Sun. Jul 13th, 2025
বাংলাদেশ প্রশ্নে ভারতনীতি ও গণমাধ্যমের ভূমিকাবাংলাদেশ প্রশ্নে ভারতনীতি ও গণমাধ্যমের ভূমিকা

বাংলাদেশ প্রশ্নে ভারতনীতি ও গণমাধ্যমের ভূমিকা। প্রথমেই বলে নিতে হয, ভারতের বীর জনগণের সাথে বাংলাদেশের বীর জনগণের সম্পর্ক শুধু বন্ধুত্বেরই নয়। সম্পর্ক এমনি যে, সেই ‘প্রতিবেশী’ সম্পর্ক কখনই অস্বীকার করার নয় এবং তা সম্ভবও নয়। যে কারণে পরীক্ষিত সত্য যে, ভারতে বাবরি মসজিদ প্রাঙ্গনে রামমন্দির  উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে মোদি যে দৃষ্টিকটু উগ্র-হিন্দুত্ববাদী আস্ফালন দেখালেন, তা ভারতের জনগণ সহজভাবে মেনে নেননি; বরং বিরক্তিরই প্রকাশ পেয়েছে। কিন্তু ভারতের কিছু গণমাধ্যমে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম রামমন্দির প্রতিষ্ঠাকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির  বিজেপি সরকার ভারতের যেন ‘স্বর্ণযুগ’ প্রতিষ্ঠা করলো এমনটারই প্রকাশ ঘটায়। তাতে জনগণের মধ্যে কোনো প্রভাব পড়ে না।

যদিও মোদি নির্ভর বিজেপি তৃতীয়বারের মতো একক সরকার গঠণের যে স্বপ্ন দেখেছিল, সে ‘স্বপ্নে সেগুড়ে বালি’। সে স্বপ্ন ভিত্তিতেই দলগতভাবে পশ্চিমাবাংলার রাজনৈতিক সচেতন, দেশপ্রেমিক প্রগতিশীল-সম্প্রীতিবাদী জনগণ তাদের বিরক্তিকর মনোভাবের জবাব দিতে  ‘সেগুড়ে বালি’ দেয়ার ছলে গুড়টাই নিয়ে নিয়েছেন। ফলে পশ্চিম বাংলায় বিজেপি শুধু ধরাসায়ী হয়নি। অস্থিত্বের সাথে অহমিকা ও একগুয়েমীপনা কৌশলী ভূমিকায় উগ্র-হিন্দুত্ববাদ প্রতিষ্ঠায় জোট সরকার গঠনে বাধ্য হয় বিজেপি। বিজেপি’র ভারত নীতির ফলশ্রুতিতে মালদ্বীপ ও নেপাল মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। ভুটানও ভারত ছেড়ে একলা চলো নীতিতে এগিয়ে চলছে।

এদিকে ভারতের সেভেন সিস্টারখ্যাত সাত রাজ্য লুটেপুটে, ভারতনীতির আওতায় অর্থনীতি চাঙ্গা রাখতে শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামীলীগ সরকারের ওপর ভর করে রক্তার্জিত বাংলাদেশকে অনুগত রাষ্ট্রে পরিণত করেছিল। আরেকটি প্রধান কারণ ছিল, উগ্র-হিন্দুত্ববাদী অখণ্ড ভারতের স্বপ্নকে বাস্তাবায়ন করা। সেজন্য শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখতে সব রকম ভূমিকা পালন করে চলছিল ভারত।

কিন্তু উগ্রহিন্দুত্ববাদী জোয়ারে মোদি সরকার বেমালুম ভুলে যায়, যে দেশের হিন্দু-মুসলমান, বৌদ্ধ-খ্রিষ্টানসহ সকল ধর্ম-বর্ণের মানুষ ঐক্যবদ্ধভাবে মুক্তিযুদ্ধ করে বাংলাদেশ সৃষ্টি করেছে। তাদের হৃদয়ে ছিল শোষণমুক্ত সমাজের লক্ষ্য অর্জনে জনগণের গনতান্ত্রিক সরকারের বিকল্প নেই বাংলাদেশে। তাই চব্বিশের ছাত্র-জনতার আন্দোলন-গণঅভ্যূত্থানের মুখে কর্তৃত্ববাদী স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা পালিয়ে যায়। ভারতকেই আশ্রয় দিতে হয়। হত্যা, খুন-গুম ও অর্থ পাচারসহ বিভিন্ন অপরাধের অপরাধী হিসেবে শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ চিঠি দিলেও ভারত নীরব ভূমিকা পালন করছে। এটাই বাংলাদেশ প্রশ্নে ভারতনীতি।

বাংলাদেশ প্রশ্নে ভারত নীতি ও গণমাধ্যমের ভূমিকা যা-ই হোক না কেন। শহীদের রক্তে ভেজা মাটির ফসল খেয়ে অর্জিত রক্তে জন্ম দেয়া ও জন্ম নেয়া বাংলাদেশের বীর ছাত্র-জনতা তথা আপামর মানুষ ভুলে যায়নি ও ভুলে যাবে না যে উগ্র-হিন্দুত্ববাদী নরেন্দ্র মোদি যেদিন সকালে রামমন্দির উদ্বোধন করে সেদিনই ভোরে বাংলাদেশের সীমান্তে পাহারারত বিজেপির বীর জোয়ান হত্যা করে, অখন্ড ভারত সংকল্পে ভারত আগ্রাসী ভূমিকার সিগন্যাল দিয়েছে। এই বাস্তবতার আলোকে অখন্ড ভারত সংকল্প নিয়ে এদেশের মানুষ ভাবছেন প্রতি মুহুর্ত। এবং জাতীয় গণমাধ্যমের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টির ক্ষেত্র তৈরীর ভূমিকায় জনগণ বিভ্রান্ত হবেন না।

‘বাংলাদেশ প্রশ্নে ভারতনীতি ও গণামধ্যমের ভূমিকা শিরোনাম বলছে- ‘সকালে রামমন্দির উদ্বোধন:ভোরে বিজেপি হত্যা এবং অখন্ড ভারত সংকল্প নিয়ে এখনই ভাবতে হবে’ শীর্ষক গত ফেব্রুয়ারির শেষ সময়ের লেখাটি ভারতীয় ষড়যন্ত্র ও কিছু গণমাধ্যমের অপপ্রচাররোধে বর্তমান পরিস্থিতিতে কার্যকর। তাই চিন্তা-চেতনায় সহায়ক বিবেচনা করে, সম্পাদনা বিভাগ থেকে হুবুহ তুলে ধরা হলো। 

প্রবাদ প্রতিমের বাংলাদেশের প্রবাদে আছে ‘সময়ের এক ফোঁড়, অসময়ের দশ ফোঁড়। এই প্রবাদটি উচ্চারিত হতে হতেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে আরেকটি প্রবাদ ‘ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিও না’। ‘তবে জাতীয় জীবনে রাখিবে মনে/দুই সংখ্যার যোগফল আর গুণফল যদি যায় মিলে সামনে জাতীয় জীবনে মহাসংকট জানিবে সকলে। জাতীয় ঐক্যে মিলিবে সমাধান/ যে ঐক্যের ফল হইবে গণঅভ্যূত্থান’।

