Sat. Jul 12th, 2025
ক্ষমতা ও কালো টাকার মোহ ধ্বংস টেনে আনেক্ষমতা ও কালো টাকার মোহ ধ্বংস টেনে আনে

গণপ্রহরী ডেস্ক : ক্ষমতা ও কালো টাকার মোহ ধ্বংস টেনে আনে। আবার, কালো টাকা হঠাৎ আসে হঠাৎই চলে যায়। ইতিহাস বলে ক্ষমতা চিরস্থায়ী নয়। কথায় আছে ’লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু’। লোভ-লালসায় মানুষ যখন দিশেহারা হয়ে যান। তখন ভালোমন্দ বা ন্যায়-অন্যায় বোঝার বিবেক হারিয়ে ফেলেন। দিকবেদিক না ভেবে মত্ত হয়ে উঠে অর্থসম্পদের পিছে ছুটতে থাকে। এবং ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার মোহে ক্ষমতার অধিকতর অপব্যবহার প্রয়োগ করতে থাকে। শুরু হয় অর্থসম্পদের মালিক হওয়ার পালা। একবারের জন্যও মনে পড়েনা ‘বেশি বাড়লে পতন অনিবার্য,। এও মনে রাখতে হবে, যখন পতন আসে, সেই পতন আকস্মিক ঘটনা নয়। অকারণে কিছুই ঘটে না। যদিও অঘটন ঘটার পর নানা খোড়া যুক্তি খাড়া করা হয়, যা ধোপে টেকেনা। এমনকি ধ্বংস হতেও সময় লাগে না। বরং ধ্বংস স্বাক্ষ্য দেয়-‘লোভে পাপ আর পাপে ধ্বংস’।

বিভিন্ন সময়ে দেশের বিভিন্ন দৈনিকের মতে, তৃতীয় বিশ্বের গরীব দেশগুলোতে বহুক্ষেত্রে অসংখ্য মানসিক বৈকল্যের মানুষ দেখা যায় অর্থাৎ নীতিনৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে রাহুর মতো গোগ্রাসে অর্থসম্পদ ভক্ষণ করতে চায় যাকে মানসিক বৈকল্য বলা হয়। এমন ক্ষেত্রে দেখা যায়, এই মানুষগুলো এমন অর্থলোভী হয়ে ওঠে যে, অর্থসম্পদের জন্য এমন কাজ নেই যা তারা করতে পারেনা। এমনকি সর্বোচ্চ অপরাধ করতে দ্বিধা করেনা। সেক্ষেএে তারা যেন কনফুসিয়াসের সেই কথাটি বিশ্বাস করে। কথাটিতে বলা হয়েছে ‘অন্যায় করাটা কিছুই নহে, যদি না তুমি তা সর্বক্ষণ মনে রাখো’। কিন্তু মনের কোনায় ঠাই দেয় না যে, ক্ষমতাবান হতে হতে সময় লাগে ক্ষমতাচ্যুত হতে তা লাগে না এবং কালো টাকা হঠাৎ আসে হঠাৎই চলে যায়।

তারা মনে করে, অর্থবিত্তে টইটুম্বর থাকলে অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা ও বিনোদন এবং ক্ষমতা প্রয়োগে কোনো অপূর্ণ থাকেনা। কথায় আছে অগুরু চন্দন ফেলে চায় শ্যাওড়া কাঠ, কোকিলের ধ্বনি বানরের নাট। অর্থাৎ ভাল ছেড়ে মন্দের প্রতি মানুষের অযৌক্তিক আকর্ষণ থাকে; স্বভাবদোষে মানুষ মন্দের প্রতি আকৃষ্ট হয়। অর্থের শক্তিকে সীমাহীন শক্তি ভেবে অর্থশক্তিতে বলিয়ান হতে মরিয়া হয়ে ওঠে। তারা মনে করে অর্থ যেন শয়তানকে কিনতে পারে বা বাঘের চোখও মিলানো যায়। কিন্তু না, বরং অর্থই  একসময় অনর্থের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ক্ষমতার অপব্যবহার ক্ষমতাচ্যুত করে। শিরোনামে বলছে, ক্ষমতা ও কালো টাকার মোহ ধ্বংস টেনে আনে।

উপরোক্ত ‘কালো টাকা হঠাৎ আসে হঠাৎই চলে যায়’ শীর্ষক আলোচনায় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, তাহলে কি অর্থের প্রয়োজন নেই? প্রয়োজন আছে। তবে তা হতে হবে নীতি নৈতিকতার মধ্যে থেকে নিজের মেধা বা শ্রমের বিনিময়ে যতটা সম্ভব। কবি কাজী নজরুল ইসলাম তার কবিতায় লিখেছেন-হে দারিদ্র, তুমি মোরে করেছ মহান। তুমি মোরে করিয়াছ খ্রিষ্টের সম্মান’-তখন আমরা ভাবি, গরিবিপনা নিয়ে আমাদের মহান কবি কী দারুন উচ্ছাস প্রকাশ করেছেন! কবি নজরুল তো নিজেই দারিদ্র পীড়িত পরিবেশে বড় হয়েছেন। তাকে ছোট বেলায় ডাকা হতো দুখু মিয়া নামে। ‘দারিদ্র’ তার কাছে খ্রিষ্টের সম্মানের সমান।

শুধু তাই নয়, দারিদ্র তাকে দিয়েছে ‘অসংকোচ প্রকাশের দুরন্ত সাহস’। কী দারুন কথা। আবার কবি দারিদ্রের দংশন জীবনকে ধ্বংস করে, স্বপ্ন ভেঙ্গে খান খান করে দেয় তা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন-‘টলটল ধরণীর মত করুনায়! /তুমি রবি, তব তাপে শুকাইয়া যায়/ করুণা-নিহার-বিন্দু! ম্লান হয়ে উঠি/ ধরণীর ছায়াঞ্চলে! স্বপ্ন যায় টুটি’। একাধিক পত্রিকাই বলেছে, দারিদ্র অবশ্যই অভিশাপ। আমাদের অবশ্যই দারিদ্রমুক্ত হতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে।

তা করতে হবে পরনির্ভরশীল না হয়ে আত্মনির্ভরশীল হতে। আর শ্রম ও মেধার উপর ভিত্তি করে কাজের প্রতি আগ্রহী ও মনোযোগী যেমনি মনোযোগী হতে হবে। তেমনি স্বাধীন ভাবে মথা উচু করে জীবন পথে চলতে কোনো কাজকে ঘৃনা নয় বা তা করতে সংকোচ নয়, কাজের প্রতি আন্তরিক হতে হবে, সততা ও দৃঢ়তা থাকতে হবে। এভাবে কাজের মধ্য সৃষ্টি অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা এবং সততা ও যথাযথ সম্মানজনক আসনে বসিয়ে দেবে। মনে রাখতে হবে, ক্ষমতাবান হতে যত সময় লাগে ক্ষমতাচ্যুত হতে তা লাগে না এবং ক্ষমতা ও কালো টাকার মোহ ধ্বংস টেনে আনে।

ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিতে হবে। যেমন পতিত স্বৈরাচার হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাবে এবং তাঁর নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতচ্যুত হবে, তা তাঁর একটানা শাসনকালে কেও ভাবেননি এবং তারাতো এমনটা স্বপ্নেও কল্পনা করেনি। সংবিধানের নামে কত কি-না করেছে। অথচ সেই সংবিধানে লেখা রয়েছে, রাষ্ট্রের মালিক জনগণ। অর্থাৎ রাষ্ট্রে মানুষ। সেই মালিক মানুষকে মানুষের মর্যাদা দেয়নি, তাই বিস্ময়কর পরাজয় বরণ করতে হয়েছে। অর্থ-সম্পদ ও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা কোনটাই তাকে রক্ষা করতে পারেনি।

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *