Sat. Jul 12th, 2025
পাঁচ চ্যালেঞ্জের ‍মুখে অর্থনীতি- ড. জিল্লুর রহমানপাঁচ চ্যালেঞ্জের ‍মুখে অর্থনীতি- ড. জিল্লুর রহমান

পাঁচ চ্যালেঞ্জের মুখে অর্থনীতি উল্লেখ করে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকিং অ্যালম্যানাকের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের অর্থনীতির সামনে আর্থিক খাতের শৃঙ্খলা, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণসহ বড় পাঁচ চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে।। এগুলো হলো- আর্থিক খাতের সংস্কার, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলা, মানবসম্পদ উন্নয়ন এবং বেসরকারি খাতের সম্প্রসারণ।. বিনিয়োগ বৃদ্ধি। এসব পাঁচ চ্যালেঞ্জের মোকাবিলায় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।

গতকাল ২১ ডিসেম্বর সিরডাপ আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের তথ্যভিত্তিক গবেষণা গ্রন্থ ‘ব্যাংকিং অ্যালমানাক’-এর ৬ষ্ঠ সংস্করণের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন হোসেন জিল্লুর রহমান এবং অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন. সালেহউদ্দিন আহমেদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন অর্থ সচিব ড. মো. খায়রুজ্জামান মজুমদার, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর নুরুন নাহার এবং বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) চেয়ারম্যান ও ঢাকা ব্যাংকের চেয়ারম্যান আবদুল হাই সরকার।

ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে হবে, অর্থনীতির প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে হবে।। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, বেসরকারি খাতের সবার সম্পৃক্ততা রয়েছে। মুদ্রাস্ফীতি আরেকটি সমস্যা এবং মুদ্রাস্ফীতি মোকাবেলা করার জন্য আমাদের অলিগার্কিক বাজার পেতে হবে। বিগত ১৫ বছরে, শাসন অন্য স্তরে চলে গেছে। এর মধ্যে প্রথম দুটিতে সন্তোষজনক অগ্রগতি হয়েছে। তথ্য ও পেশাদারিত্ব আরও উন্নত হবে। অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে অর্থনীতির চাকা ঘুরিয়ে দেওয়ার বিষয়টি অর্থ মন্ত্রণালয়ের একক ইস্যু নয়, সামগ্রিক দায়িত্ব।। তিনি বলেন, অর্থনীতির চাকা বেগবান করা নিয়ে এক ধরনের প্রশ্ন রয়েছে।

অর্থনীতিবিদ ড. হোসেন জিল্লুর বলেন, আমরা জানি বিনিয়োগ বন্ধ হয়ে পড়ছে। এটা শুধু অর্থনীতি পরিচালনার জন্য নয়। সামগ্রিকভাবে আইনশৃঙ্খলা থেকে শুরু করে অনেক কিছুই আছে। মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা একটু কঠিন। চেষ্টা চলছে, কিন্তু সাফল্য আসছে ধীরে ধীরে। আরেকটি হল অলিগ্যার্কিক বাজার শক্তি একটি বাস্তবতা হিসাবে বিদ্যমান। এটা মোকাবেলা করার চ্যালেঞ্জ সামনেই রয়েছে। ২০২৫ সালে এখানে আমাদের কাঙ্ক্ষিত অবস্থানে পৌঁছানো সম্ভব হবে।

স্বাগত বক্তব্য দেন বইটির নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ জিয়াউদ্দিন আহমেদ। বক্তব্য রাখেন ব্যাংকিং অ্যালমানাক-এর সম্পাদক বোর্ডের সদস্য, অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নুরুল আমিন।। ব্যাঙ্কিং পরিষেবা এবং দেশের বৈচিত্র্যের তথ্য ও উপাত্ত জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে ব্যাঙ্কিং অ্যালম্যানাকের প্রয়োজনীয়তা ও তাৎপর্য নিয়ে একটি বিশেষ প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অ্যালম্যানাক প্রকল্পের পরিচালক আবদার রহমান।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, সঠিক তথ্য-উপাত্ত ছাড়া কোনো কিছুরই মূল্যায়ন হয় না। গত ১৫ বছরের তথ্য বিভ্রাট নিয়ে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছে। মুদ্রাস্ফীতি, জিপিডি ডেটা ফাঁক আংশিকভাবে অসাবধানতাপূর্ণ ত্রুটির কারণে এবং নীতিনির্ধারকরাও ডেটা লুকানোর চেষ্টা করেন।। তিনি বলেন, আমরা কোনো ক্ষমতা দেখাতে আসিনি, দায়িত্ব নিয়ে এসেছি। বিগত ১৫ বছরের তথ্যের সাথে বিভিন্ন বিভ্রাট রয়েছে। আমরা তাদের পরিবর্তন ও সংস্কারের চেষ্টা করছি। কারণ দাতা সংস্থাগুলো আমাদের বিভিন্ন প্রশ্ন করে, তারা বুঝতে চায় আগে কম ছিল ইত্যাদি। এর মাধ্যমে আমরা তাদের বুঝিয়ে দিচ্ছি যে পূর্বের তথ্য গোপন ছিল, আমরা সঠিকটি উপস্থাপন করছি। মুদ্রাস্ফীতি, জিডিপি-র ডেটা ফাঁকির পিছনে কিছু অনিচ্ছাকৃত ভুল রয়েছে এবং নীতিনির্ধারকরাও ডেটা লুকানোর চেষ্টা করেন।’

তিনি বলেন, জাতীয় একক উইন্ডো (এনএসডাব্লিউ) করার চেষ্টা করছি। যাতে ব্যবসায়ীরা সব তথ্য এক জায়গা থেকে পান। ব্যবসায়ীদের তথ্যের জন্য দশ জায়গায় দৌড়াতে হবে না। আমরা যদি আরও সমন্বিত উপায়ে তথ্য পরিচালনা করতে না পারি, ভবিষ্যতে আরও সমস্যা দেখা দেবে। আমাদের এই মিথ্যা তথ্যের প্রয়োজন নেই, কারণ প্রিয় মিথ্যা বেদনাদায়ক।

পুঁজিবাজারের অস্থিরতার জন্য খেলোয়াড় (বড় অংশগ্রহণকারী) এবং নিয়ন্ত্রকদের (নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ) অনেকটাই দায়ী।। “আপনি জেড ক্যাটাগরির শেয়ার কিনছেন, যার কোনো অস্তিত্ব নেই। আবার শেয়ারের দাম কমলে তারা প্রতিবাদ করে- আমি এর পক্ষে নই।

সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বিবিএসকে (পরিসংখ্যান ব্যুরো) বলা হয়েছে- তথ্য প্রকাশ করতে হবে।। এখানে কোনো হেরফের নেই। পুঁজিবাজারের অবস্থা আমাদের ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতের মতোই। পুঁজিবাজারে শেয়ারের দাম কমছে বলে চেয়ারম্যানকে অপসারণের আন্দোলন চলছে। আমি এ ব্যাপারে অনড়, বললাম- থাক।’

অর্থ সচিব ড. খায়রুজ্জামান মজুমদার বলেন, আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে উন্নয়ন সহযোগীদের সহযোগিতা চাই।। যাতে কোনো বিশৃঙ্খলা না হয়। আমরা ইতিমধ্যে বিভিন্ন বোর্ডে পরিবর্তন করেছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *