কবিতা। দেশী-বিদেশী শাসন-শোষণের জগদ্দল পাথর জনগণের ঘাড় থেকে সরাতে, মুক্তিকামী মানুষের মুক্তি অর্জনের গণতান্ত্রিক আন্দোলন সংগ্রামকে তরান্বিত করতে জনগণকে জাগ্রত করে ঝাঁপিয়ে পড়তে অনুপ্রাণিত করার অন্যতম এক মাধ্যম কবিতা। আমার ইচ্ছে ছিল কবি হবো, শিল্পী হবো। কিন্তু উনসত্তরের গণআন্দোলন আমার ইচ্ছাকে পরিবর্তন করে দেয়। আমার চেতনায় বার বার জেগে ওঠে সমাজ পরিবর্তনের আন্দোলনে আমি অংশ নিবো। সেখান থেকেই মুক্তিযুদ্ধ। আশা ছিল হয়তো শহীদ হবো, নয়তো শোষণমুক্ত সমাজের স্বাধীন দেশ হবে। আশা পূরণ হয়নি। সেই আপসোসকেই কবিতা আকারে প্রকাশ করেই একগুচ্ছ কবিতা লেখার চেষ্টা—-
আপসোস
আপসোস থেকে আমি
উনসত্তরের গণআন্দোলনে রংপুরে
আন্দোলনটাও হলো যেন ছিনতাই
উগ্রজাতীয়তা বাদীদের হাতে ।
আপসোস থেকে আমি
যুদ্ধের বাসনা নিয়ে
কৃষকেদের সাথে নিতে
রংপুর থেকে চরাঞ্চল রৌমারীতে।
জাগলো কৃষক জাগলো শ্রমিক
জাগলো সকল ছাত্রজনতা
সবার মুখেই এক কথা
বাঁচার জন্য যুদ্ধ চাই
যুদ্ধ করে বাঁচতে চাই।
ঢাকায় ঘোষিত হলো
স্বাধীন জনগণতান্ত্রিক পূর্ববাংলার কর্মসূচী
ভাসানীর অনুরাগীরা তবে
কর্মসূচী মেনেই আওয়াজ তুললো
আমরা চাই কৃষকরাজ-শ্রমিকরাজ
সবার কথারই এক জবাব-
যুদ্ধ ছাড়া মুক্তি নাই।।
আবারো আপসোস
আপসোস থেকে ছাত্র আন্দোলনে
আপসোস থেকে উনসত্তরের গণঅভ্যূত্থানে
আপসোস থেকেই মুক্তিযুদ্ধে।
আপসোস থেকে উপলব্ধি
বিশ্বাস ঘাতকতায় লক্ষ্য অর্জন বহুদূর।
আপসোস থেকে কলমহাতে যুদ্ধে
দেখেছি ফলাফলে জিতে গেলো আপসোস।
প্রাপ্তি আমার, আপসোসের পর আপসোস
তবে বিশ্বাস আজও
শ্রমিক-কৃষক, ছাত্র-জনতার আন্দোলন ছাড়া
মুক্তি আসবে না কখনই।
এও জানি দীর্ঘস্থায়ী শোষনÑশাসন ব্যবস্থা
আমুল পরিবর্তনই বিপ্লব
তার জন্য চাই আত্মত্যাগী বিপ্লবী সংগঠন
তবে দ্রুততার জন্য চাই ছাত্র আন্দোলন।
এবার বিশ্ব ইতিহাসের অধ্যায়ের
দুইহাজার চব্বিশ
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন নামে
ছাত্র আন্দোলন শুরুতেই
বুক বাধি বৈষম্যমুক্তির আশায়।
বিশ্বাস আমার বৈষম্য মুক্ত হলেই
হবে শোষণ মুক্ত সমাজ
মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য ছিল যা;
আন্দোলন দানা বাঁধে, আগাতে থাকে
আন্দোলনের জোয়ারে উৎফুল্ল হই,
মন চ্য়া শরীক হতে স্বপরিবারে
পারিনি নিজের অসুস্থ্যতাসহ পারিবারিক কারণে
বিজয় উদযাপনেও যেতে পারিনি বলে
জগদ্দল পাথরের মতো রয়েই গেল আপসোস
তবে ক্ষেত্র তৈরীতে বিন্দুসম ভূমিকা পালন,
যা করুনায় নয়, ভূমিকা বিবেচনায়
আন্দোলনের অংশীজনদের স্বীকৃতিতে
স্বস্তি পেতাম, শান্তি পেতাম
লক্ষ্য অর্জনে পাশে থেকে ভূমিকা পালনে।।
দৃষ্টি আকর্ষণ: কবি নই বলে/ অথবা কবিতা হয়নি বলে / প্রত্যাখান করো না/ নিজগুনে আগাগোরা পড়বে। আর যে কবিতা অনুকরণে/ আজকের এই কবিতা / সেটিও ছিল ছাত্রদেরই আন্দোলন ঘিরে/ তোমরাও অনেকে ছিলে / এটিও কিন্তু দেখবে পড়ে।)
আপসোস
[“আপসোস আমার/শারীরিক কারণে ছাত্রদের আন্দোলনে/শরীক হতে পারলাম না।
আপসোস আমার/কবি হতে পারিনি/ কবি হলে কবিদের মতো লিখতাম প্রতিবাদী কবিতা/ নয়তো কবিতায় আমার কথা/ কবিতার নাম দিতাম (এক) আলোর মশাল আর (দুই) আশার আলো/” অবশেষে লিখলামও কবিতা/ তোমরাই বলবে হয়েছে কি-না। ]
॥ এক ॥
আলোর মশাল
হে তরুন কিশোর-ছাত্রদল
তোমরা জ্বালিয়েছ আলোর মশাল
আমার মত, সাধারণ মানুষের সামনে
দিয়েছ নাড়া বিবেকের।
মশাল জ্বালিয়ে স্থির দাঁড়িয়ে নয়
ছাপিয়ে বেড়াচ্ছ রাজপথ সড়ক পথ
আমাদেরই জীবন রক্ষায়
নিরাপদ সড়কের দাবি নিয়ে।
মশাল হাতে চলছো এগিয়ে তোমরা
আমরা দুর্ভাগা, সচেতন দাবীদার
সাধারণ মানুষ দর্শকের ভূমিকায়
যেন প্রতিবন্ধী আমরা।
তোমরাই বলো তরুন প্রতিবাদী
আমরা পেরেছি কি তোমাদের পাশে দাঁড়াতে
পারিনি-(!)
পেরেছে কি তাঁরা
দেশ জাতি ও জনগণের জন্য
রাজনীতি করার দাবীদার যারা
তারাও না-!
তাইতো, মশাল আজ
তোমাদের হাতে
একাত্তরে ছিল আমাদের হাতে
তোমাদের চাওয়া পূরণ হবেই হবে।
মনে রেখো তবে-
ঘাতক বাসও নয়, ট্রাকও নয়
ঘাতক পঁচা সমাজ ব্যবস্থা
তাই সমাজ ব্যবস্থার বদল অপরিহার্য।
॥ দুই ॥
আশার আলো
আন্দোলন সংগ্রামের
ফসল যে দেশ
সে দেশে কেন
অন্যায় অনাচার।
মুক্তিযুদ্ধের ফসল
যে দেশে
সে দেশে কেন
ঘুষ দুর্নীতি বেবিচার।
যারা দেশের ভবিষ্যত
যাদের দুটি হাত উৎপাদনে
তারা কেন মরবে
গাড়ীর চাকায় পিষ্ট হয়ে।
রক্তে কেনা এই দেশে
ছাত্ররা কেন কোটা আন্দোলনে
কেন নিরাপদে ঘরে ফিরতে
শিশু-কিশোর ছাত্র প্রজন্ম
রাজপথের আন্দোলনে।
আমরা পেয়েছি পথ নতুন করে
আশার আলো চারদিকে
রাজনীতিকরা ব্যর্থ হলেও
নতুন প্রজন্ম রাজপথে ।
আরও পড়ুন- মা-বাবার প্রতি ভালোবাসা (Love to Mother & Father)

প্রধান সম্পাদক, গণপ্রহরী