ্ডা মাথায় বন্দিকে ইলেকট্রিক শক দেয়া হতো। শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামীলীগের প্রায় ১৬ বছর সময়কালের কর্তৃত্ববাদী ফ্যাসিষ্ট শাসনামলকে, জনগণের সোজাসাপ্টা কথায় ‘আওয়ামীযুগ’ বলা হয়। আইয়ামে জাহেলিয়া রূপের আওয়ামীযুগে ‘বন্দিদের’ ঠাণ্ডা মাথায় পরিকল্পিতভাবে হত্যা-গুম করার জন্য বিশেষ ব্যবস্থাপনায় নির্মিত-‘আয়নাঘর’ খ্যাত ঘরে, যে ইলেকট্রিক চেয়ারে বসিয়ে ‘শক’ দেওয়া হতো, আয়নাঘরের সেই চেয়ারকেই বলা হচ্ছে ‘ইলেকট্রিক চেয়ার’।

বিশ্ববাসী অবগত যে, বাংলাদেশের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যূত্থানের মধ্য দিয়ে আওয়ামীযুগের অবসান ঘটে। আর স্বৈরাচারের পতনের পর; ক্ষমতাসীন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনুস, ১২ ফেব্রুয়ারি বুধবার দেশ বিদেশের গণমাধ্যমের প্রতিনিধি ও ভুক্তভোগীদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আয়নাঘর পরিদর্শনকালে ইলেকট্রিক চেয়ারটি অন্যান্য নির্যাতন প্রক্রিয়ার নিদর্শনের মধ্যে ইলেকট্রিক চেয়ার ব্যাপক আলোচনায় আসে। ইতিহাসে ইলেকট্রিক চেয়ারের স্বাক্ষ্য রয়েছে। সে কারণেই গুরুত্ব বিবেচনায় শিরোনামে স্থান পেয়েছে-‘ইলেকট্রিক চেয়ার হচ্ছে আইয়ামে জাহেলিয়ার রূপের আওয়ামীযুগের’।

বুধবারে, আয়নাঘর পরিদর্শনকালে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস তাঁর নেতৃত্বাধীন সরকারের ওপর জাতির অর্পিত দায়িত্বের ‘সংস্কার কাজে’র আওয়তায় গঠিত গুম কমিশনকে, আয়নাঘর আবিষ্কারের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি নতুন বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের অঙ্গীকার পূর্ণ ব্যক্ত করে বাংলাদেশের সকল অংশীদার পুলিশ, প্রসিকিউটর ও বিচারকদের প্রতি, সে লক্ষ্যে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন। জাতিসংঘের ওএইচসিএইচআর (মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার) অফিসের প্রকাশিত একটি প্রেক্ষিতে প্রধান উপদেষ্টা এসব কথা বলেছেন।

আওয়ামীলীগ শাসনামলকে ‘অন্ধকার যুগ’ খ্যাত আইয়ামে জাহেলিয়ার সঙ্গে তুলনা করে, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনুস বলেছেন, বলেছেন, সরকার সর্বত্র আইয়ামে জাহেলিয়া প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। ড. মুহাম্মদ ইউনুস আয়নাঘর ও সে সবের মধ্যে পাওয়া তথ্য প্রমাণ সিলগালা করে রাখা হবে; যা বিচারের জন্য ব্যবহৃত হবে উল্লেখ করে বলেছেন, গুম কমিশনের প্রতিবেদনে এই আয়নাঘরের ডকুমেন্টেশন স বাধ্যতামূলক করা হবে। একইসঙ্গে যারা এ ধরণের কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল তাদের বিচার করা হবে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বিনা কারণে জঙ্গি আখ্যায়িত করে মানুষকে তুলে এনে এসব টর্চার সেলে নির্যাতন করা হতো। এখন শুনি, সারা বাংলাদেশ জুড়েই আরো ৭০০-৮০০ আয়নাঘর আছে। আমার ধারণা ছিল শুধু এখানেই আছে। এগুলোর সংখ্যাও নিরূপন করা যায় না, কতটা জানা আছে, কতটা অজানা আছে।

আয়নাঘর পরিদর্শনকারী দলের সদস্যদের উদ্দেশ্যে অধ্যাপক ইউনুস বলেছেন, “আপনারা সবাই সঙ্গে ছিলেন, কাজেই আমার আর নতুন কর কিছু বলতে হবে না। আপনারা সবই দেখেছেন। এক কথায় যদি এর বর্ণনা দিতে হয় তবে বলতে হয় এক বীভৎস দৃশ্য। মানুষের মনুষ্যত্ববোধ বলে যেটা আছে সেটাকে বহু গভীরে নিয়ে গেছে নিশ্চিহ্ন করার জন্য। নৃশংষ প্রতিটি জিনিস। যতবারই শুনি অবিশ্বাস্য মনে হয়’’।

আলোচিত আয়নাঘরে বন্দি থাকা উপস্থিত ভুক্তভোগীদের ক’জনের সাথে প্রধান উপদেষ্টার কথা হয়েছে। শেখ হাসিনার সরকারের গুমের শিকার জামায়াতে ইসলামীর নেতা গোলাম আযমের ছেলে আব্দুল্লাহিল আমান আযমী এবং দলটির কেন্দ্রীয় নেতা ও ইসলামী ছাত্র শিবিবের প্রতিষ্ঠাতা মীর কাশেম আলীর ছেলে আহমেদ বিন কাশেম এ সময় তাদের সঙ্গে ছিলেন।

দুই জন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ এবং নাহিদ ইসলাম নিজেরাও এই আয়নাঘরে বন্দী ছিলেন এবং তারা ওই চিহ্নিত করেছেন বলে জানান।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রকাশিত প্রতিবেদন উদ্বৃত করে বলেছেন, হাসিনার শাসনামলে বাংলাদেশ আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও বিচার খাতে রেখে যাওয়া ‘কাঠামোতে ত্রুটি’ এমন ত্রুটিপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলো জনস্বার্থেই সংষ্কার গুরুত্বপূর্ণ বলে ড. ইউনুস উল্লেখ করেছেন।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ইউনুস বলেছেন, ‘আমি অন্তর্বর্তী সরকারে কর্মরত সকলের সঙ্গে এবং অন্যান্য লক্ষ লক্ষ বাংলাদেশির সঙ্গে, বাংলাদেশকে এমন একটি দেশে রূপান্তরিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যেখানে দেশের সকল মানুষ নিরাপত্তা ও মর্যাদার সাথে বসবাস করতে পারবে’।

প্রসঙ্গত, উল্লেখ্য প্রধান উপদেষ্টার সাথে পরিদর্শনকারী দলে থাকা ভারতীয় সাংবাদিক অর্ক দেব তার ফেসবুকে মন্তব্য করতে শেখ হাসিনাকে ফ্যাসিবাদের জননী উল্লেখ করে আয়নাঘরের ইলেকট্রিক চেয়ারে গুরুত্বপূর্ণ বন্দিদের শক দেওয়ার জন্য ব্যবহার করা হতো।

পরিশেষে উল্লেখ্য জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার অফিসের প্রতিবেদন প্রেক্ষিতে, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে জারি করা বিবৃতিতে বলা হয়েছে, জুলাই ও আগস্টে বাংলাদেশে হাসিনা শাসনের অবসানের ঘটনাবলীর পুঙ্খানুঙ্খ-স্বাধীন তদন্তের জন্য অন্তর্বর্তী সরকার জাতিসংঘের এ সংস্থাকে ধন্যবাদ জানিয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *