‘নজরুল সঙ্গীতে জাদু আছে’। কাজী নজরুলের রাগাশ্রয়ী গানের প্রেমে মুগ্ধ প্রখ্যাত নজরুল সঙ্গীত শিল্পী ফেরদৌস আরা। তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, নজরুল সঙ্গীতে এমন জাদু আছে যা গানপ্রেমী মানুষকে যেমন অনায়াসে মুগ্ধ করে। তেমনি শিল্পী ফেরদৌস আরার দাবি সঙ্গীত স্রষ্টাদের অন্যতম একজন নজরুল। তাইতো বৈচিত্রে ভরপুর তাঁর সঙ্গীতের সুর ও সুধা, সঙ্গীত প্রেমিদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে যুগ যুগ ধরে তা ছড়িয়ে দিয়েছেন সঙ্গীত প্রেমিদের মধ্যে।
শিল্পী ফেরদৌস আরার মতে, বৈচিত্রে ভরপুর নজরুল গান বিষয়ে বলেছেন, ‘লোকজ, গজল, কীর্তন ও ক্ল্যাসিকালসহ সব সুরের আবহ সবই আছে তাঁর গানে। তিনি বলেছেন, এসব সুরের আবহ শ্রোতাদের চোখের পাতা ভিজিয়ে দেয়, আনন্দে আপ্লুত করে ও শ্রোতাদের ভাবায়ও। শুধু তাই নয়। জাতীয় কবি নজরুলের গান-কবিতা পাঠক শ্রোতাদের শিরায় শিরায় বইয়ে দেয় রণঝঙ্কার ও করে তোলে প্রতিবাদী।
ছোটবেলা থেকে নজরুলের রাগশ্রয়ী গানের মুগ্ধ শ্রোতা থেকে এসব গানের স্রষ্টা নজরুলকে জানার পর তাঁর গানের একনিষ্ঠ ভক্ত হয়ে যান। তার গানের কথা ও সুরের বৈচিত্র্য শুধু তার মনকে নাড়া দেয়নি। বরং তার বিকাশে ও ধ্যান-জ্ঞানেই হয়ে ওঠে নজরুল সঙ্গীত। সেহেতু নজরুল সঙ্গীতের বিকাশে ও রকমারিতা তুলে ধরে মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিতে এবং আগামী প্রজন্মকে জানাতে শিল্পী তৈরীকে প্রাধান্য দিয়ে নজরুল ইনস্টিটিউট, সুর সপ্তকসহ বিভিন্ন সঙ্গীত শিক্ষালয়ে নিয়োজিত রেখেছেন শিল্পী তৈরীর শিক্ষায়। তিনি প্রকাশ করেছেন, এক কণ্ঠে হাজার গানের সংকলন।
প্রখ্যাত নজরুল সঙ্গীত পূজারি শিল্পী ফেরদৌস আরা ‘নজরুল সঙ্গীতে জাদু আছে’ উল্লেখ করে-এটা বলাসহ উপরোক্ত বর্ণনার পাশাপাশি দৃঢ়তার সাথে বলেছেন, সব ধরণের শ্রোতার মনোযোগ কেড়ে নেওয়ার মতো অজস্র গান সৃষ্টি করেছেন তিনি। তিনি কৈশোরে ডানপিটে আর খেলাধুলায় চ্যাম্পিয়ন ছিলেন উল্লেখ করে তার শিল্পী হওয়ার বাসনা জেগে ওঠাকে, অবাক করার মতই বলে জানিয়েছেন। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত তার সাক্ষাতকার সূত্রে তিনি যা জানিয়েছেন-
নন্দিত শিল্পী ফেরদৌস আরা জানিয়েছেন, স্কুল জীবন থেকে খেলাধুলায় চ্যাম্পিয়ন হলেও শিল্পী হওয়াই ছিল আমার নিয়তি। কেননা আমি বেড়ে উঠেছি সঙ্গীতবলয়ে। আমার বাবা এএইচএম আবদুল হাই চাকরি জীবনে পিডব্লিউডির চিফ ইঞ্জিনিয়ার হলেও ছিলেন উচ্চাঙ্গসঙ্গীত বিশারদ। আমার তিন বোন হুর-ই জান্নাত, নূর-ই জান্নাত ও জান্নাত আরা শিল্পী। কৈশোরে তারা যখন ওস্তাদ শিলুবাবুর কাছে গানের তালিম নিতেন, তখন আমি জানালার পাশে বসে মন্ত্রমুগ্ধের মতো গান শুনতাম। বলতে পারেন তখন থেকেই সঙ্গীতের সন্মোহনী শক্তি আমাকে বশীভূত করে। এটার আর কেউ না বুঝলেও আমার মা মোশাররেফা বেগম বুঝতে পেরেছিলেন। তাই শিল্পী হাওয়ার পঞ্চ তৈরি করে দিয়েছিলেন তিনি নিজে। শিল্পী হওয়ার ইতিহাস তো জানা হলো, কিন্ত নজরুল সঙ্গীতই গাইবেন, এই পরিকল্পনা কি শুরু থেকেই ছিল? এর জবাবে তিনি বলেন, ‘এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার বয়স সেটা ছিল না। নানা ধরনের গান গেয়েছি, তালিম নিয়েছি। কিন্ত গাইতে গাইতে একসময় বুঝেছি, নজরুল সেই সঙ্গীত স্রষ্টাদের অন্যতম একজন, যার গান বিষয় বৈচিত্র্যে ভরপুর। তাই নজরুল সঙ্গীতই ‘তাঁর ধ্যান ও জ্ঞান’।