মনে রাখতে হবে, রামমন্দির উদ্বোধন এবং অখন্ড ভারত দুটোর যোগফল ও গুণফল=ভারত। যে ভারত লোকসংখ্যায়, বিজ্ঞান প্রযুক্তিতে, অস্ত্রে ও অর্থে আমাদের দেশর অর্থাৎ বাংলাদেশে-এর তুলনায় অধিকতর শক্তিশালী শুধু নয়, বৃহৎ শক্তিশালী সম্প্রসারণবাদী ভারত। এক পা উচিয়ে আছে সাম্রাজ্যবাদে রূপান্তরিত হতে। তারই ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতে উগ্র হিন্দুত্ববাদকে যোগ ও গুণনে সমান ফলাফল মিলাতে রামমন্দির উদ্বোধন অখণ্ড ভারত সংকল্প বাস্তবায়নে যেমন রামমন্দির উদ্বোধন তেমনি আমাদের দেশসহ প্রতিবেশী দেশগুলোতে প্রতিবশেী বন্ধু  হিসেবে প্রবেশ করে নানা চুক্তিতে- নানা শর্তে সাহয়তার নামে একচেটিয়া সুবিধা ভোগ করতে করতেই রাষ্ট্রীয় জীবনের সর্বক্ষেত্রে ভিত্তি গড়ে তুলতে সচেষ্ট ভারত রাষ্ট্র। তবে আশার দিক হলো প্রতিবেশী দেশগুলো সতর্কতা অলম্বন করেছেন বলে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সূত্রে জানা যাচ্ছে। তার ঢেউ আমাদের দেশেও লাগছে।

কিন্তু ক্ষমতাসীন দল ও তার সরকার ভারতের তাঁবেদারের ভূমিকায় অবতীর্ণ। কিন্তু দেশটি যেহেতু মুক্তিযুদ্ধের ফসল সেহেতু যতটা সহজ ভাবছে ততটা সহজ হবে না- এটা নিশ্চিত। আরেকটি দিক হচ্ছে ভারতের জনগণের সাথে বাংলাদেশের জনগণের কোনো বিরোধ নেই। এছাড়া তারা রাজনৈতিকভাবে বুঝে সুঝেই অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হিসেবেই বাংলাদশসহ প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলো বন্ধু রাষ্ট্র। একইভাবে বন্ধু হিসেবে আমাদের মুক্তিযুদ্ধে মিত্রবাহিনীর ভূমিকাও পালন করে। রাজনৈতিকভাবে অগ্রসর হিসেবে উগ্রহিন্দুত্ববাদী মোদি নেতৃত্বাধীন শাসকগোষ্ঠির সাথে ভারতের জনগণের যেমন দ্বন্দ্ব তেমনি বাংলাদেশের জনগণের সাথেও।


এবার শিরোনামের দিকে লক্ষ্য করলে সহজেই অনুমেয় যে, উগ্র হিন্দুত্ববাদের জাগরণ সৃষ্টিতে অখন্ড ভারত সংকল্পের খুটি হিসেবে যে রামমন্দির উদ্বোধন করা হয় যেদিন সকালে সেদিন ভোরে ভারতের বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশের বীর বিজেবি সদস্য রইশুদ্দিনের জীবন কেঁড়ে নেয়া হয়। রামমন্দিরের লক্ষ্য যেহেতু অখন্ড ভারত প্রতিষ্ঠা সেহেতু বিজেবি সদস্য হত্যাওতো একই সূত্রে গাঁথা বললে ভুল হবে না। ক্ষমতাসীন সরকার পক্ষে তীব্র কোনো প্রতিবাদ হয়নি, নিয়মতান্ত্রিক প্রতিবাদটিও গণমানুষের দৃষ্টিতে পড়েনি।

সুধী পাঠকবৃন্দ হয়তো ২৫ জানুয়ারী ঢাকা টাইমস পত্রিকায় দেখেছেন সীমান্তে ৯ বছরে ২৪৫ বাংলাদেশী হত্যা, একটিরও বিচার হয়নি। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর দু’ দেশের প্রধানমন্ত্রী এ ধরণের সীমান্ত হত্যাকান্ডও শুণ্যে নামাতে যৌথ বিবৃতি দেন বটে। কিন্তু এরপরও থামেনি সীমান্ত হত্যা। ফেলানী হত্যাকান্ডের বিচারও হয়নি। যদিও বিশ্বে খবরটি ছড়িয়ে পড়েছিল। গত বছরইতো রংপুরে ৮ জন, রাজশাহীতে ৫ জন,খুলনায় ৬ জন ও সিলেটে ৪ জনসহ মোট ২৮ জন নিহত হয়েছেন।’ পক্ষান্তরে বিজেবির গুলিতে বা নির্যাতনে ভারতের একজনও নিহত বা আহতের খবর জানা যায়নি।


আমরা ফিরে যাই শিরোনামভিত্তিক ভারতের অযোধ্যায় রামমন্দির উদ্বোধন কেন্দ্রিক মূল লেখায়। ভারত মোদি সরকার ধর্মকে ব্যবহার করে রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকতে চায়, আর সেই ধর্ম ব্যবহার করতেই অযোধ্যার বাবরি মসজিদ ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করে দেশ জুড়ে হিন্দুত্ব জাগরণের অনানুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে ১৯৯৬ সাল থেকে। তা করতে আগে রামকে নিয়ে একটি ধারাবহিক প্রচার করে নিয়েছে। তারপর রামমন্দির নির্মাণকাজ শুরু করে ৩ হাজার কোটি সরকারি টাকা ব্যয়ে।

বাংলাদেশ প্রশ্নে ভারতনীতি ও গণমাধ্যমের ভূমিকা
রামমন্দির

যে মন্দির ২২ জানুয়ারি ২০২৪ সোমবার ব্যাপক জাকজমক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তৃতীয়বারের মত রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের পাশাপাশি অখন্ড ভারত প্রতিষ্ঠার দিকে আনুষ্ঠানিকভাবে আগানোর প্রস্তুতি পর্বের শুরু। এর আগে মন্দির নির্মাণ কাজ তদারকিতে গিয়ে নরেন্দ্র মোদি দিনভর নির্বাচনী প্রচারকাজ করতে গিয়ে বলেছেন, তিনি যা বলেন তা তিনি করেন। এছাড়া রামমন্দির নির্মাণের মূলে রয়েছে অখন্ড ভারত প্রতিষ্ঠার সংকল্প। তিনি এ সময় সর্বভারতীয় চ্যানেলকে দেয়া সাক্ষাতকারেও বলেছেন, তার রাজত্ব মানেই রামরাজত্ব।


প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নেতৃত্বাধীন ভারত সরকার এবার বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের নির্বাচন কেন্দ্রিক আকাঙ্খার বিপক্ষে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ও তার নেতৃত¦ধীন আওয়ামীলীগের এক তরফা নির্বাচনে সার্বিক সহযোগীতা করে ভারতের এক তরফা সুবিধা ভোগের নিশ্চিত ব্যবস্থা করেছেন। পাশাপাশি বাংলাদেশেও ‘র’Ñএর গোয়েন্দা তৎপরতার মাধ্যমে ভারতের রাষ্ট্রীয় সম্প্রসারণবাদী চরিত্র এবং অখন্ড ভারত প্রতিষ্ঠার সংকল্প একই সূত্রে গাঁথা। তিনি বলেছেন, তিনি যা বলেন, তা তিনি করেন।

এক্ষেত্রে প্রবীন সাংবাদিক সুখরঞ্জন দাশগুপ্তের ‘মোদি ভারতকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন’ শীর্ষক একটি লেখার দুটি অংশ তুলে ধরছি। তন্মধ্যে রাম নিয়ে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে জানা একটি কথা। আরেকটি রাম নিয়ে মোদি কিভাবে ক্ষমতায় আসতে চান। তিনি বলেছেন, এই রাম নাম নিয়ে মোদি তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসতে চান। ২২ জানুয়ারি অযোধ্যায় ‘রামলালা’র প্রাণ প্রতিষ্ঠা করবেন, তবে দাবি করেছেন, প্রশ্ন উঠেছিল তিনিতো একজন ক্ষত্রীয়। ব্রাহ্মন নন। তাহলে তিনি কীভাবে রামলালা’র প্রাণ প্রতিষ্ঠা করবেন। কার্যত গ্যাং অব থ্রি… মোদি, মোহন ভগবত এবং অমিত শাহ এই তিনজনই এখন ভারতের ভাগ্যবিধাতা। শুধু রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, মোদির আমলে শিল্প হয়নি। কিন্তু নতুন শিল্প তিনি এনেছেন। সেটি হলো অসত্য, অসত্য , অসত্য…মিথ্যা…মিথ্যা …মিথ্যা। এই মিথ্যা দিয়ে তিনি ভারতবর্ষ জয় করতে চাইছেন। সম্প্রতি তা অযোধ্যা সফরের সময় দেখা গেছে। শুধু সাধুসন্তরা তাকে ঘিরে রেখেছেন। সাধুসন্তরাই কি দেশ চালাবেন?

বাংলাদেশ প্রশ্নে ভারতনীতি ও গণমাধ্যমের ভূমিকা
সীমান্ত হত্যা


প্রবীন সাংবাদিক তার লেখায় জাতিসংঘের রিপোর্ট থেকে তুলে ধরেছেন ভারতে প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ পেট ভরে খেতে পায় না। শিশুরা স্কুলে টিফিন পায় না। দেশের বর্তমান অবস্থার জন্য গ্যাং অব থ্রি অহরহ সারা দেশ ঘুরে বর্তমান অবস্থার জন্য জওহরলাল নেহেরু ও কংগ্রেসকে দায়ি করছে। বিরোধীরা তা অস্বীকার করছে। বরং মোদির দক্ষতার অভাব ওপেন সিক্রেট। স্বাধীনতার পর থেকে ভারতে যা কিছু তার সবই কংগ্রেস আমলে। দ্বিতীয় কথাটি আজকের শেষ প্যারায় উল্লেখ করবো।


এদিকে, অখন্ড ভারতের স্বপ্নই যে নরেন্দ্র মোদির রামরাজত্ব তা এখন ওপেন সিক্রেট। মিথ্যা অজুহাতে গুজরাটের মুসলমানদের উপর হিন্দু জঙ্গিরা যেদিন হত্যাকান্ড চালিয়েছিল সেইদিনের গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ও আজকের ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হাত ধরে। জানিনা, ১৪০ কোটি মানুষের ভারতে এক তৃতীয়াংশ সংখ্যালঘুদের ভাগ্যে কি অপেক্ষা করছে রামমন্দির উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে। তবে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরুর অনেক আগেই উগ্র হিন্দুত্ববাদের কার্যক্রম শুরু করেছে আরএসএস ও বিজেপি। মধ্য প্রদেশের বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী মোহন যাদব বলেছেন, অযোধ্যায় মন্দির প্রতিষ্ঠা অখন্ড ভারত গড়ে তোলার পথে এটা গুরুত্বপূুর্ণ পদক্ষেপ। তিনি অখন্ড ভারত প্রসঙ্গ টেনে বলেছেন, ‘ঈশ্বরের ইচ্ছাতেই রামমন্দির তৈরী হয়েছে। তার ইচ্ছাতেই এটা হবে অখন্ড ভারত গড়ে তোলার এক বিরাট পদক্ষেপ।

তিনি আরও বলেছেন, প্রাণ প্রতিষ্ঠা হলো ‘রামলালা’র (বালক রামচন্দ্র) বিগ্রহে। সেই উপলক্ষেই ভারতের রাজ্যে রাজ্যে বিজেপি নানা অনুষ্ঠান আয়োজনের মধ্য দিয়ে মন্দির উদ্বোধন দিবস উদযাপন করে। তিনি গর্ব করে বলেছেন, গত বছরের ২৮ মে দিল্লিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী যে নতুন সংসদ ভবন উদ্বোধন করেছেন, সে ভবনে অখন্ড ভারতের একটি ম্যুরাল বা মানচিত্র স্থান পেয়েছে। তার ছবি দিয়ে সংসদীয় মন্ত্রী প্রহ্লাদ যোশি সে সময় টুইট করে লিখেছিলেন ‘সংকল্প স্পষ্টঃ অখন্ড ভারত’। অর্থাৎ অখন্ড ভারত গঠনই তাদের সংকল্প। তিনি উল্লেখ করেছেন, সে সময় কর্ণাটকের শাসকদল বিজেপির টুইটার হ্যান্ডেলেও অখন্ড ভারত মানচিত্রের ছবি দিয়ে লেখা হয়েছিল ‘আমাদের গর্বিত মহান সভ্যতার জীবন শক্তির প্রতিক।


কট্টরপন্থী নেতা হিসেবে পরিচিত বিজেপির এই নেতা বলেছেন, ‘দেশের মানুষের সৌভাগ্য যে ৩০-৩২ বছরের সংগ্রামের পর অযোধ্যায় রাম মন্দির প্রতিষ্ঠিত হতে পেরেছে। ৫০০ বছর ধরে প্রজন্মের পর প্রজন্ম রাম মন্দির প্রতিষ্ঠার লড়াই করার পর আজ সফল। ঈশ্বর চাইলে অখন্ড ভারত আবার তৈরী হবে। আজ না হলে কাল তা হবেই। সেই অখন্ড ভারতের ব্যাপ্তি পাকিস্তানের সিন্ধু ও পাঞ্জাবে গিয়ে শেষ হবে না। শেষ হবে আফগানিস্তানে।

আমরা আবার নানকানা সাহিব (পাকিস্তানের পাঞ্জাবে শিখগুরু নানকের জন্মস্থান) যেতে পারব সহজেই। মোহন যাদব বলেছেন, অখন্ড ভারত ধারণা রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ বা আরএসএসের মূল মতাদর্শের অন্যতম। সেই ধারণায় একদা ভারত বর্ষের ব্যাপ্তি ছিল পশ্চিমে আফগানিস্তান (গান্ধারী কান্দাহারিরই কন্যা) অর্থাৎ মোহন যাদবের কথা মতে কোনোদিন অখন্ড ভারত প্রতিষ্ঠিত হলে আফগানিস্তান, পাকিস্তান, তিব্বত, নেপাল, ভুটান, বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও শ্রীলঙ্কা অস্তিত্বহীন হয়ে পড়বে।


এসব নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি করেছিলেন নেপালের প্রধানমন্ত্রী বাবুরাম ভট্টরাই। এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, এই মানচিত্র নেপালসহ ভারতের অন্য প্রতিবেশীর সঙ্গে ভারতের বিশ্বাসের যে ঘাটতি রয়েছে তা বাড়িয়ে দেওয়ার মতো উপাদান এই মানচিত্রে রয়েছে এবং বিষিয়ে তুলতে পারে প্রতিবেশীদের সাথে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক। তা কি বাস্তব রূপ দিতেই রামমন্দিরের আনুষ্ঠানিক যাত্রা।


প্রবীন সাংবাদিক সুখরঞ্জণ দাশগুপ্ত রাম নিয়ে কথায় লিখেছেন, একদা অযোধ্যার রাজা দশরথের প্রথম স্ত্রী কৌশল্যার গর্ভে প্রথম পুত্র রাম জন্মেছিলেন। বহুদর্শী জ্যোতিবসু অযোধ্যার বাবরি মসজিদ ভাঙার পর সাংবাদিকদের প্রায়ই বলতেন, এ কোন রাম? আমাদেরও তো এক রাম আছেন। সৎ মা কৈকেয়ী চেয়েছিলেন রামকে ১৪ বছরের জন্য বনবাসে পাঠাতে। সেই দাবি মেনে নিয়েই পিতা তাকে বনবাসে যাওয়ার হুকুম দিয়েছিলেন।

বনবাসে রামের সঙ্গে ছিলেন দশরথের তৃতীয় স্ত্রীর পুত্র রাবণ। পত্নী সীতাকে নিয়েই তিনি বনবাসে যান। সীতাকে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন, লঙ্কার রাবণ। এরপরে রামের সঙ্গে রাবণের যুদ্ধ হয়। এসব ঘটনাই আমাদের জানা। পরিশেষে বলবো ভারতের প্রতিবেশী হিসেবে বাংলাদেশসহ সব দেশকেই ভবিষ্যত জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। সময় থাকতেই তা ভাবতে হবে। কেননা, বাংলা প্রবাদে আছে, ‘সময়ের এক ফেঁড় আর অসময়ের দশ ফোঁড়’।

বাংলাদেশ, বাংলাদেশ

By SK Mazid Mukul

প্রধান সম্পাদক, গণপ্রহরী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *