প্রধান উপদেষ্টার প্রতি গণপ্রহরীর আহ্বান। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের নেতৃত্বে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যূত্থানের মধ্য দিয়ে বাংলদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা শান্তিতে নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনুসের সদয় দৃষ্টি আকর্ষন পূর্বক দৃঢ়তার সাথে উল্লেখ করতে চাই-‘এক নদী রক্তের বিনিময়ে’ মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষ শান্তিপ্রিয়, যা আপনি জানেন ও বিশ্বাস করেন। মানুষ অশান্তি চান না। তাই সার্বিক ক্ষেত্রে শান্তি প্রতিষ্ঠায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আরও ভাবতে হবে এবং আরও কঠোর হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংষ্কার কার্যক্রমের পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে অর্জন কম নয়। তরুণরা আরও অর্জন করার জন্য অপেক্ষায় রয়েছে।
এইদিকে নানামুখী কষ্ট সহ্য করে শ্রমজীবি-কর্মজীবি শ্রমিক-কৃষকসহ স্বল্প আয়ের মানুষ, একইভাবে বৈষম্যহীন সমাজ গড়ে তোলার মধ্য দিয়ে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্যের ‘শোষণমুক্ত সমাজ’ প্রতিষ্ঠায় যথাযথ সংস্কার কাজ সম্পন্ন করে, জনগণের গণতান্ত্রিক সরকার গঠনে, নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করা পর্যন্তÑজনগণ ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করছেন। তাঁদের নিরাশ করবেন না। আপনার মতো তারা বিশ্বের অন্যতম শান্তিতে নোবেলজয়ী খ্যাতনামা ব্যক্তিসত্বকে সরকার প্রধান (প্রধান উপদেষ্টা) হিসেবে পেয়ে গর্বিত। তাঁদের গর্বকে খাটো করে দেখবেন না, অবমাননা করবেন না। তারা অবশ্য সুবিধাভোগী চাটুকারদের মতো প্রশংসায় আপনাকে ভাসিয়ে দিতে পারবেন না। কিন্তু তাঁদের আস্থা ও ভালবাসায় বিন্দুমাত্র খাত নেই।
প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে আপনি দায়িত্ব গ্রহণের পর দেশের শিক্ষিত-অর্ধশিক্ষিত কর্মক্ষম তরুণ-যুবশক্তিসহ বিভিন্ন পর্যায়ের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার পরিবারের যুব-জনতা আশায় বুক বেঁধেছিলেন- দেশে-বিদেশে অবাধ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। আপনার প্রতি আত্মবিশ্বাস ও আশানুপাতে আজও তা হয়নি। তবে তাঁরা বিশ্বাস করেন তুলনামুলকভাবে যত কমই হোক বা কিছুটা হলেও অগ্রগতি হচ্ছে। বহির্বিশ্বে আপনার বলয়ে এবং এ দেশের বীর ছাত্র-যুব জনতার কর্মস্পৃহা ও কর্মক্ষমতার প্রতি বিশ্ব নেতৃত্ববৃন্দের আস্থা রয়েছে। কেননা, দেশ প্রেমিকতাঁয় এদেশের আপামর মানুষ বিশ্বের সামনে উদাহরণের আসন স্থায়ী করে রেখেছেন, বার বার দেশ ও জনগণের স্বার্থে জীবনদানের মধ্য দিয়ে।
আপনি তাঁদের প্রতি বিশ্বাস রেখে সংষ্কারের প্রতি এমন গুরুত্ব দিন- যার ফলশ্রুতিতে নির্বাচিত সরকার সেই ধারা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি দলীয় বা জোটগত নির্বাচনী প্রতিশ্রুত উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনায় কর্মসংস্থানের বৃহৎ স্বার্থে এবং দক্ষ ও অভিজ্ঞদের কাজে লাগাতে পাট, চিনি, চামড়সহ বিলুপ্ত সকল শিল্প কলকারখানা পুনরায় চালু করার সাথে কৃষি জমি এবং বেদখলকৃত নদী-নালা, খাল-বিল পুনরুদ্ধার করে, নতুনভাবে সারা দেশে সমভাবে কৃষি ও চা শিল্পের বিকাশসহ নতুন কলকারখান স্থাপনের মধ্য দিয়ে সুশৃঙ্খলভাবে পরিবেশবান্ধব উন্নয়নের পুনর্জাগরন ঘটে।
স্বাধীনতার মাস অতিবাহিত করছে জাতি। এই সময়ে গভীর শ্রদ্ধার সাথে যাদের জীবনের বিনিময়ে, সম্ভমের বিনিময়ে ও মুক্তিযোদ্ধাদের জীবন-মরন মুক্তিযুদ্ধে অর্জিত স্বাধীনতা দিবস স্মরণে শহীদদের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন, সম্ভ্রম হারানো মা- বোনদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি আপনার মাধ্যমে। সেই সাথে আহ্বান জানাচ্ছি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা খেতাবপ্রাপ্ত গর্বিত বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক-ই আজম বীর প্রতিকের অন্তর্বর্তীকালীন সময়কালের ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে আপনার উদ্যোগে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদকে দল নিরপেক্ষ ও স্বাধীন সত্ত্বার সংগঠনে পরিণত করুন। যাতে দেশ, জাতি ও জনগণের যে কোনো সংকটে ও স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব অক্ষুন্ন রাখতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি মূল্যায়ন সাপেক্ষে দেশ ও জনগণের অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে ভূমিকা পালন করতে পারে এবং সংসদের ও তার সকল পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ আমলা কর্মকর্তা ক্ষমতাসীন সরকারের দালালে পরিণত হতে না পারে এবং অতীতে স্বৈরাচারের চিহ্নিত দালালদের নেতৃত্বের বাইরে রাখতে সচেষ্ট থাকার মতো মানসিকতা সম্পন্ন নেতৃত্ব গঠনের উপযোগী কার্যকর সংস্কার সম্পন্ন করার আহ্বান জানাচ্ছি।
স্বাধীনতা অর্জনে সম্ভ্রম হারানো মা-বোনদের ত্যাগকে স্বার্থক করতে এবং ‘মা জাতি’ খ্যাত নারীদের মূল্যবান সম্পদ ইজ্জত হরনকারীদের (ধর্ষক-অপরাধী) কঠোর হস্তে দমনে ধর্ষনের মত জঘন্য অপরাধীর বিচারের আইন কার্যকর করার ক্ষেত্রে নারী সম্মান যেন ক্ষুন্ন না হয়; সে বিষয়য়ে তদন্ত ও বিচারকাজে কার্যকর নির্দেশনা রাখার আহ্বানসহ বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষনকারীর শাস্তি নূন্যতম ১২ বছর করার আহ্বান জানাচ্ছি। নারীদের পণ্য হিসেবে ব্যবহার নিষিদ্ধ করাসহ নারীর সমঅধিকার প্রতিষ্ঠায় কার্যকর সংষ্কারের আহ্বান জানাচ্ছি।
দেশের জনগণের ও জাতীয় নিরাপত্তার বিধানসহ স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতি ভারতীয় আগ্রাসী নীতির আওতায় সীমান্তে উত্তেজনা সৃষ্টির পায়তারারোধে কঠোর প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্ন হয় এমন সকল দেশী-বিদেশী চক্রান্ত মোকাবিলার মধ্য দিয়ে- ‘নদী না বাঁচলে যেহেতু দেশ বাঁচবে না’ সেহেতু আন্তর্জাতিক নদী সমূহ ব্যবহারে চীনের সাথে তিস্তা চুক্তি সম্পাদনসহ কূটনীতিক দিক থেকে সকল ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় সংষ্কার কার্যক্রম সচল থাকতে হবে। সে ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।
পরিশেষে, পুন:পুন: দৃষ্টি আকর্ষণপূর্বক গণপ্রহরীর আহ্বানে উল্লেখ্য, মানুষের মৌলিক অধিকারসহ গণতন্ত্র মানবাধিকার, বাকস্বাধীনতা নিশ্চিত করতে সমাজ ব্যবস্থা পরিবর্তন সাপেক্ষে রাষ্ট্রীয় মালিকানা প্রতিষ্ঠায় সংষ্কারসহ ‘কর্মসংস্থান’কে প্রাধান্য দিতে হবে। এক নদী রক্তের বিনিময়ে স্বাধীন ভূখণ্ড অর্জিত হলেও ভারতের সাথে অসম চুক্তি থাকায় সাম্য, ন্যায়বিচার ও জনগণের গণতন্ত্রের স্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য অর্জিত হয়নি আজও। তাই সকল অসম চুক্তি সমূহ বাতিল পূর্বক সকল রাষ্ট্রের সাথে নিজ রাষ্ট্রের স্বাতন্ত্রতা ও মর্যাদা সমুন্নত রাখার ব্যবস্থা নিশ্চিত করার মতো সংষ্কার কাজ সম্পন্ন করে; ঘোষিত সময়ের মধ্যে জনগণের সরকার গঠনে নিরপেক্ষ নির্বাচন প্রদানের জন্য গণপ্রহরী আহ্বান জানাচ্ছে। আমাদের আহ্বান দেশ, জাতি ও জনস্বার্থে বলে আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।- সম্পাদক।
আরও পড়ুন- তরুণ প্রজন্ম আত্মবিশ্বাসেই নতুন পৃথিবী করতে চায়-প্রধান উপদেষ্টা