Sat. Jul 12th, 2025
জনসমর্থনে এগিয়ে থাকা সত্বেও বিএনপির ভয় কেন (?)বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল

ভাষ্যকার : জনসমর্থনে এগিয়ে থাকা সত্বেও বিএনপির ভয় কেন (?) জনসমর্থনে এবং সাংগঠনিকভাবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি এখনও সব দল থেকে এগিয়ে। তারপরও বিএনপির কেন্দ্র থেকে উপজেলা পর্যায়ের সম্মুখ সারির বেশ সংখ্যক ত্যাগী-বিচক্ষণ-বিজ্ঞ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে কোন এক অজানা ভয় পেয়ে বসেছে! এটা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা স্বাধীনতার ঘোষক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এবং তাঁর সহধর্মিনী সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ভারতের আনুগত্য বিরোধী ভূমিকা, খালকাটা ও বৃক্ষ রোপনসহ কৃষি ফসল উৎপাদনের কর্মসূচি ভিত্তিক নীরব সমর্থক ভোটার জনগণের পরস্পর পরস্পর ফিস ফিস আলোচনা থেকে বেরিয়ে আসছে। সে সূত্র ধরেই বিভিন্ন শ্রেণী পেশার পরিচয় না বলা সাধারণ মানুষের মতামত ভিত্তিতে এই নাদান ভাষ্যকারের আজকের প্রতিবেদনের ভাষ্য।

শুরুতে জিয়া ও খালেদা জিয়ার যে পর্যায়ের নীরব সমর্থকদের মতামতকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে, তাঁদের বিএনপি’র কোন পর্যায়ের নেতাতো দূরের কথা, কর্মী ও মিছিলে সাথে থাকা সমর্থকদেরও বুক মিলানো-হাত মিলানোর ভাগ্য হয়নি। এমনকি হাসিমুখে কেও কুশলাদিও জিঙ্গাসা করেননি। তারপরও তারা বিএনপির নীরব সমর্থক এবং বিএনপির মোট ভোটারদের এক চতুর্থাংশ। ভারতের মদদে হাসিনার সাথে ১৮’র নির্বাচনে যাওয়া তাঁরা মেনে নেননি বলেই পনেরটি আসনও পায়নি বিএনপি। সেই সকল ভোটার জনগণেরই মতামতে বেরিয়ে আসছে-‘বিএনপিকে যেন অজানা কোনো ভয় পেয়ে বসেছে’! ফলে তাঁরা নীরব সমর্থকদেরসহ জনগণের সমর্থনের প্রতি আস্থা রাখতে পারছেন না বলেই নির্বাচন নিয়ে পাগলা হয়ে গেছেন। উপরন্ত চাঁদাবাজি, হাট-বাজার, নদী-খাল দখলের পাশাপাশি অফিস আদালতে প্রভাব বিস্তারের তৎপরতাও সমর্থক জনগণকে আওয়ামীলীগের আচরণ স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। যদিও তারেক রহমান অনেককে বহিষ্কার করে প্রশংসিত হয়েছেন। সকলকেই থামাতে হবে এহেন তৎপরতা। 

জনমতের বেরিয়ে আসা কথামালা লেখার সুযোগ নেই এই ছোট্ট পত্রিকায়। সেহেতু তাঁদের মতামত ও অনুরোধ ভিত্তিতে মূল বিষয়গুলো ভাষ্য হিসেবে তুলে ধরছি। প্রসঙ্গত বলে নিচ্ছি, বিএনপি নেতারা মানুষকে গণতন্ত্র, নির্বাচন ইত্যাদি বিষয়ে রাজনৈতিক দলের নেতার পরিবর্তে শিক্ষকের ভূমিকায় নেমেছেন। আওয়ামীলীগের মতই নিজেদের বুঝকে প্রাধান্য দিচ্ছেন, প্রাধান্য দিচ্ছেন না ভারতের আগ্রাসী অপতৎপরতা এবং আওয়ামীলীগ ও তার দোসরদের লুটপাটের অর্থ ও অস্ত্রজোড়ে এবং ভারতের মদদে চালানো ষড়যন্ত্র। ফলে জনগণের  মনে সন্দেহ দানা বেঁধেছে যে, আবারো ভারতের মদদে আওয়ামীলীগারদের উপর ভিত্তি করেই বিএনপি নির্বাচনের জন্য ব্যস্ত হয়েছে। নির্বাচন চাওয়া অন্যদলগুলো নিয়েই জনমত অনেকটা এমনই। অথচ মাস দুয়েক আগেও নীরব সমর্থকরা স্বপ্ন দেখেছিলেন, এবার বিএনপি ক্ষমতায় আসছে। এখন তাঁরা স্থিমিত হয়ে পড়ছেন। তবে এখনও সময় আছে বলে, তাঁরা মনে করেন। তবে বিএনপি নেতৃত্বকে বিশ্বাস করতে হবে- জনগণ পাণ্ডিত্য ও ক্ষমতা প্রদর্শন এবং তর্জন গর্জন পছন্দ করেন না। তারা চান বিনয়ের সাথে কথা বলা এবং তাঁদের জীবন দিয়ে উপলব্ধি করা শোষণ-বঞ্ছনা থেকে মুক্ত প্রাপ্তির জনকল্যাণকর কর্মসূচির কথা শুনতে ভালবাসেন।

তবে অন্যান্য জনগণের মতামত হিসেবে বলেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে, মানুষ চান প্রাধান উপদেষ্টা ড. ইউনুসকে রাষ্ট্রপতি ও বেগম খালেদা জিয়াকে প্রধানমন্ত্রী করে অন্তর্বর্তী সরাকরের সংষ্কার ভিত্তিতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রস্তাবিত ‘জাতীয় সরকার’ গঠন করে গত ৫ আগস্ট থেকে ধরে ৫ বছর মেয়াদের সরকার গঠন করে, ‘হ্যাঁ-না’ এর মাধ্যমে জনমত গ্রহন করে দেশকে জাতীয় ঐক্য ভিত্তিতে এগিয়ে নেয়া দরকার। এই মতামতকেই অনেকে অন্তর্বর্তী সরকারকে বা ড. ইউনুসকে ৫ বছর ক্ষমতায় থাকার কথা বলছেন বলেও মন্তব্য করছেন। ভুলে যাওয়া যাবে না, বিএনপি আন্দোলনের সফলতা অর্জনে প্রধান ভূমিকা পালন করলেও এবং বিএনপির অনেক কর্মী সমর্থক শহীদ হলেও চুড়ান্ত বিজয় অর্জনে ব্যর্থ হয়েছেন। এমনকি ঝুঁকি নিতে পারেননি। তাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের নেতৃত্বে ছাত্র জনতার গণঅভ্যূত্থানের মধ্য দিয়ে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারই জনগণের সরকার- এটা হৃদয় দিয়ে স্বীকার করতে হবে এবং প্রশ্নবিদ্ধ করা যাবে না। তবে এটা অনস্বীকার্য যে, মানুষ ড. ইউনুসকে দেশের প্রধান আসনে দেখতে চান। যাতে বহি:র্বিশ্বে তাঁর সুখ্যাতির বিনিময়ে ইতিমধ্যেকার অর্জনের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকে।

পরিশেষে, জনমতের সারসংক্ষেপ ভাষ্য হচ্ছে, জনসমর্থনে ও সাংগঠনিকভাবে এগিয়ে থাকায় যদি ক্ষমতার দ্বারপ্রান্তে বা একপ্রকার ক্ষমতায় আছেন ধরে বিএনপি নেতৃবৃন্দ নিজেদের ‘বাঘ’ মনে করেন, তাহলে ভয় কেন? অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতিশ্রুতি মোতাবেক নির্বাচন সম্পন্ন করতে সরকারের সহযোগীতা অব্যাহত রাখুন। কৌশলে ভারতের আনুগত্য নয়, পতিত স্বৈরাচারের জনবলকে ব্যবহার নয়, এমনকি আওয়ামী দোসরদের থেকে দূরে থেকে জনগণের শিক্ষক হিসেবে নয়, সেবক হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য অর্জনের পথে-দেশের মানুষের মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার নিশ্চিতকরা, সাম্য, ন্যায় বিচার, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা নিশ্চিতের ও জনগণেল কল্যাণের কর্মসূচি কি হবে এবং কিভাবে বাস্তবায়ন করবেন- এসব বক্তব্য নিয়ে জনগণের দ্বারে দ্বারে বা জনগণের কাছে যান; নির্বাচন সময়কাল পর্যন্ত জনগণের সাথে থাকলে বাঘ শুধু মনে করা নয়, ক্ষমতাসীন হয়েই ‘বাঘ’ প্রমান করুন। আর আলোচিত কর্মসূচি পালনের মধ্য দিয়ে সত্যিকারের সেবক হউন এবং ভারতের আনুগত্য পদদলিত করে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে উর্ধে তুলে ধরুন। মুক্তিযুদ্ধের চুড়ান্ত লক্ষ্য বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে শহীদদের আত্মত্যাগ স্বার্থক করুন। অন্যথায় বাঘের গল্পের ‘রাখাল ছেলে’র দশা মনে রাখতে হবে। এবং স্বৈরাচারিত্ব বা কর্তৃত্ববাদী জনগণ মেনে নেন না। নেতাদের উর্ধ্বে তুলে ধরা ও নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার আর সস্তা জনতোষনবাদী স্লোগানে মুখরিত হওয়া নির্বাচনের ক্ষেত্রে বুদ্ধিমানের কাজ নয়। তাই মুখে নয়, হৃদয়ে বিশ্বাস করুন জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস।  

আরও পড়ুন – বিএনপির রাজনৈতিক ক্ষমতার উৎসই জনগণ- তারেক রহমান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *