Sun. Jul 13th, 2025
জুলাই গণহত্যার বিচার দেখতে চাই: প্রধান বিচারপতিজুলাইয়ের গণহত্যা’র বিচার দেখতে চাই প্রধান বিচারপতি

গণপ্রহরী ডেস্ক : জুলাই গণহত্যার বিচার দেখতে চাই উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি বলেছেন, সংস্কারের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুরনো হাইকোর্ট ভবনে ফিরে আসছে, যেখানে শেখ হাসিনা সরকারের মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার অভিযোগ বিচারের অপেক্ষায় রয়েছে।

মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) দুপুরে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ ১২০ বছরের পুরনো ভবনে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের এজালাস (বিচারালয়) উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের লিখিত বক্তব্যে বিচার বিভাগীয় প্রধান বলেন, ২০২৪ সালে গণহত্যা ও অপরাধের বিচার পরিচালনার লক্ষ্যে সংস্কার করা মূল ভবন ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আদালত কক্ষের উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে নতুন যুগের সূচনা হয়েছে।

প্রধান বিচারপতির লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, “এই ভূমির বিচারিক ইতিহাসে এই ঐতিহাসিক ভবনটি ‘ঢাকা হাইকোর্ট’ বা ‘পুরাতন হাইকোর্ট ভবন’ হিসেবে যে মহান ঐতিহ্য ধারণ করেছে, তাতে বিচারিক কার্যক্রমে স্বচ্ছতা আনয়ন এবং নতুন মাত্রা পূর্ণতা পারে যথাযথ আইন প্রক্রিয়া ও ন্যায়বিচারের শ্বাসত নীতিসমূহের অনুসরণের মধ্য দিয়ে।

গোটা জাতির নৈতিক সমর্থনে সংঘটিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কাছে একজন সাধারণ নাগরিকের যে প্রত্যাশা, ঠিক অনুরূপ প্রত্যাশা রাখেন প্রধান বিচারপতিও।

উদ্বোধন অনুষ্ঠানের সময় প্রধান বিচারপতির সাথে উপস্থিত ছিলেন, আপিল বিভাগের বিচারপতি এস এম এমদাদুল হক, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদার, ট্রাইব্যুনালের সদস্য বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ, অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলামসহ অন্যান্য প্রসিকিউটর, ট্রাইব্যুনালের কর্মকর্তারা। উদ্বোধনের পর প্রধান বিচারপতি ট্রাইব্যুনালের প্রশাসনিক দপ্তর ও চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয় পরিদর্শন করেন।

পরিদর্শন শেষে প্রধান বিচারপতি সাংবাদিকদের বলেন, জাতি অনেক আশা নিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দিকে তাকিয়ে আছে।

একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমিও একই আশায় তাকিয়ে আছি। আমি বিচার দেখতে চাই।

উদ্বোধন শেষে প্রধান বিচারপতি অ্যাটর্নি জেনারেল ড. আসাদুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, ট্রাইব্যুনালের অবকাঠামো সংস্কার রুটিন কাজের অংশ। জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানে মানুষ মারা গেছে, মানবতাবিরোধী অপরাধের উপাদান রয়েছে।

যারা আইনের সংজ্ঞার মধ্যে পড়বে তাদের বিচার হবে এই ট্রাইব্যুনালে।

আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে ন্যায়বিচারের প্রত্যাশা ব্যক্ত করে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা বলেন, সরকারের মতো আমিও আশাবাদী। আমি এখানে (আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে) কোনো বিতর্ক করতে চাই না। এ জন্য আইন সংশোধন করা হয়েছে। আমি আশা করি যে ব্যক্তিরা নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য যা যা করা দরকার তা নিশ্চিত করবে।

অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসের সহযোগিতার প্রয়োজন হলে আমরা তা করব।

প্রধান বিচারপতির বক্তব্য ও প্রত্যাশার সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে প্রধান প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, আমরা আশা করি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রধান বিচারপতির প্রত্যাশা ও জাতির প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে।

ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলে ১৯০৫ সালে এই ভবনটি ‘গভর্নর হাউস’ হিসেবে যাত্রা শুরু করে। ১৯৪৭ সালের পর এই ভবনে ‘ঢাকা হাইকোর্ট’ অনুষ্ঠিত হয়। পরে এই ভবনটি ‘পুরাতন হাইকোর্ট ভবন’ নামে পরিচিতি পায়। মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য ২০১০ সালে এই ভবনে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। বিচার চলাকালীন ঝুঁকির কারণে আওয়ামী লীগ সরকার ১২০ বছরের পুরনো এই ভবন থেকে ট্রাইব্যুনাল সরিয়ে নেয়। পুরনো এই ভবনের আঙিনায় টিনের চালা তৈরি করে সেখানে ট্রাইব্যুনাল ও প্রসিকিউশন স্থানান্তর করা হয়। এরপর থেকে নতুন ভবনে ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম চলছিল।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতন হয়। এ পরিস্থিতিতে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে গত ৮ আগস্ট একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। এ সরকারে আইন উপদেষ্টার দায়িত্ব নিয়ে আসিফ নজরুল ঘোষণা দেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে গণহত্যার বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হবে। এ ঘোষণা অনুযায়ী ভবন সংস্কারের দায়িত্ব দেওয়া হয় পূর্ত মন্ত্রণালয়কে। গত ৮ অক্টোবর থেকে সংস্কার কাজ শুরু হয়।

জুলাই গণহত্যার বিচার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *