ভাষ্যকার : জ্বলেছে আগুন জ্বলবে আগুন-ভস্ম হবে শোষন নিপীড়ন। জনভাবনা থেকে বেরিয়ে আসা শিরোনাম নিয়েই জনমত ভিত্তিক ভাষ্য। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের রক্তার্জিত বিজয়ের মাসের শেষ প্রান্তে দাড়িয়ে যাঁদের আত্মদানে এই বিজয় ও বাংলাদেশ তাঁদের আত্মার প্রতি জনভাষ্যে অংশগ্রহনকারীদের সকলের পক্ষে এবং গণপ্রহরী পরিবার পক্ষে বিনম্র শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। অনস্বীকার্য যে, মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য ছিল শোষণমুক্ত সমাজ। আর শোষণ নিপীড়ন ও অপশাসনের হাত থেকে আজও শোষণ মুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠিত হয়নি। বরং বিশাল বৈষম্যের সমাজ জেঁকে বসেছে সর্বক্ষেত্রে। সেই বৈষম্য দূরীকরণে চব্বিশের জুলাই আগষ্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যূত্থানে স্বৈরাচারের পতন ঘটাতে যাঁরা শহীদ হয়েছেন তাঁদের আত্মার প্রতিও শ্রদ্ধা নিবেদন করছি। বীর মুক্তিযোদ্ধাদেরসহ সংগ্রামী বীর ছাত্র-জনতাকে জানচ্ছি অভিনন্দন।
ভাষ্যের শুরুতে জনমত ভিত্তিতে দৃঢ়তার সাথে বলতে হয়, জনমতে বাংলাদেশ সচিবালয়ে গত ২৫ ডিসেম্বর বুধবার রাত পোনে দু’টার দিকে পরিকল্পিতভাবে রাষ্ট্রকে অচল করতে এবং অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ করতে আগুন জালিয়ে দেওয়া হয়। জনমতে, পতিত স্বৈরাচার সরকারের স্বৈরশাসন-শোষনকালে রাষ্ট্রক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করতে ভারত ও তার গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর হস্তক্ষেপে বিরোধী দল-মতকে স্তব্ধ করতে পরিকল্পিতভাবে হত্যাকান্ড ও অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটিয়েছে। যা জাতির সামনে স্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠেছে। একইভাবে তাদের ক্ষমতার অপব্যবহার-ঘুষ-দুর্নীতি, বিদেশে অর্থপাচার এবং উন্নয়নের অর্থলোপাট এসব ঘৃন্য-দেশবিরোধী ভূমিকার নানা তথ্য তদন্তে বেরিয়ে আসছে । যে তথ্যের নথি ও রেকর্ডপত্র জ¦ালিয়ে দিতেই পরিকল্পিত অগ্নিকান্ড ঘটানো হয়েছে।
জনভাষ্যে অংশগ্রহনকারীরা শাসক-শোষক-লুটেরাদের নির্ধারিত স্থান বাদে হাটে-ঘাটে-মাঠে ও পথে-প্রান্তরে জীবন জীবিকার প্রয়োজনে যাতায়াত নির্বিঘ্নে। আলোচনা-সমালোচনা ও খোলামেলা কথাবার্তারও সীমারেখা নেই। ফলে নানাজনের নানা যুক্তিযুক্ত মতামতের সারসংকলন হিসেবে তাঁদের কথাবার্তা বা মতামতেই স্বাবাবিকভাবেই বের হয়ে আসে। এতে করে ইতিমধ্যে প্রকাশিত প্রচারিত বিবেচ্য তথ্যাবলীও তাঁদের কাছে যেন স্পষ্ট। যেমন আগুন যেখানে লাগবে সেখান থেকে উপরের দিকে এবং চারদিকে ছড়িয়ে পড়বে। বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূচনা হলেওতো একইভাবে ছড়িয়ে পড়বে। সচিবালয়ের ৭তলা ভবনের যে চারটি তলায় পাঁচ মন্ত্রনালয়ের বিভিন্ন অভিযোগ প্রেক্ষিত অব্যাহত তদন্তের রিপোর্টসহ অভিযোগ প্রমাণের যথাযথ দলিল-নথিপত্র-রেকর্ডপত্র সংরক্ষিত, সেগুলোই শুধু পুড়ে ভস্মিভূত হয়েছে, যা পরিকল্পিত নীল নকসার প্রতিচ্ছবি।
জনভাবনায়-তাঁদের (জনগণকে) সজাগ থাকতে হবে-আগুন নিয়ে খেলা শুরু হয়েছে আগেই। তাইতো মানুষের হৃদপিন্ড অচল হলে একজন মানুষ যেমন অচল এবং তাঁর দেহ মৃত্যুদেহে পরিণত হয়। তেমনি রাষ্ট্র পরিচালনায় সচিবালয়ে হচ্ছে রাষ্ট্রের হৃদপিন্ড। সেই হৃদপিন্ডে যে আগুন দিতে পারে। সে বা সেই গোষ্ঠি দেশ, জাতি ও জনগণের শত্রুতা সন্দেহাতীত ভাবেই বলা যায়। এ দেশ সরকারের নয়, এ দেশ কোনো দলের নয়, এ দেশ জনগণের।
বাংলাদেশের সংবিধানেও স্পষ্টভাবে লিপিবদ্ধ রয়েছে এই রাষ্ট্রের মালিক জনগণ। সেই মালিক জনগণের কাছে প্রচারিত-প্রকাশিত তথ্যানুসারে জনমনে প্রশ্ন-আগুন লাগার পর সচিবালয়ের পথে ট্রাক কেন? সচিবালয়ে কুকুর প্রবেশ ও দাহ্য পদার্থ কেন? সর্বশেষ খবরে আগুন লাগার আগে রাত ১টায় ৭নং ভবন থেকে বেরিয়ে যাওয়া লোকটিকে খুঁজে বের কারা দাবি জনগণের। স্বৈরশাসনকালের সকল অভিযোগ, দুর্নীতি ও অর্থপাচার তথ্যসহ অপরাধীদের তালিকা শ্বেতপত্র আকারে প্রকাশেরও দাবি জনগণের। তাঁদের অভিমত- এক সময় জনতার কণ্ঠে ধ্বণিত হবে ‘জ¦লেছে আগুণ জ¦লবে ভস্মিভূত হবে শোষণ নিপীড়ন’।
জনভাবনা থেকে বেরিয়ে আসা শিরোনাম বলছে দেশের সাধারণ মানুষ বুঝেছেন, স্বাধীনতার ৫৩ বছরে মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য অর্জনের পথে নেই দেশ। কিন্তু ৫১ থেকে ৭১-ভাষা আন্দোলন-উনসত্তরের গণঅভ্যূত্থানের শহীদদের রক্তপথেই একাত্তরের ত্রিশলাখ শহীদের আত্মদান। মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের পরও দফায় দফায় রক্তদান করতে করতে চব্বিশের ৫ আগস্টের সফল গণঅভ্যূত্থানেও রক্তদান। আর কত রক্ত দিতে হবে?
দেশের হৃদপিণ্ডে আগুন দিয়ে প্রমাণ করেছে, দেশকে ভারতের অনুগত রাষ্ট্র করেছিল স্বৈরশাসকের ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতে। তেমনি ক্ষমতার কারণেই ক্ষমতা লোভীরা দেশকে পুড়িয়ে ছাড়খার করতে ও রক্তের হলিখেলা খেলাতে দ্বিধা করবে না। তাই জনভাবনায়-প্রস্তুত থাকতে হবে জনগণকে। মনে রাখতে হবে, জ¦লেছে আগুন, জ¦লবে আগুন ভস্মিভূত হবে শোষণ-নিপীড়ন। অর্থাৎ মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্যের শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠিত হবে, সমাজ হবে বৈষম্যমুক্ত। শহীদদের আত্মত্যাগ স্বার্থক হবেই-হবে। 29/12/2024
