Thu. Mar 27th, 2025
জেলা প্রশাসকদের প্রতিযোগীতামূলক মনোভাব রাখতে হবে- ড. ইউনুসজেলা প্রশাসকদের প্রতিযোগীতামূলক মনোভাব রাখতে হবে- প্রধান উপদেষ্টা। ফাইল ছবি

গণপ্রহরী রিপোর্ট: ‘জেলা প্রশাসকদের প্রতিযোগীতামূলক মনোভাব রাখতে হবে’ উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস বলেছেন, ‘সরকার চালাতে প্রয়োজন টিম ওয়ার্ক। এ জন্য সরকারকে একটা টিম হিসেবে কাজ করতে হবে’।

গত ১৬ ফেব্রুয়ারি রোববার জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে নানা বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শদান করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনুস ডিসিদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) মধ্যে প্রতিযোগীতামূলক মনোভাব রাখাতে হবে।

ডিসি সম্মেলনে অংশগ্রহনকারিদের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টাকে প্রধান অতিথি বলায় তিনি কষ্ট পেয়েছেন উল্লেখ করে বলেছেন, ‘এই সরকারের খেলোয়াড় আমরা সকলেই। আমাকে প্রধান অতিথি বলার হেতু আমাকে খেলার মাঠ থেকে বাইরে রাখা হলো। আমাকে ক্যাপ্টেন বলা উচিত ছিল, আমাকে অতিথি নয়। তাই আমি ক্যাপ্টেন হিসেবে বক্তব্য দিতে চাই’। 

জেলা প্রশাসকদের প্রতিযোগীতামূলক মনোভাব রাখতে হবে শীর্ষক এই প্রতিবেদনে ড. ইউনসূ বলেছেন, “সরকার গঠনের পর ছয় মাস চলে গেল। আয়োজনের জন্য এটাকে আমরা বলছি প্রথম পর্ব। আয়োজনের সময় অনেক ভুলভ্রান্তি হয়েছে। এখন সেগুলো ঠিক করে পুরো খেলার জন্য প্রস্তুত। সেই প্রস্তুতি হলো কি না বা কী কী ঘাটতি রয়েছে সেগুলো ঠিক করতে হবে”।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “সরকারকে টিম ওয়ার্ক চালাতে টিম গঠনের জন্য সবাই একত্র হয়, তখন কার কী করণীয়, সেগুলো নিয়ে আলোচনা থাকে। কার কী ঘাটতি রয়েছে, সেসব বিষয় থাকে। কারণ খেলা হলো সামগ্রিক একটা জিনিস। একজনের ভুল কাজে পুরো টিম তার সাফল্য থেকে বঞ্চিত হয়। তাই আমরা এমন ভুল যেন না করি, যাতে পুরো টিমের সাফল্য ব্যাহত হয়। এগুলো নিয়ে আমাদের আজকের আলোচনা”।  

প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে তিনি বলেছেন, “আজকের এই বৈঠক যদি বড় কোম্পানির এক্সিকিউটিভদের নিয়ে হতো। তাদের যারা শরিক থাকতো তারা কী বলতো, নিশ্চয় ম্যানেজিং ডিরেক্টরের প্রশংসায় সময় নষ্ট করতো না। তারা বলতো আমাকে এই কাজ দিয়েছেন, আমি এই কাজ করেছি, আমার এই সাফল্য হয়েছে, এখন ওই কাজের জন্য প্রস্তুত। এখানে দুটি উদাহরণ তুলে ধরলাম। একটা মাঠের খেলোয়াড়দের নিয়ে আরেকটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের ফিল্ড অফিসারদের বক্তব্য”।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “এই সরকারের খোলোয়াড় আমরা যারা আছি, তাদের ভূমিকা ওই দুই গোষ্ঠীর মধ্যে কোনো একটির মতো হতে হবে। অমরা কী করছি কী করা দরকার সেগুলো নিয়ে আলোচনা। যে আলোচনায় বেরিয়ে এসেছে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) প্রতিযোগীতামূলক মনোভাব রাখতে হবে।

আরও পড়ুন- শেখ হাসিনাকে দেশে এনে বিচার করা হবে-ড. ইউনুস

তিনি বলেছেন, “সরকারে কাজ কী ধরনের তা হাতেগোনা মাপা জিনিস উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘কাজ একই, তবে বারে বারে একই ভঙ্গিতে আসছে। সেসব কাজ কে কীভাবে করছি, কীভাবে হলো ভালো হতো, ক্যাপ্টেনের সিগন্যালটা কীভাবে যাওয়া দরকার এগুলো নিয়ে আলোচনা”।

ডিসি সম্মেলনে যে সব পরামর্শ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা; তন্মধ্যে শৃঙ্খলা চেইন অব কমাণ্ড অন্যতম গুরুত্ববহ। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, “শৃঙ্খলা ভঙ্গ হলে কী করতে হবে। ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত চেইন অব কমান্ড কীভাবে যাবে। এই নয়, আমার কাজ ছিল না, তাই মনোযোগ দেই নাই। কিন্তু এটা হতে দেয়া যাবে না। কারণ আমরা হলাম সরকার। তাই এসব দায় এড়ালে হবে না। নারী ও শিশুদের রক্ষা বিশেষ দায়িত্ব। সংখ্যালঘুদের রক্ষা মস্তবড় দায়িত্ব। কারণ বিষয়টি নিয়ে আমাদের ওপর সারা দুনিয়া নজর রাখে। সরকারের দায়িত্ব হলো সব নাগরিকের সুরক্ষা বিধান করা। সামনে আমাদের যেসব কর্মসূচি নেব, সংখ্যালঘুদের সুরক্ষার কথা মাথায় থাকবে”।

 জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার কো-অর্ডিনেশন নিয়ে সম্মেলনে আলোচনার পরামর্শ দিয়ে ড. ইউনূস বলেন, ‘আমাদের বোঝাবুঝির মধ্যে যেন গলদ না থাকে। সেখানে কী কী বিষয়ে অন্তর্ভুক্ত সবার ভালো করেই জানা আছে। জেলার দায়িত্ব সামগ্রিকভাবে একজনের ওপর। তার সঙ্গে বাকিদের কো-অর্ডিনেশন করতে হয়। সেই কো-অর্ডিনেশনের কি সমস্যা, নাকি পৃথক পৃথকভাবে হবে এগুলো পরিষ্কার করে নেয়া”।

 জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে প্রতিযোগীতামূলক মনোভাব রাখতে হবে প্রাসঙ্গিক আলোচনায় বাজার দর নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “সেখানে প্রতিযোগিতামূলক ব্যবস্থা থাকতে পারে। আমার জেলার বাজারদর সবচেয়ে ভালো। আমার জেরার শান্তিশৃঙ্খলা সবচেয়ে ভালো। আমার জেলায় কোনো চাঁদাবাজি নেই। খেলোয়াড়দের মধ্যে প্রতিযোগিতায় আমি ওপরে আছি। চেষ্টায় যে পিছিয়ে না পড়ি। র‌্যাংকিং থাকলে নিজেদের মধ্যে আনন্দ হয়। সবার মধ্যে প্রতিযোগিতার মনোভাব আসুক।’ তিনি  ডিসিদের উদ্দেশে, “এটাই সুযোগ নিজেকে প্রকাশ কারার, সৃজনশীলতা প্রকাশ করার। গৎবাঁধা কাজ থাকবে, তবে সৃজনশীলতাও থাকতে হবে”।

জেলা পর্যায়ের প্রাথমিক শিক্ষাকে আরও উন্নয়ন করতে ডিসিদের পরিচর্যা করার আহ্বান জানান প্রধান উপদেষ্টা নোবেল জয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনুস। তিনি বলেন, “কীভাবে কোন জেলায় শিক্ষার মান উন্নয়ন করা যায়, এ ব্যাপারে কাজ করতে হবে। পাসপোর্ট করতে হলে পুলিশ ভেরিফিকেশন লাগবে না, এটা সবার নাগরিক অধিকার”।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনুস জন্ম সনদ নিয়ে ভোগান্তি কমানোর নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, “যেকোনো সময় যেন প্রতিটি নাগরিককে জন্ম সনদ প্রদানের সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। ডিসিদের উদ্ভাবনী শক্তি দিয়ে জন্ম সনদ প্রদানের ভোগান্তি কমাতে হবে। একইভাবে পাসপোর্ট প্রদানের ক্ষেত্রেও ভোগান্তি কমাতে আন্তরিক হতে হবে”।

আরও পড়ুন- দেশপ্রীতিতে নয় আওয়ামীপ্রীতিতে অন্ধ তাঁদেরই বলছি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *