গণপ্রহরী রিপোর্ট : কোন দোষে রংপুরাঞ্চলবাসী বিশেষ ট্রেন বঞ্চিত (?) সারা দেশের মানুষ অস্বীকার করবেন না যে, উত্তরাঞ্চল হচেছ দেশের অবহেলিত অঞ্চল। দোহাই দেশের দক্ষিণ, পূর্ব, পশ্চিম ও মধ্যাঞ্চলবাসী ভেবে নিবেন না যে, অন্যান্য অঞ্চলের উন্নয়নে উত্তরাঞ্চলের মানুষ ক্ষুব্ধ। স্বাধীনতার চুয়ান্ন বছরে সারা দেশে সর্বক্ষেত্রে যে উন্নয়ন হওয়ার কথা ছিল এবং যে উন্নয়ন করা সম্ভব ছিল তা হয়নি। বরং বৈদেশিক ঋণের যে অর্থ এবং রাষ্ট্রের যে অর্থ উন্নয়নের নামে ব্যয় করা হয়েছে; তার সিংহভাগই শাসক-শোষক ও তাদের দালাল সুবিধাভোগীদের ভাগ্যের উন্নয়ন খাতে খরচের খাতায়। সেই ক্ষেত্রেও উত্তরাঞ্চল বলি আর রংপুরাঞ্চল বলি Ñ এ অঞ্চলের মানুষ ক্ষমতাসীন-সুবিধাভোগীদের ভাগ্যান্নয়নের উন্নয়ন থেকে পিছিয়ে। উপরন্তু ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের বড় ধর্মীয় উৎসব আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বাংলাদেশ রেলওয়ে বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করলেও রংপুরাঞ্চলের মানুষের ভাগ্যে একটি বিশেষ ট্রেনেরও সুযোগ হয়নি। তাইতো আক্ষেপ থেকে আসা প্রশ্নÑ ‘কোন দোষে রংপুরাঞ্চলবাসী বিশেষ ট্রেন বঞ্চিত (?)
যদিও চব্বিশের স্বৈরাচার পতনে নেতৃত্বদানকারী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘অকুতোভয় সৈনিক আবু সাঈদের রক্তে সূচিত সফল গণঅভ্যূত্থানের মধ্য দিয়ে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায়’- উল্লেখিত এমন কথাবার্তার সময়ই রংপুরের গঙ্গাচড়া ও লামনিরহাটের অদিতমারীর দুই রিক্সা চালক জানতে চাইলেন, ‘কোন দোষে রংপুর অঞ্চলের মানুষের জন্য একটি বিশেষ ট্রেনেরও ব্যবস্থা হলো না! আবারো দোহাই দিচ্ছি পাঠক রংপুর অঞ্চলের গাইবান্ধা এলকার এই হতভাগ্য প্রতিবেদককে কেও বিধর্মী বা অন্ধত্বে বিশ্বাসী এমনটা ভাববেন না। সকল ধর্ম মতেই, ভাগ্য বিধাতা বা ভাগ্য নির্ধারণকারী একজন- মহান সৃষ্টিকর্তা। তাহলে কি রংপুর অঞ্চলের মানুষের ভাগ্যেই কি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা লেখা নেই বলেই এমনটা? সৃষ্টিকর্তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেই বলছি, বিধাতা এমনটা করতে পারেন না। তবুও কথাগুলো লিখতে যেহেতু হলো সেহেতু গণপ্রহরীর প্রধান সম্পাদক রসিকতা করে বলে থাকেন, মাঝে মাঝে লিখেও থাকেন, ‘ভাগ্যের দোষ নেই, দোষ কপালের’। সত্যি কি তাই (?) সবার কপাল কি-না যার যার চার আঙ্গুলের মাপে। আমিও মাপলাম। তাতে চোখের ভ্রুসহ মাথার অল্প চুলের গোড়াসহ হলো চার আঙ্গুল। এমন কি রংপুর অঞ্চলের সবার, না-কি মাপে ভুল হয়েছে।
এবার দেখা যাক রংপুর অঞ্চলে কতটা ট্রেন চলাচল করছেÑ রেলওয়ের লালমনিরহাট ডিভিশন সূত্রে দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্যসূত্র মতে, রংপুর, লালমনি, বুড়িমারী, কুড়িগ্রাম, পঞ্চগড়, একতা, দ্রুতযান, দোলনচাঁপা, করতোয়া ও বাংলাবন্ধা এক্সপ্রেস ঢাকায় চলাচল করে। প্রতিদিন এসব ট্রেনে ৮ থেকে ১০ হাজার যাত্রী ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করে। এসব ট্রেনের যাতায়াতে এমনিতেই টিকিট পাওয়া যায় না। এ অঞ্চলের মানুষ আশা করেছিল এবার ঈদে হয়তো রংপুরের ভাগে একটি বিশেষ ট্রেন পড়বে। কিন্তু তা হয়নি। বিগত দিনের মতো এবারও রংপুরকে বঞ্চিত করা হয়েছে। এতে ট্রেনের নিয়মিত অনেক যাত্রীই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। জানা গেছে, ঢাকা থেকে দেওয়ানগঞ্জ, চট্টগ্রাম থেকে চাঁদপুর, ভৈরববাজার থেকে কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জ, গাজীপুরের জয়দেবপুর থেকে পার্বতীপুর পর্যন্ত ট্রেন চলাচল করবে। এ ছাড়া পার্বতীপুর-দিনাজপুর রুটে এবং ঠাকুরগাঁও-দিনাজপুর রুটে গোর-এ-শহীদ ঈদ স্পেশাল ট্রেন দুই জোড়া চলবে।
ডেস্কে বসে অন্যান্যদের সাথে প্রতিবেদনটা পড়ছিলাম আর আলাপ করছিলামÑ এমনি সময় গাইবান্ধার এক রিক্সা চালক হাজির রংপুরে বিশেষ ট্রেন যাবে কি-না জানতে। তিনি একাধিকবার যাত্রী নিয়ে এসেছেন। তিনি মনোযোগ দিয়ে শুনে বললেন, বিশেষ ট্রেনের লেখাটা খুব সুন্দর হয়েছে। তা ঈদ উপলক্ষেতো বিশেষ ট্রেন, ঈদ গেলেই শেষ। কিন্তু গাইবান্ধা আধুনিক হাসপাতালসহ আত্মীয়স্বজনের কারণে সুন্দরগঞ্জ, সাদুল্যাপুর ও ফুলছড়ি উপজেলা হাসপাতালে দেখেছি এবং আমাদের সাথে কুড়িগ্রাম, নিলফামারী ও লালমনিরহাটে রিক্সা চালকদের কাছে শুনেছি তাদের এলাকার হাসাপাতালের কথা। সেসব হাসপাতালে প্রতিদিন কত রোগব্যাধি নিয়েও হাসপাতালে নিয়ে ভাল চিকিৎসা না পেয়ে কতনা কষ্ট সহ্য করছেন মানুষ। তাঁদের সুষ্ঠ পরীক্ষা-নিরীক্ষাসহ ভাল কিচিৎসার ব্যবস্থা করার কথা লেখেন। মানুষ দোয়া করবে। তাঁকে জানালাম সাংবাদিকরা লিখছেন, আমরা আপনার কথাগুলো লিখবো বলে শান্তনা দিয়ে বিদায় নিলাম। যদি সরকার বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়। তাহলে সর্বক্ষেত্রে বৈষম্যের অবসান হবে- মানুষ আশা করতে পারতেন।
আরও পড়ুন- রেলের জমি ও যন্ত্রাংশের মালিক কে
