Fri. Apr 25th, 2025
আমাদের কথায় স্বাধীনতা দিবস

আমাদের কথায় স্বাধীনতা দিবস প্রাসঙ্গিক সম্পাদকীয় কলামের শুরুতে ৫৫তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি বীর শহীদদের। বাংলাদেশের বাঙালি জাতির যে বীর সন্তানরা, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের শহীদদের রক্তপথে-উনসত্তরের ছাত্র গণআন্দোলন-গণঅভ্যূত্থানে আত্মবলিদানকারী বীর শহীদদের আত্মত্যাগ থেকে শিক্ষা নিয়ে শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে, মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের মদদপুষ্ট নতুন ধরনের উপনিবেশিক পাকিস্তানী স্বৈরশাসকের স্বৈর শাসন ও সামন্ত আমলা মুৎসদ্দি শ্রেনীর শোষণের বিরুদ্ধে শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা অর্জনে অকাতরে জীবন দিয়ে স্বাধীন ভূখণ্ডের বাংলাদেশ করেছেন, তাঁদের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা  জানাচ্ছি। সম্মান জানাচ্ছি, সম্ভ্রম হারানো মা-বোনদের প্রতি এবং যধাযথ সম্মান ও আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি বাংলার বীর জনগণের দামাল সন্তান-জীবনমরণ মুক্তিযুদ্ধের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের। যে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বপূর্ণ ভূমিকায় জাতিকে মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য অর্জনে এগিয়ে যাওয়ার মাপকাঠি হিসেবে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধকে ‘ভিত্তি’ হিসেবে শহীদের রক্তে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

আমাদের কথায় স্বাধীনতা দিবস প্রাসঙ্গিক আজকের আমাদের কথায় একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধকে ভিত্তি করে শোষণমুক্ত সমাজের লক্ষ্যে সাম্য, ন্যায়বিচার, মৌলিক অধিকারসহ বাক স্বাধীনতা ও মানবাধিকার নিশ্চিত করার অপরিহার্য শর্তের জনগণের গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার পথ উম্মুক্ত করেছিল, রক্তার্জিত স্বাধীন এই ভূখণ্ড বাংলাদেশ। কিন্তু দুর্ভাগ্য বাংলাদশের জনগণের, এই জাতির। মহান মুক্তিযুদ্ধকালে আশ্রয় দেওয়ার নামে সম্প্রসারণবাদী ভারত সরকারের যুদ্ধকালীন প্রবাসী আওয়ামীলীগ সরকারের সাথে সম্পাদিত চুক্তিভিত্তিতে প্রতিবেশী বন্ধু রাষ্ট্রের স্থলে বাংলাদেশকে অনুগত রাষ্ট্রে পরিণত করার পাকাপোক্ত ব্যবস্থা করেই রাখে। সেই ধারাবাহিকতায় মুক্তিযুদ্ধকালের সোভিয়েত রাশিয়ার মদদপুষ্ট ভারতীয় সম্প্রসারণবাদী শাসক গোষ্ঠির সাম্রাজ্যবাদে রূপান্তরিত হওয়ার জন্য উম্মুখ ভারতীয় উগ্রহিন্দুত্ববাদী মোদি সরকার-বাংলাদেশকে অনুগত রাষ্ট্রে পরিণত করতে ভারতীয় আগ্রাসী নীতির আওতায় শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামীলীগ সরকারকে ক্ষমতাসীন করে বাংলাদেশকে ভারতের অনুগত রাষ্ট্র বানিয়ে; ভিন্নমতকে দেশ থেকে চিরতরে বিদায় করতে সচেষ্ট থাকে। ফলশ্রুতিতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে মুক্তিযুদ্ধের লাখ লাখ শহীদের আত্মত্যাগকে বৃথা প্রমাণে অপতৎপরতায় শ্রেনী বিভক্ত সমাজের সর্বক্ষেত্রে আকাশ পাতাল বৈষম্য সৃষ্টি কারার পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় অর্থ-সম্পদ (বৈদেশিক ঋণের অর্থসহ) লুটপাট ও বিদেশে পাচারের দেশে পরিণত করেছিল।

আরও পড়ুন- ঐতিহাসিক মুক্তাঞ্চল নিয়ে গঠিত সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার স্মরণে—

এমন পরিস্থিতিতে, এক পর্যায়ে স্বৈরাচারের জেল-জুলুম, হত্যা-খুন ও অত্যাচার-নির্যাতনে অতিষ্ঠ মানুষ বীর শহীদদের রক্তপথ ধরে বৈষম্যহীন সমাজের দিক-নির্দেশনা নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে চব্বিশের গণঅভ্যূত্থানে শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়ে গণতন্ত্রের পথে দেশকে এগিয়ে নিতে নিজেদের জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন; সেই সকল বীর শহীদদের- আহত বীরদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করছি। অভিনন্দন জানাচ্ছি বিএনপিসহ স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহনকারী সকল রাজনৈতিক দল এবং লড়াকু ছাত্র-যুব জনতাকে। এতদসঙ্গে স্বাধীনতার প্রবক্তা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, স্বাধীনতার নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষখ জিয়াউর রহমান, মুক্তিযুদ্ধের জাতীয় সংগঠকবৃন্দ, সকল সেক্টর কমান্ডারসহ রণাঙ্গনে বিভিন্ন পর্যায়ে নেতৃত্বদানকারী মুক্তিযোদ্ধাবৃন্দ এবং মুক্তিযুদ্ধকে সফল করতে ভূমিকা পালনকারী আপামর বীর জনগণকে শ্রদ্ধা-সম্মানের সাথে পুনরায় স্মরণ করছি। যাঁদেরকে জাতি কোনোদিন ভুলবেন না।

আমাদের কথায় স্বাধীনতা দিবস প্রাসঙ্গক আমাদের কথা শীর্ষক নিয়মিত সম্পাদকীয় কলামের এ পর্যায়ে স্বাধীনতার ৫৪ বছরে মুক্তিযুদ্ধের  লক্ষ্য অর্জনে ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করা যায়নি উল্লেখ করে, ২৫ মার্চ মঙ্গলবার স্বাধীনতা পুরুষ্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রদত্ত বাস্তব সম্মত ভাষণের জন্য তাঁকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। তিনি লক্ষ্য ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা না হওয়ার পিছনে স্বাধীনতার পর থেকে যে সব রাজনৈতিক দল ক্ষমতাসীন হয়েছেন, তাঁরা জনগণের আশা আকাঙ্খা পূরণে যেমন ব্যর্থ হয়েছেন, তেমনি আর্থসামাজিক বৈষম্য ও সুশাসনের ঘাটতিও দায়ী। লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া এবং জনগণের আশা আকাঙ্খা পূরণ না হওয়ার জন্য দায়ী বলেও ইঙ্গিত দেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনুস। পক্ষান্তরে যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নামকরণ থেকে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ শ্রমিক-কৃষক, কর্মচারী, গরীব-সর্বহারা, নিম্নবিত্ত-মধ্যবিত্ত শ্রেণীর আপামর মানুষ যে বৈষম্যহীন বা বৈষম্যমুক্ত সমাজের আশা নিয়ে আন্দোলনে অংশ নেয়ায় সফল গণঅভ্যূত্থান সংঘটিত হয়েছে, তা থেকে অংশগ্রহনকারীরা-নেতৃত্বদানকারীরা দলগুলো শুধু দূরে যাচ্ছেন না, বরং দল ও পক্ষগুলোর মধ্যেও মতভেদ পরিলক্ষিত হচ্ছে। যা জাতির কাম্য নয়।

আরও পড়ুন- স্বাধীনতা অর্জনে নেতৃত্বদানকারীদের যথাযথ মর্যাদাদান আবশ্যক

আমাদের কথায় স্বাধীনতা দিবস স্বার্থক করতে, জাতীয় ঐক্য সুদৃঢ় করে ফ্যাসিবাদকে  (স্বৈরশাসন) চিরতরে কবর দিয়ে, বৈষম্যহীন সমাজ গড়ার মধ্য দিয়ে, মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্যের শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠাকল্পে জনগণের গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠায় অন্তর্বর্তী সরকার ঘোষিত সময় নির্বাচন অনুষ্ঠিত করণে রাজনৈতিক দল সমূহের প্রতি গণপ্রহরী আহ্বান জানাচ্ছে।

এক্ষেত্রে মনিষী ‘লেনিনে’র উক্তি ‘এক পা আগে দুই পা পিছে’-বাণীকে স্মরণ রেখে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে অন্তর্বর্তী সরকার এবং রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের প্রতি অনুরোধও থাকছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *