পবিত্র শবে কদর কোরআন নাযিলের রাত। এভাবেও বলা হয়ে থাকে কোরআন নাযিলের রজনী লাইলাতুল কদর। লাইলাতুল কদরকে ফার্সিতে বলা হয় শব-ই-কদর। লাইলাতুল কদর অর্থ মহিমান্বিত রজনী, সম্মানিত রজনী। বিশ্ব মুসলিম মননে সর্বাধিক পবিত্র ও মহিমান্বিত রাত হচ্ছে লাইলাতুল কদর। রহমত-মাগফিরাত-নাজাতের মাস রমজান। কোরআন নাযিলের মাস রমজান। এই মহিমান্বিত রাত অর্থাৎ মহান মর্যাদাময় রাত্রিতেই আল-কোরআন নাজিল করা হয়েছিল। তাইতো শবে কদরকে বছরের শ্রেষ্ঠ মাস মাহে রমাদান আর এই মাসের শেষ দশকে লাইলাতুল কদর বিরাজ করে এবং প্রতি বছর আমাদের কাছে তা ফিরে আসে অফুরন্ত সওয়াবের ভাণ্ডার নিয়ে। এ কারণেও লাইলাতুল কদর বা শবে কদরকে বলা হয়ে থাকে ‘হাজার মাসের চেয়ে উত্তম রজনী’।
পবিত্র ধর্মগ্রন্থ আল-কোরআন এবং সহী হাদিস সূত্রে বর্ণিত হয়েছে কোরআন নাজিলের এই মাহে রমাদানে ফরজ করা হয়েছে একমাস রোজা রাখা; দুটি ওয়াজিব-সাদকাতুল ফিতর প্রদান করা ও ঈদের নামাজ আদায় করা, পাঁচটি সুন্নত- সাহরি খাওয়া, ইফতার করা, তারাবিহ পড়া, পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত করা ও ইতিকাফ করা। বাংলা পরিভাষায় ইতেকাফ হলো ইবাদতের উদ্দেশ্যে ইতিকাফের নিয়তে নিজেকে নির্দিষ্ট জায়গায় নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত আবদ্ধ রাখা। আর যিনি ইতিকাফ করেন, তাকে ‘মুতাকিফ’ বলে।
শবে কদর কোরআন নাজিলের রাত। এই রাতেই প্রথম পবিত্র মক্কা মুকাররমার হেরা পর্বতের (জাবালে রহমত) গুহায় মহান রাব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে ফেরেশতাদের সরদার হজরত জিবরাইল (আ.)-এর মাধ্যমে বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতি মহাগ্রন্থ আল-কোরআন অবতীর্ন হয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন: ‘রমজান মাস! যে মাসে কোরআন নাজেল হয়েছে মানবের দিশারিরূপে ও হিদায়েতের সুস্পষ্ট নিদর্শন’। (সুরা-২ বাকারা, আয়াত-১৮৫)
প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি সাল্লাম বলেছেন, মান কামা লাইলাতাল কাদরি ঈমানান ওয়া ইহ্তিসাবান গুফিরালাহু মা তাকাদ্দামা মিন্ যামবিহী-যে ব্যক্তি ইমানের সাথে ও সওয়াব লাভের আশায় লাইলাতুল কদরে দণ্ডায়মান হয় তার পূর্ববর্তী গুনাহ্গুলো ক্ষমা করা দেয়া হয়। (বুখারী শরীফ)
পবিত্র কোরআন মজীদ নাজিল প্রসঙ্গ সূরা কদরে এই মহিমান্বিত রাতের (রজনীর) শ্রেষ্ঠত্ব ও মাহাত্ম সম্পর্কে আল্লা জাল্লা শানহু ইরশাদ করেন: আমি তা নাযিল করেছি লাইলাতুল কদরে। (হে রসূল) আপনি কি জানেন; লাইলাতুল কদর কী? লাইলাতুল কদর হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। সে রাতে ফেরেশতাগণ ও রূহ অবতীর্ণ হয় প্রত্যেক কাজে তাদের রবের অনুমতিক্রমে, বিরাজ করে শান্তি আর শান্তি যতক্ষণ না উষার আবির্ভাব হয়। (সূরা কদর)।
লাইলাতুল কদর এত মর্যাদাপূর্ণ ও মহিমান্বিত হওয়ার কারণ হিসেবে উল্লেখ্য, ৬১০ খ্রিষ্টাব্দের এই রাতে প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদুর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের নিকট কোরআন মজীদ নাযিলে সূচনা হয়। গোটা কোরআন মজীদ লওহে মাহ্ফুজে সংরক্ষিত ছিল। উর্ধজগতে এই লওহে মাহফুজ রয়েছে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে: বাল হুয়া কুরআনুম মজীদ, ফী লাওহিম মাহফুজÑবস্তুত এ সম্মানিত কোরআন সংরক্ষিত ফলকে (সূরা বুরূজ: আয়াত ২১-২)
হযরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে সওয়াবের নিয়তে কদরের রাতে ইবাদত করবে, তার অতীতের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। (বুখারী, ইমান অধ্যায়, পরিচ্ছেদ: ২৫, খন্ড:১, পৃষ্ঠা-২৯-৩০, হাদিস- ৩৪)
হযরত আয়িশা সিদ্দিকা (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.) কে জিঙ্গাসা করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল (সা.) আমি যদি লাইলাতুল কদর সম্পর্কে জানতে পারি, তাহলে আমি ওই রাতে আল্লাহর কাছে কী দোয়া করব? রাসুল (সা.) বলেন; তুমি বলবে আল্লাহুমা ইন্নাকা আফুউন, তুহিব্বুল আফওয়া; ফাফু আন্নি’। ‘হে আল্লাহ! আপনি শ্রদ্ধাশীল, ক্ষমা ভালোবাসেন, তাই আমাকে ক্ষমা করেন’। (ইবনে মাজা, সহিহ আলবানি)
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস মহিমান্বিত রজনি পবিত্র শবে কদর উপলক্ষ্যে দেশবাসীসহ বিশ্বের মুসলিম উম্মাহকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ জানিয়েছেন।
অপর দিকে, পবিত্র লাইলাতুল কদর উপলক্ষে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের মুসলিম সম্প্রদায়কে শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
[সূত্র: বাংলায় কোরআন পাঠ ও হাদিস পাঠকরা এবং ইসলাম বিষয়ক অধ্যাপক-লেখক অধ্যাপক হাসান আব্দুল কাইয়ূম ও মুফতি মাওলানা শাইখ মুহাম্মদ উছমান গণী লেখা সমূহের আলোকে। লেখক: সম্পাদক, গণপ্রহরী]