গণপ্রহরী ডেস্ক: স্বাধীন গণমাধ্যমের জন্য স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠি হচ্ছে প্রতিবন্ধকতা। বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠির গণমাধ্যম পরিচালনার ক্ষমতাকে বাতিল করতে না পারলে স্বাধীন গণমাধ্যম ও সাংবাদিকতা গড়ে উঠবে না। এবং সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যমের চরিত্র বদলানো সম্ভব হবে না। প্রেস কাউন্সিলকে ঢেলে সাজানোর পরামর্শের পাশাপাশি সাংবাদিকদের জন্য ওয়েজবোর্ড, বেতন-ভাতাসহ সুযোগ সুবিধাসহ তাদের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
গত সোমবার ২২ ডিসেম্বর রাজধানীর ঢাকার সিরডাপ মিলনায়তনে সিজিএস (সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্ট্যাডিজ)-এর আয়োজিত গণতান্ত্রিক পূনর্গঠনের সংলাপ: গণমাধ্যম প্রসঙ্গ শীর্ষক অনুষ্ঠিত সংলাপে বক্তারা গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শের সাথে এসব কথা তুলে ধরেন।
স্বাধীন গণমাধ্যম ও সাংবাদিকতা গড়ে না ওঠার মূলে রয়েছে বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী মহল দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হওয়া। গণমাধ্যম ও সাংবাদিকতার চরিত্র রাতারাতি পরিবর্তন হবে না যদি না এ অবস্থার পরিবর্তন না হয় । এ ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের অধিকারের পাশাপাশি মজুরি বোর্ড ও বেতন ভাতাসহ সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।। প্রেস কাউন্সিলকে সংস্কার করতে হবে।
রোববার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজের (সিজিএস) ‘ডায়ালগ ফর ডেমোক্রেটিক রিকনস্ট্রাকশন: মিডিয়া কনটেক্সট’ শীর্ষক সংলাপে বক্তারা এসব কথা বলেন।
গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদ বলেন, কীভাবে দেশের গণমাধ্যমকে এগিয়ে নেওয়া যায়, তার স্বাধীনতা ও অধিকার নিশ্চিত করার পাশাপাশি জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা যায় সে বিষয়ে কমিশন কাজ করছে। এসব বিষয়ে অংশগ্রহণকারীদের আলোচনা ও মতামতের ভিত্তিতে একটি প্রতিবেদন বা সুপারিশ করা হবে।
আওয়ামী লীগ সরকারের গত ১৫ বছরে দেশের গণমাধ্যম চাপের মুখে ছিল এবং জনগণের পক্ষে কথা বলতে পারেনি বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি বলেন, আত্মসমালোচনা করতে হবে, আয়নার সামনে দাঁড়াতে হবে নিজেদেরও। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো গণমাধ্যমে তুলে ধরতে পারেনি।
শফিকুল আলম বলেন, গত ১৫ বছরে গণমাধ্যম জনগণের কথা বলেনি। অনেক ক্ষেত্রে তারা প্রতারণা করেছে। মিডিয়া কমিশন করা হয়েছে, এই কমিশন সবার কথা শুনবে এবং ভালো রিপোর্ট দেবে, যাতে মিডিয়া নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে এবং নির্ভয়ে রিপোর্ট করতে পারে। এ খাতে যারা কাজ করেন তাদের অধিকার রক্ষা করতে হবে।
গণমাধ্যমে ওয়েজ বোর্ড বন্ধ হওয়া উচিত মন্তব্য করে স্বাধীন গণমাধ্যমের জন্য তিনি বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি মিডিয়ায় অর্থনৈতিক মডেলের পরিপ্রেক্ষিতে ওয়েজ বোর্ড ব্যবস্থা বন্ধ করা উচিত। বরং স্বাধীন গণমাধ্যমে ন্যূনতম বেতন কাঠামো নির্ধারণ করতে হবে।
দৈনিক মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী বলেন, সংকমিশনগুলো পরিশ্রম করছে। কিন্তু রাজনৈতিক সরকার এসে সেটা বাস্তবায়ন না করলে স্কারের কথা বললে ইতিহাসের সংস্কার হওয়া উচিত । ‘কারণ সরকার পরিবর্তন হলে ইতিহাস বদলে যায়। সংস্কার কোনো লাভ হবে না। আর লক্ষ্যহীনভাবে সংস্কার করতে চাইলে কোনো কাজে আসবে না ।
দৈনিক সমকালের উপদেষ্টা সম্পাদক আবু সাঈদ খান বলেন, সাংবাদিকরা আওয়ামী লীগ বা বিএনপিতে পরিণত হওয়ার কারণেই সাংবাদিকতার বর্তমান দুর্দশা। সরকার যতই হস্তক্ষেপ করবে, ততই সংবাদপত্রের পরিচয় নষ্ট হবে। ৫ আগস্টের পরও বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিভিন্ন সংস্থার শুভেচ্ছা সফর শুরু হয়েছে।
তিনি বলেন, কালাকানুনগুলো বাতিল করতে হবে গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে। নির্বাচিত সরকার আসলেই কালাকানুন বাতিল করবে কিনা সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে। তাই অন্তর্বর্তী সরকার কর্তৃক আইসিটি আইন বাতিল করা উচিত।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, সাংবাদিকদের অধিকার ও আত্মসম্মান নিশ্চিত না করলে মুখের ওপর প্রশ্ন করতে পারে এমন সাংবাদিক আমরা পাব না। সব দুর্নীতি ও অন্যায়ের জবাব চাইতে পারবে।
সিনিয়র সাংবাদিক এম এ আজিজ বলেন, গণমাধ্যম স্বাধীন হওয়ার আগে গণতন্ত্র দরকার। সংবাদপত্র সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠানকে একীভূত করতে হবে। এর দায়িত্ব একজন সিনিয়র সাংবাদিককে দিতে হবে, কোনো আমলা বা রাজনীতিবিদকে নয়।
তিনি বলেন, দুই ভাগে বিভক্ত সাংবাদিক ইউনিয়ন, যাকে এক করতে হবে। অন্যথায় প্রেশার গ্রুপ হিসেবে তাদের অস্তিত্ব থাকবে না। অস্বচ্ছ সাংবাদিকদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।
উদ্বোধনী বক্তব্যে সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান বলেন, গণতন্ত্র হত্যা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনে গণমাধ্যম সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। ডিজিএফআই এবং এনএসআই সহ গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কীভাবে মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ করে এবং কীভাবে এটি থেকে বেরিয়ে আসা যায় তা ঠিক করা দরকার।
