Thu. Mar 27th, 2025
শবেবরাত পালিত হয়েছে যথাযোগ্য মর্যাদায়শবেবরাত পালিত হয়েছে যথাযোগ্য মর্যাদায়-ছবি: সংগৃহীত

স্টাফ রিপোর্টার: শবেবরাত পালিত হয়েছে যথাযোগ্য মর্যাদয়। বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা পবিত্র রমজানের ‘আগমনী বার্তা’ নিয়ে আসা ‘পবিত্র শবেবরাত’ আরবী শাবান মাসের ১৪ তারিখ রাতে ইবাদতের মধ্য দিয়ে পালিত হয়েছে। এই রাতকে (মধ্যরজনি) “লাইলাতুল মোবারাকা” অর্থাৎ বরকতময় রাত। ’শব’ মানে ‘রাত’, ’বরাত’ মানে ’মুক্তি’; শবেবরাত অর্থ ‘মুক্তির রজনী’। এই রাতের বরকতে বান্দা পাপ থেকে মুক্তির প্রার্থনা করে। এই মহিমান্বিত রাতে আল্লাহ বান্দার প্রার্থনা শুনতে উন্মুক থাকেন। তাইতো বান্দারা সর্বশক্তিমান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে ইহলোক ও পরলৌকিক শান্তির জন্য তাঁর করুনা চান ।

এবছর শবেবরাত এমন সময়ে ধর্মপ্রাণ মুসলমানের জীবনে এসেছে, যখন ফিলিস্তিনের গাজায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মদদপুষ্ট ইসরাইলীরা ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে ফিলিস্তিনিদের ভুখণ্ড দখলের চেষ্টা করছে। এদিকে আমাদের দেশেও স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের দীর্ঘ স্বৈরশাসনের পতন ঘটলেও, চারদিক থেকে অস্থিরতা সৃষ্টির অপতৎপরতা চালিয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাষ্ট্র সংষ্কার কাজ করার মধ্য দিয়ে নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। তবে শবেবরাত উদযাপনে ইবাদত-বন্দেগীতে ব্যস্ত ধর্মপ্রাণ বাংলাদশের মানুষ দেশ, জাতি ও বিশ্ব শান্তির জন্য মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে দু’হাত তুলে প্রার্থনা করেছেন।

শবেবরাত রাতে কোরআন তিলওয়াত করেছেন, কেওবা, মসজিদগুলোতে, কেওবা বাড়িতে নফল নামাজ, ধর্মীয় আলোচনা ও জিকির আসকারের মাধ্যমে মহিমান্বিত রজনী (রাত) অতিবাহিত করেন। পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজনসহ মুসলিম উম্মার সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে দোয়া মোনাজাত করেন। কেও কেও সাধ্যমত দান খয়রাতসহ আপনজনদের কবর জিয়ারত করেন। পবিত্র শবেবরাত উপলক্ষে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনুস, বাংলাদেশসহ বিশ্বের মুসলিম জনগণকে আন্তরিক মোবরকবাদ জানিয়ে এই সৌভাগ্যময় পবিত্র রজনী মানব কল্যাণে জাতির জন্য বয়ে আনুক মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের অশেষ রহমত ও বরকত এই কামনা করেন

মহিমান্বিত রজনী শবেবরাতের তাৎপর্য আলোচনা ব্যাপক। যা, এই ছোট্ট পরিসরের পত্রিকায় প্রকাশ সম্ভব নয়। তদসত্বেও দু’একটি হাদিসে বর্ণিত রয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ তায়ালা এ রাতে বিদ্বেষ পোষণকারী ও নিরাপরাধ মানুষকে হত্যাকারী ছাড়া বাকী সব বান্দাকে ক্ষমা দেন। আরেকটি হাদিসে বর্ণিত, এ রাতে আল্লাহ তায়ালা মুশরিক ও ব্যভিচারীনী ছাড়া সবার ইচ্ছা পূরণ করে থাকেন।

পবিত্র রাতের তাৎপর্য ও ফজিলত প্রাসঙ্গিক আলোচনায় হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.)- এর একটি উক্তি তুলে ধরলেই পাঠকের ধারণা সৃষ্টি হবে। আর যারা জানেন, তাদেরও সহায়ক হবে বলে মনে করি। হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বলেন, ‘একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) নামাজে দাঁড়ালেন এবং এত দীর্ঘ সিজদা করলেন যে, আমার ধারণা হয়েছিল, তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন। আমি তখন উঠে তাঁর পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলি নাড়া দিলাম, তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলি নড়ল। তিনি সিজদা থেকে উঠলেন এবং নামাজ শেষ করে আমাকে লক্ষ করে বললেন, “হে আয়েশা! তোমার কী আশঙ্কা হয়েছে?” আমি উত্তরে বললাম, “ইয়া রাসুলুল্লাহ (সা.)! আপনার দীর্ঘ সিজদা থেকে আমার আশঙ্কা হয়েছিল, আপনি মৃত্যুবরণ করেছেন কি না।” নবীজি (সা.) বললেন, “তুমি কি জানো, এটা কোন রাত?” আমি বললাম, “আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুলই ভালো জানেন।” তখন নবীজি (সা.) বললেন, “এটা হলো অর্ধশাবানের রাত। এ রাতে আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের প্রতি মনোযোগ দেন; ক্ষমা প্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করে দেন, অনুগ্রহ প্রার্থীদের অনুগ্রহ করেন। আর বিদ্বেষ পোষণকারীদের তাদের অবস্থাতেই ছেড়ে দেন।’ (শুআবুল ঈমান, তৃতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা: ৩৮২)।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *