Sun. Jul 13th, 2025
গাইবান্ধা সহ উত্তর জনপদে শীতে স্থবির জনজীবনগাইবান্ধা সহ উত্তর জনপদে শীতে স্থবির জনজীবন

গণপ্রহরী ডেস্ক : গাইবান্ধাসহ উত্তর জনপদে শীতে স্থবির জনজীবন। ‘মাঘের বাঘ পালানো’ শীতে গাইবান্ধায় দু‘জন নিজেরাই যেন স্বজনদের কাঁদিয়েই না ফেরার দেশে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। গাইবান্ধা, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও ও দিনাজপুরসহ উত্তরজনপদে হাড় কাঁপানো শীতে মানুষ যেন- ‘ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি’ অবস্থার মুখোমুখি। আর এই স্থাবির হয়ে পড়া জনজীবনে শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়া রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছে দ্রুত। শ্রম নির্ভর কর্মজীবি খেটে খাওয়া মানুষ বিপাকে পড়েছেন। জনজীবনের এই সংকটময় পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার, রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন ও দাতা ব্যাক্তি-প্রতিষ্ঠানের জরুরী উদ্যোগ কাম্য।

গণপ্রহরীর বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা সংবাদদাতাদের প্রেরিত খবর দাবি করছে, তীব্র শীতে কাঁপছে এসব অঞ্চলের মানুষ ও প্রাণীকূল। সূর্যের দেখা মিলছেনা প্রায় সর্বত্রই। আবহাওয়া অফিস স্ত্রূ বলছে মাঝারি-ঘন কুয়াশায় সূর্য্যরে তাপ না থাকায় শীতের অনুভূতি বাড়ছে। উপরন্ত উত্তর- পশ্চিম ও পশ্চিম দিকে ৫-১০ কি: মি: বেগে বাতাস বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এমনিতেই যে বাতাস বইছে তাতে ঘন-কূয়াশাও ছড়িয়ে পড়ছে।

বয়োজ্যৈষ্ঠ-অভিজ্ঞজনদের অনেকের মতে মরণকালের ‘ঠান্ডা’ অনুভূত হচ্ছে। অস্বাভাবিক হারে দিনের তাপমাত্রা কমে আসায় বাড়ছে শীতের তীব্রতা। উত্তর জনপদের কোথাও কুয়াশা ঝড়ছে যেন বৃষ্টির মতো। শীতের পোশাক বা শীতবস্ত্র পড়েও’ মানুষ ঠকঠক করে কাঁপছেন। হাড় কাঁপানো কনকনে শীতে বেশী কাবু হয়ে পড়ছেন শিশু ও বয়স্ক মানুষ। সংশ্লিষ্ট এলাকা হাসপাতাল সমূহে শীতজনিত রোগাক্রান্ত মানুষের ভীড় বাড়ছে। বসিক বয়োস্কদের কেও কেও শীতে কাবু হয়েও বলছেন, শুনে আসাছি ‘মাঘের শীতে বাঘ পালায়’। আর এখন আমরাই তীব্র শীতে কাবু হয়ে বাড়িঘর পরিজন ছেড়ে পালিয়ে হাসপাতালে এসেছি।

`গাইবান্ধাসহ উত্তর জনপদে শীতে স্থবির জনজীবন’ শীর্ষক প্রতিবেদনে উল্লেখ্য, শ্বাসকষ্ট নিয়ে গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হওয়া জেলার সাঘাটা উপজেলার পদুম শহরের লালু সেখের ছেলে নাইমুদ্দিন শেখ (৬০) ২৪ জানুয়ারি শুক্রবার সকালে মৃত্যু বরণ করেন। এবং একইদিন ভোরে পলাশবাড়ী উপজেলার মনোহরপুরের কাজীর বাজার এলাকার জনৈক আব্দুর রহমান মিয়ার ছেলে জুয়েল মিয়া (৫৫) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।

পঞ্চগড় থেকে আমাদের সংবাদদাতা হারুন অর রশীদ জানিয়েছেন জেলাব্যাপী হাড় কাঁপানো প্রচন্ড ঠান্ডা মানুষের অসহনীয় হয়ে পড়ছে। তেঁতুলিয়ার চা বাগানগুলোর কাজে নিয়োজিত কর্মজীবিদেরসহ মহানন্দা নদীতে পাথর উত্তোলণে জড়িত প্রায় হাজার পঞ্চাশেক শ্রমজীবি কর্মজীবি মানুষ বিপাকে পড়েছেন। পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকার খেটে খাওয়া ছিন্নমূল অসহায় মানুষ। মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

ঠাকুরগাঁও থেকে সংবাদদাতা প্রেরিত খবরে, জেলা প্রশাসক ইশরাত ফারজানা শীতবস্ত্র চেয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবরে চিঠি পাঠিয়েছেন বলে জানিয়েছেন। এবং সদর হাসপাতাল সূত্রে জানিয়েছেন ২৪ ঘন্টায় শিশুসহ দেড়শোর মতো নানা বয়সের মানুষ শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন। রোগী বাড়ছে। দিনাজপুর থেকে সংবাদদাতা জানিয়েছেন দিনাজপুর এলাকায় মেঘাচ্ছন্ন আকাশ আর ঠান্ডা বাতাসে শীতের তীব্রতা শুধু বাড়ছেই। মানুষ ও প্রাণীকূল সবই ঠান্ডায় কাঁপছে। ঠান্ডাজনিত রোগও বাড়ছে।

গণপ্রহরী ডেস্কে বসে, জেলা ও উপজেলা সংবাদদাতাদের প্রেরিত খবরগুলোকে প্রতিবেদনে সংযোজনের এই মূহুর্তে পাওয়া খবরে জানা গেছে, উত্তর জনপদেরই নাটোর জেলা অঞ্চলের তাপমাত্রা ৯ সেলসিয়াসের নীচে। যদিও সারাদেশেই শীতের প্রকোপ বেড়েছে। তদসত্বেও সর্বশেষ তথ্যের তাপমাত্রা উত্তরের শীতার্থ মানুষের জন জীবনের জন্য হুমকিতে পরিণত হয়েছে। শীতার্থ মানুষের করুণ আকুতির সাথে একাত্নতা প্রকাশ করেই আমরা গণপ্রহরী পক্ষে কামনা করছি-‘প্রকৃতির খেয়ালি শীত’ মানুষকে আর কষ্ট দিবে না এবং দ্রুত কমেও যাবে শীত। ‘বাঘ পালানো মাঘের শীত’বাঘ পালাচ্ছে কি-না তা জানার বা দেখার সুযোগ হয়নি, তেমন বনজঙ্গল না থাকায়। তবে বৈষম্যের শিকার কষ্ট  সহিষত মানুষ শীতের সাথে যুদ্ধ করে বেঁচে  আছেন এবং বেঁচে থাকতেও সচেষ্ট।

গাইবান্ধাসহ উত্তর জনপদে শীতে স্থবির জনজীবন শিরোনামের প্রতিবেদনে উল্লেখিত পরিস্থিতি মোকাবিলায় কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষের মধ্যে ত্রান বিতরণ না করলেও কোনো কোনো এলাকায় বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তিবিশেষ পক্ষে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে এবং কোথাও হচ্ছে। যেমন গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ প্রতিনিধি রেহানা আক্তার পঞ্চগড় প্রতিনিধি হারুন অর রশীদসহ অন্যান্য সংবাদদাতাদের খবর মতে নাটোরে ও সিংড়ায়, কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী, ফরিদপুর জেলা, নোয়াখালীর সুবর্ণচর ও জামালপুরের ইসলামপুরে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে ও হচ্ছে। প্রাপ্ত তথ্যে, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান পক্ষে বোদা ও ইসলামপুর, বিএনপি ফরিদপুর ও ফুলবাড়ীতে এবং গণঅধিকার পরিষদ সিংড়া ও আইইবির উপকেন্দ্র নাটোরে, সুন্দরগঞ্জের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মোস্তফা মহসিন উপজেলার চন্ডিপুর, কঞ্চিবাড়ী, কাপাসিয়া ও শ্রীপুর এলাকায় শীতবস্ত্র বিতরণ করেছেন। তবে বাস্তবতা বলছে, পরিস্থিতি পরিবেশ স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত শীতার্থদের মধ্যে শীতবস্ত্রের পাশাপাশি ‘ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত রাখা আবশ্যক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *