নিজস্ব প্রতিবেদক : গ্যাসের দাম নিয়ে ভাবতেও কষ্ট হয়। দ্রব্য মূল্য বৃদ্ধি অব্যাহত থাকা অবস্থাতেই গণবিরোধী সিদ্ধান্তে মূল্য সংযোজন কর-ভ্যাট আবগারি শুল্ক বাড়াতে না বাড়াতেই গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করা হলো। তা নিয়ে কথা বলতেও দ্বিধা হয়। যদিও জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে ‘কোন অপরাধে কঠোর শাস্তি দিতে কর-ভ্যাট আরোপ করে, দ্রব্য মূল্য আরও বৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধিতে মানুষের মনের মধ্যে যে ক্ষোভের’ সৃষ্টি হয়েছে। গ্যাসের দাম বৃদ্ধিতে সে ক্ষতে যেন লবন দেয়া হলো। এখন বাকি, লবনের সাথে মরিচ মিশিয়ে দেওয়া। না-কি এর পিছনে শুভংকরের ফাঁকি আছে কি-না, এমন মন্তব্যও বাজারে ঘুরছে।
দেশের মানুষ কম-বেশী জেনে আসছেন যে, বাজেটের সময় ঘনিয়ে আসতে থাকে, পণ্যের দামও বাড়তে থাকে। একইভাবে অস্বীকার্য যে, জনগণের ওপর নির্বতন মুলক বা বহনের ক্ষমতা বিবেচনা না করে সরকারের কর-ভ্যাট বাড়ানোর সম্ভাবনা দেখলেই, অধিক মুনাফালোভীরা পণ্যের দাম বাড়িয়ে আসছে আমাদের দেশে। আর ভ্যাট-কর আরোপ হলেতো লাভের ওপর মুনাফার দৌরাত্ন বা জনগণের পকেট কাটার প্রতিযোগীতা হয়।
এতে করে সহজেই অনুমেয় যে, কার স্বার্থে দাম বৃদ্ধি। উপরন্ত পণ্য ও সেবায় ভ্যাট-কর বাড়ানোর পাশাপাশি বাড়ানো হলো গ্যাসের দাম। অথচ জনগণের কত-না আশা আকাঙ্খার ও ত্যাগের প্রতিফলনের অন্তবর্তী সরকারও বিগত স্বৈরাচার সরকারের গণবিরোধী নীতি অনুসরণ করে কর-ভ্যাট বৃদ্ধি ও গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করে জনগণকে হতাশ করেছে।
‘গ্যাসের দাম নিয়ে ভাবতেও কষ্ট হয় ’এটা প্রতিবেদকের মন্তব্য। বাস্তবতা কি বলছে? বাস্তবতা বলছে-গ্যাস সংকট রেখেই, দামবৃদ্ধিতে দ্বিমুখী সংকট প্রকট হচ্ছে। দিনে ৩৮০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা মেটাতে ২৫০ কোটি ঘণবর্গফুট সরবরাহ করে সংকটাপন্ন পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের চেষ্টায় সফলতার সম্ভাবনা বহুলাংশে কম।
কেননা, সরকার উত্থাপিত নতুন ও পুরাতন শিল্পের ক্ষেত্রে দ্বিমুখী বা বৈষম্যমুলক প্রস্তাবে গ্যাসের দাম বৃদ্ধিতে প্রতিযোগীতা করতে পারবে না নতুন শিল্প। বাস্তবতার আলোকে দ্বিমুখী সংকট সৃষ্টির বৈষম্য মুলক প্রস্তাবে লক্ষনীয় যে, গ্যাসের দাম দ্বিগুণ গুণতে হবে নতুন শিল্পকারখানার। পুরাতন শিল্প এক ইউনিট গ্যাস পাবে ৩০ টাকায়। সেখানে নতুন শিল্পকারখানার ক্ষেত্রে ৭৫ টাকা গুণতে হবে এক ইউনিট গ্যাসের দাম। এতে কমে যাবে বিনিয়োগ। গ্যাসের দাম বৃদ্ধিতে উদ্যোক্তা ও শিল্পমালিকরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
শিরোনাম বলছে, গ্যাসের দাম নিয়ে ভাবতেও কষ্ট হয়। আর বাস্তবতার আরেকটি লক্ষ্যনীয় হচ্ছে ‘গ্যাস’ সংগ্রহের ক্ষেত্রে সরকারের দুটি উৎসের মধ্যে তরলীকৃত আমদানি করা গ্যাস (এলএনজি) আমদানিতে খরচ হয় প্রতি ইউনিট ৭৫ টাকা। কিন্তু দেশের গ্যাস উত্তোলনে অগ্রাধিকার না দিয়ে বিপুল পরিমান ভূর্তকি দিয়েই এই এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে। দাম বৃদ্ধির পিছনে জনস্বার্থের পরিপন্থি আরকটি অর্থবহ কারন হচ্ছে আমদানিকারকদের ভূর্তকি প্রত্যাহর করা হচ্ছে। তাতে আমদানিকারকদের মুনাফার ক্ষেত্রে ‘পোয়াবারো হলেও বৃদ্ধিকৃত দাম শিল্পের জন্য তীব্র সংকট সৃষ্টি করবে। তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে জনগণের উপর, বিশ্লেষকরা এমনটাই বলছেন।
বাস্তবতাও যেন আক্ষেপ করে উপলব্ধির জন্য বলছে, বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা) চাহিদা মতে, গ্যাসের সরবরাহ করতে না পারলেও বা ব্যর্থ হলেও, দামবৃদ্দির প্রস্তাব উত্থাপনে জনদুর্ভোগ ও শিল্পকারখানার উৎপাদন সহ সার্বিক সংকটাপন্ন পরিস্থিতি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিবেকে হয়তো বিন্দুমাত্র আঁচ লাগেনি। এনার্জি রেগুলেটার কমিশনেরও এ প্রস্তাব অনুমোদনে বৃহৎস্বার্থে একটু অনুশোচনাও হয়নি বলেই ধারনা। দ্রব্য মূল্যের দাম বৃদ্ধি অব্যাহত থাকা অবস্থাতেই পণ্যও সেবায় ভ্যাট কর আরোপ করেই গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব জনগণের মাথায় যেন ‘বজ্রাঘাত’ পড়েছে।
উল্লেখিত পরিস্থেতিতে সরকারের নীতিনির্ধারকরা মুখে স্বীকার না করলেও বুকে হাত দিয়ে অস্বীকার করতে পারবেন না যে, জনগণের ঘাড়ে-‘মরার ওপর খড়ার ঘা’ দেওয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি অব্যাহত থাকাসত্বেও ভ্যাট-কর আরোপ এবং পাশাপাশি গ্যাসের দাম বৃদ্ধিতে নানা মুখী সংকট বাড়বে। পণ্যের দাম বৃদ্ধির ফলে মূল্যস্ফীতি ঠেকানো অসম্ভব হতে পারে। অথচ বিগত সরকারের লুট করা ও পাচার করা বিপুল অংকের অর্থ উদ্ধার করলে কোনো ক্ষেত্রে সরকারকে দাম বাড়াতে হতোনা। বরং জনগণকে দেশি-বিদেশি ঋণমুক্ত করতে পারতেন। তদসত্বেও যদি সামান্য কিছু বাড়ানোর প্রয়োজন হতো তাহলে জনদুর্ভোগ বা নানা সংকট বিবেচনায় নিয়ে সহনীয় মাত্রায় যৌক্তিক কারণের আলোকে বাড়ানো যেতো।
পরিশেষে, আলোচিত বিবেচ্য বিষয়াদি বিবেচনায় নিয়ে বরং জনস্বার্থে সংকট নিরসনকে প্রাধান্য দিয়ে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিআরইসি) দাম বৃদ্ধির পরিবর্তে দাম কমানোকে অগ্রাধিকার দিবেন বলে আশাবাদ সাধারণের। সরকার বিষয়টি কার্যকর করতে পদক্ষেপ নিবেন-এ আশাবাদও থাকছে।
