গণপ্রহরী ডেস্ক: ‘তরুণ প্রজন্ম আত্মবিশ্বাসেই নতুন পৃথিবী করতে চায়’ উল্লেখ করে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা শান্তিতে নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনুস বস্তবতার আলোকে বলেছেন, আমরা এখন শক্তিশালী, উদ্যমী ও সৃজনশীল। তিনি মহান শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২০২৫ উদযাপনের স্মরণীয় দিনে তরুণদের এই স্বপ্নের আশু বাস্তবায়ন নিশ্চিত হোক-এই প্রত্যাশা করেন।
২০ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার রাধানীর কেন্দ্রস্থল ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে একুশে পদক অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা একথা বলেন। তিনি তরুণ প্রজন্ম আত্মবিশ্বাসেই নতুন পৃথিবী করতে চায় উল্লেখ করে বলেছেন, “গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-শ্রমিক-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আমরা পেয়েছি এক নতুন বাংলাদেশ। এই বিজয়ের মধ্য দিয়ে সুযোগ এসেছে নতুন এক বাংলাদেশ নির্মাণের”।
মাতৃভূমির জন্য বিভিন্ন লড়াই-সংগ্রাম, ৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধ ও ‘২৪-এর গণঅভ্যুত্থানে যে সকল সাহসী ছাত্র-শ্রমিক-জনতা প্রাণ দিয়েছেন এবং যারা আহত হয়েছেন তাদের সকলকে গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন প্রধান উপদেষ্ট ড. মুহাম্মদ ইউনুস।
আরও পড়ুন – জেলা প্রশাসকদের প্রতিযোগীতামূলক মনোভাব রাখতে হবে- ড. ইউনুস
অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে আমরা এখন বেশি শক্তিশালী, উদ্যমী ও সৃজনশীল উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, “আমাদের তরুণ প্রজন্মের স্বপ্ন অতীতের যেকোনো প্রজন্মের স্বপ্নের চেয়ে দুঃসাহসী। তারা যেমন সৃষ্টি করতে চায় নতুন বাংলাদেশ, তেমনি একই আত্মবিশ্বাসে সৃষ্টি করতে চায় নতুন পৃথিবী। তারা নেতৃত্ব দিতে চায় নতুন পৃথিবী সৃষ্টিতে ।
প্রসঙ্গত জনমতের আলোকে বলতেই হচ্ছে যে, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস নিজের চলায় ও বলায় যে তারুণ্যের প্রকাশ ঘটিয়ে চলছেন, সে ভিত্তিতেই মূলত অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। নেতৃত্ব দেবার জন্য তরুণরা প্রস্তুত উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “ছেলেরা-মেয়েরা প্রস্তুত। ঘুণে ধরা, আত্মবিনাশী সভ্যতার বন্ধনমুক্ত হয়ে তারা গড়তে চায় তাদের স্বপ্নের নতুন সভ্যতা । যে সভ্যতার মূল লক্ষ্য হবে পৃথিবীর সকল সম্পদের ওপর প্রতিটি মানুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করা, প্রতিটি মানুষের স্বপ্ন দেখার এবং সে স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার সকল সুযোগ নিশ্চিত করা। মানুষের জীবনযাত্রাকে এমন ভাবে গড়ে তোলা যাতে করে পৃথিবীর অস্তিত্ব কোনরকম বিঘ্নিত না হয়। পৃথিবীতে বসবাসরত সকল প্রাণীর সুস্বাস্থ্য নিয়ে বেঁচে থাকাও কোনোক্রমেই বিঘ্নিত না হয়”।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এবারের অমর একুশ নতুন তাৎপর্য নিয়ে হাজির হয়েছে আমাদের সামনে। আমরা জানি, একুশে ফেব্রুয়ারি হচ্ছে আমাদের আত্মপরিচয়ের অবিনাশী স্মারক। একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের স্বাধিকার চেতনার প্রাণপ্রবাহ। ১৯৫২ সালের এই ফেব্রুয়ারি মাসেই রাষ্ট্রভাষা প্রশ্নে পাকিস্তানি শাসকদের চাপিয়ে দেওয়া অন্যায় সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ছাত্রসমাজ রুখে দাঁড়িয়েছিল। ঢাকার রাজপথে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিল। এই ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়েই আমাদের স্বাধিকার চেতনার এক অবিশ্বাস্য জাগরণ সৃষ্টি হয়েছিল”।
আরও পড়ুুন- শেখ হাসিনাকে দেশে এনে বিচার করা হবে-ড. ইউনুস
একুশে পদকে ভূষিত দেশের বরেণ্য ব্যক্তিদের অভিনন্দন জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আপনাদের অবদানের জন্য জাতি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ। আপনারা জাতির পথ প্রদর্শক। আপনাদের অবদানে উদ্বুদ্ধ হয়ে জাতি দৃঢ় বিশ্বাসে জাতিপুঞ্জের মজলিসে ক্রমাগতভাবে উন্নততর অবস্থানে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করবে”।
অনুষ্ঠানে অন্যন্যের মধ্যে সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদ এবং সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব (রুটিন দায়িত্ব) মো. মফিদুর রহমান বক্তব্য রাখেন।
অমর একুশে ফেব্রুয়ারি ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে একুশে পদকে ভূষিত বিশিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের হাতে ‘একুশে পদক ২০২৫’ তুলে দেন প্রধান উপদেষ্টা।
বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ দেশের ১৪ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি ও বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলকে একুশে পদক ২০২৫ প্রদান করা হয়।
